Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

আমিষ নিরামিষ কোন কিছুতেই স্বস্তিতে নেই রাজশাহী অঞ্চলের মানুষেরা

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:৩৮ পিএম

আমিষ নিরামিষ কোন কিছুতেই স্বস্তিতে নেই রাজশাহী অঞ্চলের মানুষেরা। শাকসবজিতে উৎপাদনে উদ্বৃত এলাকা। হাট বাজার ভরা সবজি কিন্তু দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলেও মধ্যস্বত্ত ভোগীদের কারনে সব কিছুর দাম চড়া। তারা দুষছেন জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার কারনে পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাছাড়া হাট থেকে বাজার পর্যন্ত পন্য আনতে পথে পথে গুনতে হয় বাড়তি টাকা।

শীতের স্বব্জির ভর মওসুম। শীতও যায় যায় করছে। অন্যবার এ সময় শীতকালীন শাকস্বব্জির দাম অনেক কম থাকে। শুরুতে ফুলকপি ষাট সত্তর টাকা কেজি নিয়ে বাজারে উকি দিলেও শেষ দিকে আট দশ টাকা কেজিতে নেমে আসে। কিন্তু এবারের চিত্র অন্যরকম ত্রিশ চল্লিশ টাকার নীচে কোন স্বব্জি নেই। ফলে মধ্যবিত্তের তরকারীর ভরসা স্বব্জি এবার বেশ খানকিটা নাগালের বাইরে। সামনে রমজান আসছে এখন কি অবস্থা হয় এনিয়ে ভাবনা কম নয়।

রাজশাহী অঞ্চলে গত রোপা আমন ও বোরো মওসুমে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে দশ লাখ মে:টন আমন আর ষোল লাখ মে:টন বোরো। শাকসবব্জিতে রাজশাহী উদ্বৃত অঞ্চল। গতবার বাইশ হাজার হেক্টর জমিতে শাকস্বব্জির আবাদ হয়েছে যার পরিমান চার লাখ মে:টনের বেশী। এবার আবহাওয়া অনুকুল থাকায় আবাদ ভাল হয়েছে। গত বারের চেয়ে বেশী ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ কৃষি বিভাগের। এরপরও চাল ও শাকস্বব্জির এমন দাম কেন ? এমন প্রশ্ন ক্রেতাদের।
আমিষের ভোক্তাদের জন্য সু-খবর নেই। বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে গরু খাসী মুরগীর দাম। বছর খানেক ধরে গরুর মাংস পাঁচশো টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ছয়শো টাকা। আর খাসীর মাংস আটশো থেকে নয়শো টাকা কেজিতে উঠেছে। রমজানে খাসী হাজারে ঠেকবে। হাট ভরা গরু। সীমান্ত গলিয়ে চোরা পথেও আসছে। আবার দেশে গড়ে ওঠা খামারের গরুও হাটে আসছে। গরুর খাসীর সরবরাহ মন্দ নয়। খামারীরা গরুর দাম না ফেলে মধ্যস্বত্ত ভোগীর (দালাল) কারনে দাম বাড়ছে। তারা দুষছেন ঘাটে ঘাটে খরচা পানিকে। আর পরিবহন ভাড়াতো রয়েছে।

ছোট বড় মিলিয়ে হাজার দেড়েক মুরগীর খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে বাজারে ডিম, মুরগী আসে। দেশী মুরগী অনেক আগেই হারিয়েছে। স্থান দখল করেছে ব্রয়লার, সোনালীকা, কক, লেয়ার। সোনালিকার আবার সংস্করন হয়েছে। সোনালী ক্লাসিক সোনালী রয়েল, কয়লার ইত্যাদি নামে। হাইব্রীড জাতের এসব মুরগী নিয়ে ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। এসব মুরগীর দাম কেজি প্রতি দুশো চুল্লিশ টাকার নীচে নয়। আর ব্রয়লার একশো চল্লিশ থেকে ষাটের মধ্যে ওঠা নামা করছে।
চাল উৎপাদনেও উদ্বৃত অঞ্চল রাজশাহী। তারপরও এখানে চালের দামে আগুন। মিলার আর ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। তাদের মর্জি মাফিক দাম ওঠা নামা করে। রাজশাহী অঞ্চলে সম্প্রতি বেশ কিছু বড় বড় অটোমেটিক চাল কল গড়ে উঠেছে। মাঠের ধান বিভিন্ন ভাবে ঢুকছে এসব মিলের পেটে। ধান ওঠার সময় এসব মিলারের লোকজন ও ফড়িয়ারা কম দামে মাঠ থেকে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে নেয়। কৃষকের গোলা খালি হলে তখন মিলাররা চাল নিয়ে চালবাজি শুরু করে। ঘাম ঝরানো ধান কৃষক কম দামে বিক্রি করে এখন বেশী দামে চাল কিনছে। সাধারন মানুষ চাল আটা যোগাড় করতে হিমসীম খাচ্ছে। শুধু চাল নয় তেল, ডাল, চিনি, মশল্লাসহ এমন কোন পন্য নেই যার দাম বাড়েনি। একেক বাজারে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। কেন বাড়ছে এর কোন জবাব নেই বিক্রেতাদের কাছে। সোজা সাপটা জবাব তাদের বেশী দামে কিনতে হচ্ছে ডিলারদের কাছে থেকে। তাই বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। টিসিবি স্বল্প পরিসরে তাদের কার্যক্রম চালালেও সেখানে ক্রেতার ভীড়। সবার কপালে জুটছেনা টিসিবির পন্য। মধ্যবিত্তরাও এখন টিসিবির লাইনে। অনেকে লজ্জায় মুখ চোখ ঢেকে লাইনে দাড়াচ্ছেন।

নিত্য প্রয়েজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ে সাধারন ক্রেতাদের হা হুতোশ থাকলেও বিত্তবানদের কেনাকাটা নজর এড়ায়না। সাহেব বাজার পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় মাংশের দোকান মুরগীর দোকান মাছের দোকানে তাদের ভোজ বিলাসী কেনাকাটা। ওরা দাম দর করেনা। ফরমায়েস দিচ্ছে জিনিষ নেবার পর বিক্রেতার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে যাদের কেনার সামর্থ নেই তারা হা পিত্যেশ করছে। শুধু শাকস্বব্জির নয় দাম বেড়েছে সিঙ্গাড়া, সামুচা, পেয়াজু, জিলেপি, মিষ্টির। অনেক ক্ষেত্রে আকারও পরিবর্তন ঘটেছে। সামনে রমজান আসছে তখন বাজার পরিস্থিতি কেমন হয় এনিয়েও এখনই চলছে আলোচনা সমালোচনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কারে যেন মাথা ব্যথা নেই। বাজার দপ্তর নামে একটি দপ্তর থাকলেও তারা প্রতিদিনের মূল্য তালিকা নিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ