Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে শিশু কন্যা হত্যাকারী শিক্ষিকা মায়ের ৩ দিনের রিমান্ড

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৩ পিএম

শিশু সন্তানকে হত্যার দায়ে গ্রেফতারকৃত মা নাজমিন জাহানকে (২৮) ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে এসএমপি শাহপরান( রহ.) থানা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁকে আদালতে প্রেরণ করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৩ দিন মঞ্জুর করেন সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়া। আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শাহপরাণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান। এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে নাজমিন জাহানকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন তার স্বামী সাব্বির আহমদ। স্বামীর প্রতি ক্ষোভ ও অভিযোগ ছিলো সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাদেপাশা ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. জিয়া উদ্দিনের কন্যা নাজমিনের। স্বামীর কাছ থেকে ‘অযতœ, অবহেলা আর অপবাদের’ ক্ষোভে নিজের ১৭ মাস বয়েসি কন্যা শিশু নুসরাত জাহান সাবিহাকে বুধবার বেলা ২টার বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ হত্যা করেন তিনি। পুলিশের এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন নাজমিন।

পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত শিশুর নাম নুসরাত জাহান সাবিহা। তার বাবা সাব্বির আহমদ দক্ষিণ সুরমার বলদি এলাকার বাসিন্দা ও কাতার প্রবাসী। সম্প্রতি সাব্বির দেশে ছুটিতে এসেছেন। কিন্তু সাব্বিরের সঙ্গে নাজমিনের বনিবনা না থাকায় শাহপরাণ এলাকার নিপোবন-৪৯ এ আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি (নাজমিন)। সঙ্গে তার ছোট বোন ও আগের স্বামীর ঘরের ১১ বছরের এক সন্তান থাকতেন। স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে বুধবার বেলা ২টার দিকে ১৬ মাস বয়েসি শিশু সাবিহার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন নাজমিন। এসময় বিষয়টি দেখতে পেয়ে নাজমিনের কবল থেকে তার বোন ও প্রতিবেশী এক মহিলা শিশুটিকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাবিহাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এসময় হাসপাতাল থেকে নাজমিন পালাতে চেষ্টা করলে উপস্থিত লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে কোতোয়ালি থানার একদল পুলিশ গিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে আসে নাজনিন । থানায় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাংবাদিকদের সামনে নিজের শিশুক কন্যা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন নাজমিন। এসময় তিনি বলেন, ২০১৫ সালের মে মাসে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের ৬ মাস পর সাব্বির বিদেশে চলে যান। পরে শাহপরান এলাকার নিপোবন-৪৯ নং বাসায় থেকে সিলেটের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে থাকেন তিনি। নাজমিনের অভিযোগ, বিদেশের যাওয়ার পর থেকে স্বামী সাব্বির আর তার খোঁজ নেননি। ভরণ-পোষণও করেননি। বিদেশে থাকা অবস্থায় সাব্বির পরিচিতজনদের মাধ্যমে নাজমিনকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলতেন। এমন অবস্থায় চার বছর পর ২০২০ সালে দেশে আসেন সাব্বির। দেশে এসে নাজমিনকে বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করেন তিনি। তখন নাজমিন গর্ভবতী হন। তাকে গর্ভবতী রেখে সাব্বির আবারও কাতার চলে যান। তবে প্রবাসে যাওয়ার পরপরই গর্ভের সন্তান নিজের নয় বলে দাবি করেন সাব্বির। নাজমিন বলেন, আমি তখন ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলি। কিন্তু এরপরও সাব্বির আমার বিরুদ্ধে পরিচিত সকলের কাছে কুৎসা রটাতে থাকে এবং আমাকে অপবাদ দিতে থাকে। তবে জন্মের পর মেয়ের চেহেরা অবিকল তার বাবার মতো হওয়ায় মানুষের প্রশ্ন থেকে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। নাজমিন আরও বলেন, সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু আমার কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। চার-পাঁচ দিন পর পর শুধু কয়েক মিনিটের জন্য মেয়েকে দেখতে যান। কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তাকে কাছে পাইনি আমি। স্বামীর বিরুদ্ধে চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে নাজমিন বলেন, সে বহুগামী। নিজের খায়েম মেঠায় অন্য নারীরদের সাথে। কিন্তু সবকিছুর পরে নিজের সন্তানকে হত্যা করলেন কেন? সে তো নির্দোষ ছিলো? পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার তো সব শেষ। আমার জীবনকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে সাব্বির। নিজের সন্তানকে- আমাকে সময় দেয় না। আমাকে জিন্দা লাশ করে ফেলছে সে। তাই আমার মাথা কাজ করেনি। তার প্রতি ক্ষোভে-কষ্টে মেয়েকে বালিশ চাপা দেই। আমি ইমোশন থেকে আমার বাচ্চাটাকে মারছি। কিন্তু বালিশা চাপা দেওয়ার পর আমার আবেগ জেগে ওঠে। আমি আমার মেয়েকে মারার পর তাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরি এবং অনেক্ষণ কান্না করি। এসময় আমার বাচ্চার হৃদস্পন্দন আমি বুঝতে পারি। ওইসময় বাড়িওয়ালি এসে আমার কাছ থেকে আমার মেয়েকে নিয়ে নেন। এর পরপরই আমার মেয়ে বমি করে। পরে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নিজের মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে নাজমিন বলেন, আমি কাউকে ফাঁসাবো না। সাব্বিরকেও ফাঁসাবো না। সব দোষ আমার। আমি আমার মেয়েকে খুন করছি। আমার ফাঁসি হোক। আপনারা আমাকে ফাঁসি দিন। এদিকে, নাজমিনের স্বামী সাব্বির আহমদকেও গতকাল বিকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার রাতে সাব্বির বাদি হয়ে নাজমিনকে আসামি করে শাহপরাণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১১। শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি নাজমিন। যে কারণে তাঁকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসার অনুমতি দেন। বর্তমানে আমাদের হেফাজতে আছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ