পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির ফিরিস্তি সম্বলিত ৯৭ ভাগ অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মানুষ প্রতিকার চেয়ে হাজারও অভিযোগ দুদকে পাঠায়। কিন্তু এসব অভিযোগ সংস্থাটির ‘বাছাই কমিটি’র মন গলাতে পারে না। কোনো প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা এখন হতাশ। উপরন্তু দ্বিগুণ হয়রানির শিকার হচ্ছেন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে। এ পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্রম:বিস্তার ঘটছে।
অথচ সেই অর্থে নেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। ‘ব্যবস্থা’ বলতে যেটুকু প্রচার-প্রচারণায় মেলে তার অধিকাংশই হয়রানি। বৃহৎ দুর্নীতির বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও জনবল অপচয়, অর্থ ব্যয় ও কালক্ষেপণ চলছে। অভিযোগ রয়েছে অনুসন্ধান-তদন্তের নামে উল্টো দুদকের পক্ষ থেকেই নিরীহ মানুষকে হয়রানিতে ফেলার।
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতির অভিযোগ প্রাপ্তির প্রধান উৎস হচ্ছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ। অথচ এ অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে কোনো বিধি নেই। কীভাবে অভিযোগ দিলে তা তফসিলভুক্ত হবে, অথবা কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করলে অভিযোগ দায়ের হবেÑ গত ১৮ বছরেও তা চূড়ান্ত হয়নি। সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকায় বাছাই কমিটি অভিযোগ নিচ্ছে, ফেলছে খেয়াল-খুশিমতো।
তথ্যানুসন্ধানে সূত্র জানায় দেশে দুর্নীতির মাত্রা ক্রমবর্ধিষ্ণু হলেও সে অনুপাতে অভিযোগ আসছে না দুদকে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ সরকারি দফতরসহ নানা পর্যায়ে দুর্নীতি, হয়রানির শিকার হন। কিন্তু সেই অনুপাতে দুর্নীতির বিরুেেদ্ধ কার্যক্রম চালাচ্ছে না দুদক। দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা-ব্যবস্থা ও নেটওয়ার্ক না থাকায় দুর্নীতিবিষয়ক তথ্যের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে গণমাধ্যম এবং ভুক্তভোগীদের দাখিলকৃত অভিযোগের ওপর। অথচ যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে সেই অভিযোগগুলোর অধিকাংশ ফেলে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বাছাই কমিটির একজন সদস্য বলেন, অভিযোগ যদি তফসিলের মধ্যে না পড়ে, প্রাসঙ্গিক না হয় কিংবা ত্রুটিপূর্ণ হয় কিংবা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে করা হয় তাহলে তো বাছাইয়ে অভিযোগ বাতিল হবেই। অনেকেই একেবারে ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিযোগ করেন। তফসিলবহির্ভূত হলে তো দুদক তো সব বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারে না। তফসিলভুক্ত হলেও গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে হয়। দেড় যুগেও অভিযোগ বাছাইয়ের কোনো বিধি হয়নি কেন? জানতে চাওয়া হলে দুদক সচিব মো: মাহবুব হাসান বলেন, একটি মানদণ্ড; কিন্তু অনুসরণ করা হচ্ছে। এটি কমিশনেরই সিদ্ধান্ত।
এদিকে বাছাই কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদকে বলেন, কমিশনের ‘অভিপ্রায়ে’ কমিটি নিজেরাই ১০ বৈশিষ্ট্যের একটি ‘মানদণ্ড’ তৈরি করে নিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ বাছাইয়ের সময় এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়। (১) অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ কি-না। (২) কাকে সম্বোধন করে অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে। (৩) অভিযোগকারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কি-না। (৪) প্রাপ্ত অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কি-না। (৫) পক্ষ-বিপক্ষ কর্তৃক (শত্রুতাবশত) অযথা হয়রানির উদ্দেশেই অভিযোগটি দেয়া হয়েছে কি-না। (৬) অভিযুক্ত ব্যক্তির দফতর, তার দাফতরিক পদমর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কি-না ইত্যাদি। (৭) অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়কাল। (৮) অভিযোগের দরখাস্তে বর্ণিত অপরাধের ব্যক্তি ও অর্থ-সঙ্গতির পরিমাণ। (৯) অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কর্তৃক অভিযোগের অনুসন্ধান/তদন্ত করা হতে পারে। (১০) প্রাপ্ত অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন বিধিমালা-২০০৭ মোতাবেক কার্য সম্পাদন শেষে কোর্টে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কি-না, প্রমাণে কি পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় এবং উপকরণ প্রয়োজন হবেÑ তা বিবেচনা করে বাছাই কমিটি। এক সময় প্রতি কার্যদিবসে বাছাই কমিটির বৈঠক বসতো। কিন্তু বর্তমান কমিশন দায়িত্বে আসার পর দুই সপ্তায় কখনও বা এক মাস অন্তর এই বৈঠক হয়। এর ফলে কয়েক মাস আগে জমা পড়া অভিযোগও এখন পর্যন্ত বাছাই ছাড়া পড়ে আছে।
দুদকের গ্যারেজ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে বাছাই কমিটি’র পৃথক কার্যালয়। অত্যন্ত সুরক্ষিত এ কক্ষে দুদক কর্মকর্তাদেরও প্রবেশ বারণ। দুর্গের মতো গড়ে তোলা ওই কক্ষে আসলে কি হয়Ñ কেউ বলতে পারেন না। তবে বাছাইয়ের নামে অসদুপায় অবলম্বনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে, অনুসন্ধানযোগ্য বৃহৎ দুর্নীতির অভিযোগগুলো বাছাই পর্যায়েই ‘নথিভুক্ত’ হয়ে যায়। অনেক সময় কমিশনের টেবিলকে পাশ কাটিয়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আর্থিক সুবিধা আদায়েরও কথাও জানা যায়। এর ফলে দুর্নীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি কমিশনে ওঠার আগেই ‘নাই’ হয়ে যায়। বাছাই প্রক্রিয়াকে ‘স্পর্শকাতর’ গণ্য করে বাছাই কক্ষকে ‘নিñিদ্র নিরাপদ’ করা হয়েছে বটে। কিন্তু এর ফলে বাছাই প্রক্রিয়াটিকে প্রকারন্তে আরও অস্বচ্ছ করে তোলা হয়েছে। বাছাই প্রক্রিয়াকে প্রশাসন ক্যাডারের কতৃত্বে রেখে দিয়ে বসানো হয়েছে প্রহরা। ফলে সরকারের বিভিন্ন দফতরে সংঘটিত প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগগুলো কখনোই অনুসন্ধানের আসে না।
এর আগে বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেনÑ এমন একজন কর্মকর্তা জানান, দুদকে কতগুলো অভিযোগ জমা পড়ল কতগুলো নিষ্পত্তি করা হলোÑ এ সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে আগে প্রকাশ করা হতো। এখন হয় না। যেসব অভিযোগ অনুসন্ধান যোগ্য নয়Ñ সেগুলোর কোনো তালিকাও প্রকাশ করা হয় না। এর ফলে এ সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক যে, বাছাই প্রক্রিয়ায় ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ হচ্ছে। কাউকে কাউকে ধরা হচ্ছে। অনেককেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। মানুুষের এই সন্দেহ দূর করার জন্য বাছাই প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন।
অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ১০ হাজার ৭৬৬টি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। বিপরীতে এসব অভিযোগের বিষয়ে আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না জানা নেই দুদক কর্তৃপক্ষের। সত্যি বলতে এটি দুদকের কোনো কাজ হতে পারে না। দুদকের দায়িত্ব অ্যাকশন নেয়ার। চিঠিপত্র লিখে কাজের ভলিউম বাড়ানো ছাড়া এটি আর কিছুই নয়। এতে কোনো প্রতিকার মেলে না। মাঝখানে অভিযোগকারীর নাম-ঠিকানা প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আরও বেশি হয়রানির শিকার হন।
দুদক সূত্র জানায়, বর্তমানে দুদকের অভিযোগ বাছাইয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) একেএম সোহেল। তার সাথে রয়েছেন পরিচালক (উপ-সচিব) উত্তম কুমার মণ্ডল। দুদকের একাধিক নিজস্ব কর্মকর্তাকে বাছাই প্রক্রিয়ায় রাখা হলেও তারা যেন ঠুঁটো জগন্নাথ। এ কারণে বিদ্যমান কমিটির কার্যকালে বিশেষত: প্রশাসন ক্যাডারের কোনো দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু নজির নেই বললেই চলে। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারদের এখানে রাখাই হয়েছে পাহারাদার হিসেবে। যা দুরভিসন্ধিমূলক।
সূত্রমতে, অভিযোগ হচ্ছে দুদকের তদন্তের প্রথমভিত্তি। মামলা রুজু, তদন্ত, ডকুমেন্ট সংগ্রহ, চার্জশিট দাখিল, বিচার ও রায় এবং রায়ের বিরুদ্ধে আপিলসহ অনেক কিছু নির্ভর করে অভিযোগটির ওপর। অথচ অনুসন্ধান, তদন্ত এবং দুর্নীতি মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিরাই করছেন দুর্নীতি অভিযোগের বাছাই। এর ফলে একদিকে যেমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেক নিরীহ ব্যক্তির হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তেমনি অনেক বড় দুর্নীতিবাজকে অনুসন্ধান পর্যায়েই দায়মুক্তি পেয়ে যাওয়ারও রয়েছে অভিযোগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান ইনকিলাবকে বলেন, অভিযোগ বাছাইয়ে একজন ডিজির নেতৃত্বে ৫/৭ জনের একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু এখানে অভিযোগে যেমন ত্রুটি থাকছে- তেমনটি বাছাই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বেশিরভাগ অভিযোগকারীই দুর্নীতির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করেন না। যেমন ধরুন, বলা হয় অমুক অফিসার ঘুষ খায়। কিন্তু কীভাবে ঘুষ খায়, কোন কাজে ঘুষ খায়, তিনি ওই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি-না ইত্যাদির কোনো জবাব থাকে না। অনেক অভিযোগ রয়েছে দুদকের তফসিলবহির্ভূত। এর ফলে আমরা বেশিরভাগই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোকে গুরুত্ব দিই। অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা না থাকার কারণে অভিযোগ মাত্রই নুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।