Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘বিএনএস শহিদ দৌলত’ খুলনা শিপইয়ার্ডের স্লীপওয়ে থেকে রূপসা নদীতে ভাসান হল

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৮ পিএম

বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘বিএনএস শহিদ দৌলত’ সোমবার খুলনা শিপইয়ার্ডের স্লীপওয়ে থেকে রূপসা নদীতে ভাসান হয়েছে। চীনা ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির তত্বাবধানে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত এ সমর নৌযানটির লঞ্চিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সহকারী প্রধান (ম্যাটেরিয়াল) রিয়ার এডমিরাল এম শফিউল আজম, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন। শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্তরে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এম শামসুল আজিজ-এনজিপি পিএসসি-বিএন’এর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে কমান্ডার খুলনা নেভাল এরিয়া, কমফ্লোট ওয়েস্ট সহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগনও উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা শিপইয়ার্ডই প্রথম ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট ও ২টি লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট তৈরী মাধ্যমে দেশের মাটিতে প্রথম যুদ্ধ জাহাজ নির্মানের যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করেছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৯-এর ১৯ মে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য আরো ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা ক্রয় মহা পরিদপ্তর এর সাথে খুলনা শিপইয়ার্ডের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারই অংশ হিসেবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ‘বিএনএস শহীদ দৌলত’এর নির্মান সম্পন্ন করে লঞ্চিং সম্পন্ন হল সোমবার।
অত্যাধুনিক এ যুদ্ধ জাহাজটির সক্ষমতা অধুনা বিশ্বে ব্যবহৃত ‘স্টেট অব দা আর্ট টেকনোলজি’ সম্বলিত অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজের প্রায় সমকক্ষ। এ যুদ্ধ জাহাজটিতে অত্যাধুনিক সামরিক সক্ষমতা সম্বলিত ১টি ৪০/৬০ মিলিমিটার বফরস্ গান এবং ২টি ১২.৭ মি.মি. মেশিন গান ছাড়াও ‘নেভিগেশনাল রাডার, জিও কম্পাস, ইকো সাউন্ডার, জিপিএস’ ছাড়াও অন্য সমর নৌযান সহ নৌ ঘাটির সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের লক্ষ্যে ‘হাই ফ্রিকোয়েন্সি ও ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি’ বেতার ব্যাবস্থা সংযোজন করা হয়েছে।
সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক বিশাল সমুদ্র এলাকার অধিকারী হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ বিশাল সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকার কথা বিবেচবনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সমুদ্র সীমার নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে নৌবাহিনীর উন্নয়নে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন।
সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নৌবাহিনীর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে এ ধরণের যুদ্ধ জাহাজের গুরুত্ব বিচেনা করেই দেশের মাটিতে এ ধরনের সমর নৌযান নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ৫৩২ কোটি টাকায় নির্মানাধীন ৫টি যুদ্ধ জাহাজের মধ্যে প্রথম শহিদ দৌলত লঞ্চিং এর মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ডের প্রগতিশীল উন্নয়নের ধারায় আরেকটি ঐতিহাসিক অধ্যায় সূচিত হল সোমবার।

বিএনএস শহিদ দৌলত-এ ৩ হাজার ৪১ অশ^শক্তির জার্মেনীর দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও ইংল্যান্ডের ‘ক্যাটার পিলার’ কোম্পানীর ১১৮ কিলোওয়াটের দুটি জেনারেটর সহ একটি ইমার্জেন্সী জেনারেটর থাকছে। ৫১.৬৫ মিটার দৈর্ঘ ও ৭.৫০ মিটার প্রস্থ প্রেট্রোল ক্রাফট ‘শহিদ দৌলত’ ৩০৭ টন পানি অপাসারন করে ঘন্টায় প্রায় ৪৮ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে সক্ষম। চলতি বছরের মধ্যেই ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করবে খুলনা শিপউয়ার্ড। এসব যুদ্ধ জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সমর বহরে সংযোজনে ত্রিমাত্রিক এ বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করবে বলে আশা করছেন শিপইয়ার্ড কৃতপক্ষ।

প্রায় ৬৫ বছর আগে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ডের যাত্রা শুরু হলেও ৮-০’র দশকে লোকসানের মুখে তা বিরাষ্ট্রীয় করণেরও সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সরকার। তবে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শি সিদ্ধান্তে ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর এ নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠানটি নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে তার হৃত গৌরব পুণরুদ্ধার হয়। ইয়ার্ডটি বহু আগেই উন্নয়নশীল ও একটি পরিপূর্ণ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এমনকি করোনা সংকটের মধ্যেও সব প্রতিকুলতা অতিক্রম করে গত ২০২০-২১ অর্থবছরেও খুলনা শিপইয়ার্ডের নীট মুনাফা ছিল ৪৩.২২ কোটি টাকা। বিগত দিনে, এ ইয়ার্ড যুদ্ধ জাহাজ সহ প্রায় ৮শটি বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণ ছাড়াও প্রায় আড়াই হাজার জাহাজের মেরামত কাজ সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ