Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেখা মিলছে না জাতীয় পাখির

পাখিশূন্য মেঠো পথে নেই অপরূপ দৃশ্য

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বন-জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের আবর্তে চিরচেনা সেই পাখিদের সমারোহ এখন আর দেখা যায় না। পাখির কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখিশূন্য হতে চলেছে। বনে-জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে।
বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সঙ্কট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েল-শালিকসহ দেশিয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।
বরগুনার তালতলী উপজেলার লাউপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙাতো পাখির ডাকে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হোক দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা। কিন্তু এখন যেন পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন গাছ-গাছালিতে পাখির ডাক নেই। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার সাথে পাখির যে যোগ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
সরেজমিনে বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রবীনদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর-শব্দ এখন আর তেমন শোনা যায় না। সকাল দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ-ঝাড়, আমবাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, কাক, বক, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি পাখি শহর ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না। তাই পাখিপ্রিয় অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাচায় বন্দি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়।
প্রকৃতিপ্রেমী ফটো সাংবাদিক আরিফ রহমান বলেন, ‘দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পায় না। তাছাড়া শিকারীদের দৌরাত্ম্যে পাখিশূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশকিছু প্রজাতির পাখি পালন করেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।
পাখির আবাসস্থল গাছ কাটার প্রভাব, ফসলি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, বনাঞ্চল উজাড়, পাখি শিকাড়, পাখির মাংসের ব্যবসা ইত্যাদি কারণে অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন সমাজের সচেতন মানুষরা। বিভিন্ন মৌসুমে পাখি শিকার এবং পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে অনেক পাখিই চলে যাচ্ছে অন্যত্র। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ প্রকৃতি প্রেমীদের।
এ বিষয়ে টেংরাগিরি বনাঞ্চলের সোনাকাটা বিট কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, শীত মৌসুমে পাখি শিকারের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া অন্য সময় তেমন শিকার হয় না। তিনি আরো জানান, বন্য প্রাণী ও পশু-পাখির আবাসস্থলে সামান্য খাদ্যের সংকট থাকলেও উপকূলের বন রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর রয়েছে। বন রক্ষা হলে পশু-পাখি, বন্যপ্রাণীও রক্ষা হবে।
এদিকে, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ, উপকূলের বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা মিলবে না বলে মনে করেছেন পরিবেশবাদীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ