Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

হাকালুকি হাওরে লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার হেক্টর

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরের কৃষি জমিতে বোরো চারা রোপনে ব্যস্ততম সময় পার করছেন কৃষকরা। শীতের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে হাল-চাষ, জমির আইল নির্মাণ, সেচ, চারা রোপন ইত্যাদি কাজ। আগাম জমি প্রস্তুত করে কে বা কারা আগে ধানের চারা রোপন করবেন এমন প্রতিযোগীতা চলছে কৃষকদের মাঝে। এ যেনো হাওর পারের কৃষকদের ঈদ আনন্দ। কেউ জমিতে সার-গোবর দিচ্ছেন, কেউ শ্রমিকদের তদারকি করছেন, আবার কেউ চারা রোপন করছেন অনেকে জমির আগাছা বাছাই করে এক স্থানে স্তুপ করে রেখে তা পরিচর্চা করে জমিতে ব্যবহার করছেন। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন হাওরাঞ্চলের সর্বত্র।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ১ হাজার হেক্টর, উফসি ৭ হাজার ১৮০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ২০ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ২৮৮ হেক্টর বেশি। এ পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭০ ভাগ আবাদ হয়েছে। তবে এখনও যেটুকু সময় বাকি আছে তাতে আশা করা হচ্ছে, এবারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবার কুলাউড়া উপজেলা থেকে শুধু বোরো ধান প্রায় ৪৮৫৮৫.০০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। যা গত বছরের তুলনায় ১৬৪৭.০০ মেট্রিকটন বেশি। এছাড়াও এবার বোরো ধানের আবাদ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার প্রায় ৪ হাজার বোরো চাষিকে বিনামূল্যে হাইব্রিড বীজসহ নানা ধরনের উপকরণ সহায়তা করা হয়েছে।
হাকালুকি তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের গৌরকরন এলাকার কৃষক জায়েদ আহমদ, সুলতান হোসেন, শাহাপুর এলাকার মতিন মিয়া, আজির উদ্দিন, জয়চন্ডীর জকিরবিল ও ধলিয়ার হাওরের জমিতে বোরো চারা রোপন করছেন সাইদুল হাসান, সাতির আলী, রফিক মিয়া, আব্দুল গণিসহ অনেকে। আলাপকালে তাঁরা জানান, গত বছর হাওরে ব্যাপকভাবে বোরো ফসল ফলন হলেও পানি সেচ দেয়া নিয়ে অনেক ঘাটতি হয়েছে। এজন্য এবার আগাম জমি প্রস্তুত করে ধানের চারা রোপন শুরু করেছেন। যাতে আগে আগে পানি সেচ দিতে পারেন তারা। স্থানীয় গোগালি ছড়া প্রশস্ত করায় এখন আর সহজে ছড়ায় বাঁধ দিয়ে বোরো জমিতে পানি উত্তোলন করা যায় না। ছড়ায় বাঁধ দিতে হলে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু গরীব কৃষকের পক্ষে এত টাকা ব্যয় করে বাঁধ দেয়া সম্ভব হয় না। যার ফলে কাংখিত ফসল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা। তাঁদের দাবি সরকারি সহায়তায় যদি গোগালী ছড়ার কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে দেয়া হতো, তাহলে পানি সেচের ব্যয়টা তাঁদের কমতো। এরপরও অনেক স্বপ্ন নিয়ে চারা রোপন করছি। এবার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারিভাবে ধানের বীজ পেয়েছেন বলে তাঁরা সকলেই জানান।
হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির ও শাহাপুর এলাকার স্থানীয় মেম্বার ফজলু মিয়া জানান, হাকালুকি হাওর অঞ্চলের মানুষজন অনেকটা বোরো ক্ষেতের ওপর নির্ভরশীল। গত মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার স্থানীয় অধিকাংশ কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবদুল মোমিন জানান, এবারের বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮ হাজার ২শ’ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে ৫ হাজার ৩শ’ হেক্টর ও নন হাওরে ২ হাজার ৮শ’ ৯৮ হেক্টর। ইতোমধ্যে ৪ হাজার কৃষকের মধ্যে ২ কেজি করে হাইব্রিড বীজ ও ৫ কেজি করে ১ হাজার কৃষকের মধ্যে উপসি বীজ সরকারিভাবে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যাচ্ছে গত ৫ বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ