বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
আলহাজ আবুল হোসেন
আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তবে সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার আরো পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী উপায় থাকতে সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বর্ম নষ্ট করে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাও আবার এমন একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, যে প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের দেশেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র পায়নি। বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে যদি আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতেই হয়, তবে সেটা অন্য কোনো জায়গায় করা যেতে পারে যেমন- শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ ইত্যাদি; কিন্তু অবশ্যই সুন্দরবনের আশপাশে নয়।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। যার ফলে, পরিবেশ আইন ১৯৯৭-এ বেঁধে দেয়া পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার সীমার (প্রতি ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম) তুলনায় এইসব বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা অনেক বেশি হবে। (প্রতি ঘনমিটারে ৫৩ মাইক্রোগ্রামের বেশি) যার ফলে এসিড বৃষ্টি, শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতিসহ গাছপালা জীবজন্তুর জীবন বিপন্ন হবে। সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে যেমন ১৪ কিমি দূরত্বের কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। এমনকি কিছু দিন পরে এর ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬৯০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করা হয়। ফলাফল সাথে সাথে বোঝা না গেলেও ৬৬ থেকে ১৩০ ফুট উঁচু বিশালাকৃতি পেকান বৃক্ষগুলো যখন একে একে মরতে শুরু করলো ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই-অক্সাইডের বিষ ক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওকসহ বিভিন্ন জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে, অন্তত ১৫ হাজার বিশালাকৃতির পেকান বৃক্ষ মরে গেছে। এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এমনকি ৪৮ কিমি দূরেও পৌঁছে গেছে।
ফায়েত্তি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে গড়ে ৩০ হাজার টন সালফার ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ফলে সালফার ও এসিড দূষণে হাইওয়ে ২১-এর ৪৮ কিমি জুড়ে গাছপালার এই অবস্থা যদি হতে পারে তাহলে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকারি হিসেবেই দৈনিক ১৪২ টন হারে বছরে প্রায় ৫২ হাজার টন সালফার ডাই-অক্সাইড নিঃসৃত হলে মাত্র ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত সুন্দরবনের কি অবস্থা হবে তা ভাবতেও ভীষণ আতঙ্ক হয়!
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে ৪৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা পুড়িয়ে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। এই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূত ছাই বা স্লারি ইত্যাদি ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করে কারণ এতে বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকে।
ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, একদিকে বলা হয়েছে এই বিষাক্ত ছাই পরিবেশে নির্গত হলে ব্যাপক দূষণ হবে অন্যদিকে এই ছাই দিয়েই প্রকল্পের মোট ১৮৩৪ একর জমির মধ্যে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার কথা বলা হয়েছে! এই বর্জ্য ছাইয়ের বিষাক্ত ভারী ধাতু নিশ্চিত ভাবেই বৃষ্টির পানি সাথে মিশে, চুইয়ে প্রকল্প এলাকার মাটি ও মাটির নিচের পানির স্তর দূষিত করবে যার প্রভাব শুধু প্রকল্প এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
উৎপাদিত বর্জ্য ছাই, সিমেন্ট কারখানা, ইট তৈরি ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা ইআইএ রিপোর্টে বলা হলেও আসলে কোন কারখানায় এর আদৌ কোন ব্যবহার হবে এরকম কোন নিশ্চিত পরিকল্পনা করা হয়নি। বড় পুকুরিয়ার মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই উৎপাদিত ছাইয়েরই উপযুক্ত ব্যবহার বাংলাদেশে হচ্ছে না। সিমেন্ট কোম্পানিগুলো ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করতে উৎসাহিত নয়, বরং অনেক কোম্পানি ফ্লাই অ্যাশ মুক্ত সিমেন্টের বিজ্ঞাপনও প্রচার করে। বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ছাই কোন সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহারের বদলে ছাইয়ের পুকুর বা অ্যাশ পন্ডে রেখে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে ছাইয়ের পুকুরের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো এটি পশুর নদীর ঠিক তীরেই তৈরি করা হবে।
এই ছাই বাতাসে উড়ে, ছাই মিশ্রিত পানি চুইয়ে মাটির নিচে ও নদীর পানিতে মারাত্মক দূষণ ঘটাবে। আরেকটা বড় ঝুঁকি হলো, বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কিংবা অন্যকোন কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ছাই মিশ্রিত পানি সুন্দরবনের নদীতে ও পরিবেশ ছড়িয়ে যাওয়া।
বিভিন্ন দেশে ছাইয়ের পুকুর থেকে এ ধরনের দূষণ ঘটার বহু উদাহরণ রয়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার ড্যান নদীতে ডিউক এনার্জির ছাইয়ের পুকুর থেকে ছাই মিশ্রিত পানি দূষণ ও টেনিসিতে কিংস্টোন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এমোরি ও ক্লিনচ নদীতে ছাই দূষণের ঘটনার কথা বলা যেতে পারে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে কিংস্টোন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাইয়ের পুকুর থেকে ১১০ কোটি গ্যালন বা ৪২ লক্ষ ঘনমিটার ফ্লাই অ্যাশ স্লারি এমোরি ও ক্লিনচ নদীতে বাহিত হয়ে মারাত্মক দূষণ ঘটায়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিউক এনার্জির ছাইয়ের পুকুর থেকে ৫০ হাজার থেকে ৮২ হাজার টন ছাই ও ২ কোটি ৭০ লক্ষ গ্যালন ছাই দূষিত পানি ড্যান নদীতে বাহিত হয়ে যে বিপর্যয় ঘটায় তার রেশ এখনও ঐ অঞ্চলে রয়ে গেছে।
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লা সুন্দরবনের ভেতর দিয়েই পরিবহন করা হবে! এ জন্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রায় সারা বছর ধরে হাজার হাজার টন কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ চলাচল করে গোটা সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলবে।
সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বছরে ৪৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সমুদ্র পথে আমদানি করতে হবে। আমাদানিকৃত কয়লা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে মংলা বন্দরে এনে তারপর সেখান থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সুন্দরবনের ভেতরে পশুর নদীর গভীরতা সর্বত্র বড় জাহাজের জন্য উপযুক্ত না হওয়ার কারণে প্রথমে বড় জাহাজে করে কয়লা সুন্দর বনের আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত আনতে হবে, তারপর আকরাম পয়েন্ট থেকে একাধিক ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে কয়লা মংলাবন্দরে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য সুন্দর বনের ভেতরে হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত ৩০ কিমি নদী পথে বড় জাহাজ বছরে ৫৯ দিন এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত প্রায় ৬৭ কিমি পথ ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে বছরে ২৩৬ দিন হাজার হাজার টন কয়লা পরিবহন করতে হবে!
সুন্দরবনের পানির লবণাক্ততা, জোয়ার ভাটা এবং নদীর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের কোন ক্ষতি হয় কিনা তার কোন সঠিক গবেষণা করা হয়নি। অপরদিকে শরণখোলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পশুর নদী ও পশুর নদী চ্যানেলের শ্যাওলা নদীতে বিরল প্রজাতির ডলফিনের বাস। ওই অঞ্চলটি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত এলাকার কিছু অংশ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের আওতাভুক্ত রয়েছে। আইন অনুযায়ী অভয়ারণ্যের মধ্যে কোনো এলাকায় পানি দূষণ, যাতে জলজ প্রাণী ও ডলফিনের আবাস নষ্ট করে, এমন কিছু করা যাবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে শুধু জলজ উদ্ভিদই নয়, ডলফিনের খাদ্য ও আবাসস্থল সম্পূণরূপে বিনষ্ট হবে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে পরিবেশবিদদের একটি দল প্রস্তাবিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ওপর গবেষণা করে। গবেষণায় তারা রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ২৩ ধরনের ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন। যার উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সুন্দরবনের স্বাভাবিক চরিত্র নষ্ট হবে, শুরু হবে অবাধে গাছ কাটা, লাগানো হবে বনে আগুন, ধরা পড়বে বাঘ-হরিণ-কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণী, কয়লা পোড়া সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বন ড্রাই-অক্সাইড, প্রভৃতি সুন্দরবনের জৈবিক পরিবেশ ও বায়ুম-লকে বিঘিœত করবে। কানাডার ন্যাশনাল এনার্জি বোর্ড পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা যায় যে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবশ্যই কয়লাখনির কাছে হতে হবে। তা না হলে এটি হতে হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের পাশে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এ দুটি শর্তের কোনটির মধ্যে পড়ে না। আইনানুসারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি লাল ক্যাটাগরির (সবচেয়ে বেশি দূষণপ্রবণ) শিল্প। যা শুধু শিল্প এলাকা বা শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা ছাড়া তৈরি করা যায় না। অথচ কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুন্দরবনের পাশে। বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং সুশীল সমাজের পরিবেশবান্ধব অবস্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সর্বোপরি সুন্দরবনের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সরকার রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অন্যত্রে সরিয়ে নেবেন আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
এনটিপিসি নামে যে ভারতীয় কোম্পানিটি সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের পাশে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে সেই ভারতেরই ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট ১৯৭২’ অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো বাঘ বা হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কিংবা অন্য কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা চলবে না। অর্থাৎ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসিকে বাংলাদেশে সুন্দরবনের যত কাছে পরিবেশ ধ্বংসকারী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে, নিজ দেশ ভারতে হলে সেটা তারা করতে পারত না। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক কোনো মানদ-েই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এত স্বল্প সংকট দূরত্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কোনো আইন না থাকায় এনটিপিসি ও পিডিবি এই ১০ কিলোমিটারের সুযোগটা নিয়েছে।
প্রকল্প এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনবসতি, ফসল ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি : রামপালে প্রতিষ্ঠিতব্য এই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতে প্রতিষ্ঠার জন্য ৭৯২ একর একফসলি কিংবা অনুর্বর পতিত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল অথচ বাংলাদেশে সেই একই প্রকল্পের জন্য ১৮৩৪ একর কৃষি, মৎস্য চাষ ও আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যার ৯৫ শতাংশই তিনফসলি কৃষি জমি, যেখানে বছরে ১২৮৫ টন ধান ও ৫৬৯ দশমিক ৪১ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। এই ধান-মাছ উৎপাদন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রায় ৮ হাজার পরিবার উচ্ছেদ হবে, যার মধ্যে উদ্বাস্তু এবং কর্মহীন হয়ে যাবে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ পরিবার।
বাংলাদেশের ইআইএ প্রতিবেদন অনুসারেই প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ১০ কিমি ব্যাসার্ধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে ৭৫ শতাংশ কৃষি জমি, যেখানে বছরে ৬২ হাজার ৩৫৩ টন ধান এবং ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৬১ টন অন্যান্য শস্য উৎপাদিত হয়। গরান (ম্যানগ্রোভ) বনের সঙ্গে এই এলাকার নদী ও খালের সংযোগ থাকায় এখানে বছরে ৫,২১৮ দশমিক ৬৬ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রকল্প এলাকার ফসল ও মৎস্য সম্পদ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
য় লেখক : সদস্য নির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), সিনিয়র সহ-সভাপতি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও সভাপতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ পরিষদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।