বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
হাত-পা আছে, কিন্তু একেবারেই অচল। উঠে দাঁড়াতে পারে না। কেউ উঠিয়ে দিলেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ঠিকমত কথাও বলতে পারে না। শরীরে আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা। তারপরও সে পরিবারের বোঝা নয়, বরং নিজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পরিবারকে সাহায্য করতে চায় সে। তাইতো তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি শরীরের সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। বিছানায় শুয়ে মুখ দিয়ে লিখেই এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক জাহিদ সারোয়ারের ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে উজ্জল একই উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চলতি বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বহুবিধ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয় উজ্জল। জন্মের পর থেকে বহুমাত্রিক এসব প্রতিবন্ধকতা নিয়েই তার বেড়ে ওঠা। ছোট বেলা থেকেই অন্য সব ভাই বোনদের মধ্যে সে বেশি বুদ্ধিমান এবং পড়া লেখার প্রতি বেশ আগ্রহী। তাই নিজ বিছানাতে থেকেই মুখ দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়াশোনা করত। মুখ দিয়ে দিয়ে লিখে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক শেষে কলেজে ভর্তি হয়। উঠে দাঁড়াতে না পারায় কলেজে যেতেও পারত না। পরে করোনা মহামারীর কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস চালু হওয়ায় খুশি হয় উজ্জল। মুখ দিয়ে মোবাইল ফোন চালিয়ে অনলাইনে ক্লাস করতে থাকে। অটো পাস পদ্ধতির খবরে উজ্জলের মন খারাপ হয়ে যায়। তার ইচ্ছা অতীতের ন্যায় এইচএসসি পরীক্ষাতেও সে মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য অর্জন করবে। পরে সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত শুনে খুশি হয়ে যায় এবং দিন-রাত বিছানায় শুয়েই মুখ দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে-উল্টে পড়াশুনা চালাতে থাকে। অবশেষে বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দুরে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রে ভ্যানে শুয়ে যাতায়াত করে। পরীক্ষা কেন্দ্রেও বিছানায় শুয়ে সকল পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং যথারীতি মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়।
উজ্জলের বাবা জাহিদ সারোয়ার জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই তার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ অনেক। তার আগ্রহ দেখেই তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। পরবর্তীতে দিন দিন এই আগ্রহ বাড়তে থাকায় স্কুলে ভর্তি করে দেই। স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি করে দেই। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার লেখাপড়ার আগ্রহ আর অনেক বেড়ে যায়। দিন রাত মুখ দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে পড়াশোনা করতে থাকে। সকল
শারীরিক প্রতিকুলতাকে ডিঙ্গিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় তার এই অভাবনীয় সাফল্যে আমরা অনেক খুশি। শুধু আমরাই নই, আমাদের প্রতিবেশি, কলেজের শিক্ষকসহ সহপাঠিরাও বেজায় খুশি। তিনি তার ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
উজ্জলের এই সাফল্যে তার কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, উজ্জলের আগ্রহ আমাদের অবাক করেছিল, আর এখন তার সাফল্য আমাদের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তার আগ্রহ দেখেই পরীক্ষার কেন্দ্রে শুয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য বোর্ড থেকে অনুমতির ব্যবস্থা করেছিলাম। তার সাফল্যে আমরা সবাই বেজায় খুশি। আমরা চাই, সকল প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সে জীবনে ভালো কিছু করুক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।