Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই সংসার আর এই ভালোবাসা, সোহেল কার?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:২৫ পিএম

১০ টাকার একটি নোটে পাওয়া নম্বর থেকেই শুরু হয় তাদের প্রেম। ২০০৭ সালে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন রওশন ও সোহেল। এরপর একে একে কেটে গেছে ১৫টি বছর। তাদের ভালোবাসার ছোট্ট ঘর আলো করে এসেছে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানও। তাদের অদম্য এই ভালোবাসার গল্প গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ করে গণমাধ্যম।

গণমাধ্যম ও স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল সোহেল-রওশনের নজিরবিহীন অন্ধ ভালোবাসার সংসারটি এখন হুমকির মুখে। এ কারণে ভালোবাসার সংসারটি টেকানোর অনুরোধ করেছেন সোহেলের প্রতিবন্ধী স্ত্রী রওশন। তিনি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ, দয়া করে আমার সুন্দর সংসারটা আপনারা ভাঙবেন না।’


এরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ পেয়ে সোহেল-রওশনের ভালোবাসার গল্প শুনতে ও তাদের জীবনযাপনের সমস্যা দেখে আসতে সরেজমিন তাদের বাড়ি ত্রিশালের গুজিয়াম গ্রামে যান ত্রিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি তাদের থাকার ঘর, জীবিকা নির্বাহের জন্য দোকান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে ১৬ বছর আগে করা সোহেলের বিয়ের কথা।


জানা গেছে, আগেও বিয়ে করেছেন সোহেল। সে সংসারে আছে স্ত্রী শুরাতন বেগম ও চার ছেলে-মেয়ে। ১৯৯২ সালে বিয়ে হয় তাদের। ২০০৫ সালে দাম্পত্য কলহের জেরে এবং ঋণের দায়ে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সোহেল। আর ফেরেননি, হয়নি বিচ্ছেদও। স্ত্রী এতদিন জানতেন তার স্বামী হারিয়ে গেছেন। তাই খোঁজ নেওয়া বা থানায় জিডি করার প্রয়োজনও মনে করেনি তিনি।

এতদিন পর ভালোবাসার রওশন ও সোহেলের গল্প গণমাধ্যমে প্রচার হতে থাকলে তখন স্বামীকে চিনতে পারেন শুরাতন। তবে এখন আর স্বামীকে ফেরত চান না বলে জানিয়েছেন তিনি। সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করা তো দূরের কথা, মূলত তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস বলে জানান শুরাতন। সোহেলের আসল নাম বকুল বলেও দাবি তার।

হঠাৎই চেনাজানার জগত ভীষণ বদলে গেছে রওশনের। তিনি বলেন, ‘সোহেলের আগের বিয়ে নিয়ে আমি কিছুই জানতাম না। তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথাও নেই। তবে আমার সংসার এখন ভাঙার পথে।’

রওশন বলেন, ‘তিনি আমাকে ভালোবাসেন, এটি মিথ্যা নয়। ১৫টি বছর ধরে আমার মতো অসুস্থ একজনের সঙ্গে সংসার করছেন তিনি। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তাকে জয় করেছি। তিনি হাত জোড় করে বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমার সংসারটি কেউ ভাঙবেন না। আমি একজন প্রতিবন্ধী, আপনাদের মতো আমি সুস্থ নই। আমার স্বামী প্রতারক কিনা তা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই।’

সোহেলের আগের স্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে রাজি জানিয়ে রওশন আরও বলেন, ‘তিনি যদি চান আমরা একসঙ্গে সবাই মিলে থাকতে পারি। কিন্তু এই ১৫-১৬ বছর ধরে তার কোনো খোঁজ নেননি তারা, জিডিও করেননি। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি থাকার ঘর দিচ্ছেন বলেই এসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন?’ এ সময় সংবাদমাধ্যম কর্মীদের কাছেও বিষয়টি নিয়ে আর কিছু না প্রকাশ করার অনুরোধ করেন তিনি।

অন্যরকম ভালোবাসার গল্পের উদাহরণ হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন তারা। প্রতিবন্ধী স্ত্রী রওশন আক্তারকে পিঠে করে ১৫ বছর ধরে সোহেল মিয়ার সংসার চালিয়ে যাওয়ার গল্প স্পর্শ করেছিল সারা দেশের মানুষকে। এ নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও, একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এরপরই সোহেলের আগের বিয়ের কথা সামনে আসে। শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে নানা বিষয়েই উঠে আসে। আর তাতেই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ