Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে ফেইসবুক লাইভে শিক্ষার্থীর মাথা ন্যাড়া

দুমকি(পটুয়াখালী)উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:২৯ পিএম

মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীর মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে।
এমনই ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে।
মঙ্গলবার ৮ফেব্রুয়ারি সকালে উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পাংগাশিয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার সামনের সড়কে সেলুনের এক কর্মচারীকে দিয়ে শিক্ষার্থীর মাথা ন্যাড়া করা হয়।মাথা ন্যাড়া করার সময় কয়েক যুবক ফেইসবুকে লাইভ করলে ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এতে লজ্জায় ওই শিক্ষার্থী ও অভিবাবকগন কাউকে মুখ দেখাচ্ছেন না।
নির্যাতিত শিক্ষার্থী নাবিল(১৪)মৌকরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র।নাবিল দক্ষিণ পাংগাশিয়া ৯নং ওয়ার্ডের মোঃ রফিকুল ইসলাম মুন্সির ছেলে।
সরজমিনে গিয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মো.নাবিল হোসেনের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে পরিবারের কেউ লজ্জা ও ভয়ে সামনে আসতে চাচ্ছিল না পরে সংবাদকর্মী পরিচয় দিলে সামনে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়,করোনার কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় বড় ভাইর সাথে পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসায় কাজে গেলে মিস্ত্রী বলে আজ কাজ হবে না।পরে ঐ জায়গা থেকে আশার সময় শুনি হুজুরের মোবাইল চুরি হইছে।তারপর মাদ্রাসার হুজুর ও স্থানীয় লোকজন আমাকে সন্দেহ করে মারধর করে এবং তার কিছুক্ষন পর আমার মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয় রানা মেম্বার,রিপন মুন্সিসহ আরো অনেকে।
নাবিল আরো বলেন,মারার এক পর্যায়ে প্লাস দিয়ে আমার পায়ের নক টানতে থাকে তারা।মোবাইল পাওয়ার পরেও আমার উপর এই অমানবিক নির্যাতন চালায় তারা।
নাবিলের মা হাসিনা বেগম বলেন,স্কুল বন্ধ থাকায় আমার বড় ছেলে রবিউল নাবিলকে কাজে নেয়।কিন্তু কাজ না হওয়ায় তারা ওখানে থাকে এবং তার কিছুক্ষন পর আমাকে ফোন দিয়ে বলে নাবিল মাদ্রাসার হেফজে খানার হাফেজ ওলিউল্লাহ হুজুরের মোবাইল চুরি করছে।এসময় মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী ও রানা মেম্বারের লোকজন নাবিলকে মারধর করে।
তিনি আরো বলেন,মোবাইল যদি নাবিল চুরি করত তবে সে মোবাইল নিয়ে চলে আসত কিন্তু মোবাইল তো কাঠের পাশেই পায় তারা।আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেনি কিন্তু রানা মেম্বারের লোকজন চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে।মাথা ন্যাড়া করার সময় আমি সকলের নিকট অনুনয় বিনিনয় করলেও তারা আমার কথা শুনে নাই,উল্টো তারা আমাকে গালিগালাজ করে।তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,নাবিলের বাবা ১৮ বছর ধরে পঙ্গু,আমি ছেলেদের খেয়ে না খেয়ে বড় করেছি,ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে মারধর এবং মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে আমি এর বিচার চাই।
নাবিলের বাবা রফিকুল ইসলাম মুন্সি,বলেন আমি গাড়ি এক্সিডেন্ট করে ১৮ বছর ধরে পঙ্গু অবস্থায় বাসায় শুয়ে আছি,জমি নিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কিছু ঝামেলা থাকায় তারা আমার ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে।
পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার হেফজে খানার হাফেজ ওলিউল্লাহ জানান,নাবিল এর বড় ভাই রবিউল আমাদের মাদ্রাসায় কাজ করে।নাবিলকে সকালে কাজে নিয়ে আসে রবিউল,তার কিছুক্ষন পর বেঞ্চের উপর থাকা আমার মোবাইলটি পাওয়া যায়নি।তাই নাবিলকে জিজ্ঞেস করলে সে না বলে এবং মেম্বার রানাকে ফোন দিয়ে তার হাতে তুলে দেয়া হয়।পরে কারা নাবিলের মাথার চুল কেটে দিছে তা আমরা জানিনা।
৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার রানা আকন বলেন,নাবিল এর আগে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মানুষের বাসা থেকে চুরি করছে।তাই তাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাৎ হোসেন মাসুদ বলেন,বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কে উক্ত শিক্ষার্থীর বাসায় পাঠানো হয়েছে।তারা যেটা করেছে তা ছেলেটির সাথে অন্যায় করা হয়েছে।এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ