Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

টিকার আওতা বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা

মাদরাসা শিক্ষার্থী, ভাসমান মানুষ, দোকান-রেস্তোরা কর্মী, পোলট্রি, ডেইরি কর্মচারীরাও পাবে টিকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

২০২২ সালের জুনের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সদস্যদেশগুলোকে উদ্যোগ নিতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অবশ্য বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টিকা প্রদানে সঠিক ধারায়ই রয়েছে। দেশে করোনার টিকাদানের গতি আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। জানুয়ারি মাসেই প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডোজ টিকা প্রদান করেছে। জানুয়ারি মাসে দৈনিক গড়ে প্রায় ১১ লাখ ৩০,০০০ ডোজ টিকা দিয়েছে। টিকাদানের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আসবেন। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকাদানের এই গতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ ডোজ। প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৫ দশমিক শূন্য শতাংশ। বর্তমানে ৯ কোটি টিকা হাতে রয়েছে। পর্যাপ্ত টিকা হাতে থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর এখন টিকাদানের আওতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বয়সী ও পেশাজীবী গোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে কাজ করছে। এমনকি পাঁচ বছর বয়সীদেরও টিকা দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এদিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী টিকাদানের আওতায় আসলেও এখনো অনেকটা পিছিয়ে দেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। অধিদফতরের টিকাদান সম্পর্কিত নতুন পরিকল্পানায় দেখা গেছে, দেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা টিকাদানের বাইরে থেকে গেছে। তাই সিটি কর্পোরেশনসহ যেসব জেলায় বড় মাদরাসা রয়েছে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সেসব এলাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা টিকা প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী টিকা দেয়া হবে। এমনকি অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় অবস্থিত কওমি মাদরাসাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যমান টিকাকেন্দ্র বুথ নির্দিষ্ট করে টিকা দেয়া হবে। এছাড়াও পরিবহন খাতের অনেকেই টিকার বাইরে রয়েছে।
এদিকে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী যারা ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেল পর্যায়ে লেখাপড়া করছেন তাদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে সুরক্ষায় নিবন্ধন করে টিকা দেয়া হবে। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় বিদ্যমান ফাইজার কেন্দ্রে একইভাবে উক্ত জনগোষ্ঠিকে টিকা দেয়া হবে। এছাড়া স্কুল বহির্ভূত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী জনগোষ্ঠিকে টিকার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যারা বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করেন, তাদের টিকাদানের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন ও সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে টিকা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বৃদ্ধাশ্রম চিহ্নিত করে সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠির তালিকা প্রণয়ন করবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশন-বিজিএমইএ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশন-বিকেএমইএভুক্ত শিল্প কারখানার কর্মীরা এখানো সবাই টিকা পাননি। এদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন তাদের নতুন তালিকা প্রণয়ন করে টিকা দেয়া হবে। দেশের শিশু সদন, এতিমখানা, অনাথ আশ্রমে যারা বসবাস করে তারাও রয়ে গেছে টিকার বাইরে। তাই তাদের টিকার আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন ও সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগীতায় এদের টিকা দেয়া হবে।

এদিকে দেশে যারা যৌনপল্লীতে বসবাস করেন এবং যারা ভাসমান যৌনকর্মী রয়েছেন তারাও রয়েছেন টিকা সুবিধার বাইরে। তাই দেশের টিকাদানের লক্ষমাত্রা পূরণে এদেরকেও টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সমাজ সেবা কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট এনজিওদের সমন্বয় করে এদের টিকা দেয়া হবে।

ঢাকা শহরে প্রচুর মানুষ ভাসমান জীবন-যাপন করেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমান টিকাদলের সহযোগীতায় তাদের জনসন এন্ড জনসন এর টিকা প্রদান করা হবে। এছাড়া সারাদেশের জেলা স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের সমন্বয়ে উক্ত জনগোষ্টিকে চিহ্নিত করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

দোকান মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্র্তপক্ষের সমন্বয়ে দোকান কার্মী, রেস্তোরা কর্মী, পোলট্রি, ডেইরি কর্মচারীরে টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদের সঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় রিয়াল এস্টেট ও গৃহনির্মান শ্রমিকদেরও টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সূত্র মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে, অর্থাৎ ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার মানুষকে টিকা দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছে। ৭০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজের আওতায় আনতে আরও ২ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার মানুষকে টিকা দিতে হবে। জানুয়ারি মাসেই প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে। অর্থাৎ টিকাদানের বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আসবে।

অবশ্য দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। এ পর্যন্ত পূর্ণ দুই ডোজ পেয়েছেন ৬ কোটি ৫ লাখ ৮ হাজার মানুষ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে যা মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ। আর ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর পূর্ণ দুই ডোজের আওতায় আনতে আরও ৫ কোটি ৮৭ লাখ ১২ হাজার ডোজ টিকা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে আগামী ৫ মাসে ৮ কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ডোজ টিকা দিতে হবে। এটা সম্ভব বলে মনে করছেন ইপিআই’র কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, সবাইকে টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীসহ যারা টিকাদানে পিছিয়ে আছে এমন অঞ্চলকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ