Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিনামূল্যে থেরাপিতে ব্যাপক সাড়া

প্রয়োজনের তুলনায় সেবা কেন্দ্র অনেক কম দেশে ২২ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

সারা দেশে এখন প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে নিতে বিনামূল্যে থেরাপি, কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা প্রদান চালু করে সরকার। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের বিনামূল্যে এই থেরাপি সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সচিবালয়ে একটি মোবাইল থেরাপি ভ্যান ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ক্যাম্পের মাধ্যমে সপ্তাহে ৩দিন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনামূল্যে থেরাপিউটিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এতে গত বছর ২১ হাজার ৭৩১জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনামূল্যে সেবা গ্রহণ করেছেন। প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র অনেক কম। চলমান করোনা মহামারির মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই ফাউন্ডেশনের করোনা শুরুর দিকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সারা দেশে কয়েক কোটি টাকা বিতরণ করেছিল ফাউন্ডেশন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা বলতে এতটুকুই। তহবিলে পর্যাপ্ত টাকা থাকার পরও প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতায় নীরব ভূমিকায় ফাউন্ডেশন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত প্রতিবন্ধী মানুষের দোর গোড়ায় থেরাপি সেবাগুলো পৌঁছে দেয়া এ ভ্রাম্যমান ভ্যান সার্ভিস বলে জানা গেছে।

প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিছুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী বিনামূল্যে থেরাপি, কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এখন দেশের সকল মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছোটখাটো ব্যথা হলেই সবাইকে থেরাপি দিতে হচ্ছে। আমরা সচিবালয়ে একটি মোবাইল থেরাপি ভ্যান ক্যাম্প স্থাপন করেছি। এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সারাদেশে আরো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও অডিট) ড. মোঃ রেজাউল কবির ইনকিলাবকে বলেন, সারা দেশে এখন প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ। ৬৪টি জেলা এবং ৩৯টি উপজেলায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আমরা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে ছয় একর জমির ওপর ‘সুবর্ণ’ নামের ভবনটি করা হয়েছিল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা, খেলাধুলা ও তাঁদের সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য। ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত সুউচ্চ ভবনটি উদ্বোধন করা হয় তিন বছর বছর আগে। চালুর পর থেকে বহুতল ভবনটি শুধু মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দুই যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আইনি কাঠামো দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করতে একই বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তার তিন বছর পর ২০১৩ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে। পরের বছর ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। একই দিন তিনি অধিদপ্তরের নামফলক উন্মোচন করেন। ২০১৯ সালে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়ও ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরে সবাই একমত হন। কিন্তু ঘোষণার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অধিদপ্তরে রূপ পায়নি ফাউন্ডেশন।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠনের পর থেকে বিনামূল্যে থেরাপি কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। গত বছর সেবা নিতে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ জন নিবন্ধন করেছেন। এর বাহিরে সেবা গ্রহণ করেছেন ৭৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫১ জন। ৪০টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে গত বছর বিনামূল্যে নিবন্ধিত থেরাপি সেবা নিয়েছে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৮জন। গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি-শিশুদের এবং প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ৪০টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক সেবা দিয়ে আসছে সংস্থাটি। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে ২০১০ সালে একটি অটিজম রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেন্টার থেকে অটিজম বৈশিষ্ট সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিবর্গকে বিনামূল্যে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের থেরাপি সেবা, গ্রুপ থেরাপি, দৈনন্দিন কার্যবিধি প্রশিক্ষণসহ রেফারেল ও অটিজম সমস্যা গুলো শিশুদের পিতা-মাতাদের কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। গত ২০১০ সালে থেকে গত ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৩ হাজার ৬৪৫ জন অটিজম শিশু ও ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ম্যানুয়াল ও থেরাপি সার্ভিস দিয়ে আসছে। প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে ফাউন্ডেশন চত্বরে সপ্তাহব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়।



 

Show all comments
  • shirajumazumder ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৫ এএম says : 0
    Very good and important initiative no doubt about it.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ