পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিউলি-শিহাব (ছন্দনাম) ভালোবেসে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনের ১৫ বছরে আসে দুুই সন্তান। তারা এখন স্কুলে পড়ে। এর মধ্যে পরকীয়ায় জড়ান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শিহাব। প্রতিবাদ করতেই শিউলির ওপর অমানুষিক নির্যাতন। কয়েক বছর অপেক্ষা করেও যখন স্বামীকে সংসারমুখী করতে পারলেন না তখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন শিউলি। দুই সন্তানকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। স্বামীকে দেন তালাক। সোনার সংসার তছনছ।
শিউলি-শিহাবের মতো নগরীতে দিনে ১৫ জনের সংসার ভাঙ্গছে। পরকীয়া, যৌতুক নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্বামী-স্ত্রীর আয়ের টাকা নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক অশান্তিসহ নানা কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। গেল ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সালিশী আদালতে রেকর্ড পাঁচ হাজার ৫৪৮টি তালাকের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। সে হিসেবে দিনে ১৫টি ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল চার হাজার ৮৫৪টি। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪০৮টি সংসার ভাঙ্গার ঘটনা রেকর্ড হয়। বিগত ২০১৯ সালে চার হাজার ৫৫০টি, ২০১৮ সালে চার হাজার ৩৩১, ২০১৭ সালে তিন হাজার ৯২৮, ২০১৬ সালে তিন হাজার ৯৬১, ২০১৫ সালে তিন হাজার ৪৮৬, ২০১৪ সালে তিন হাজার ২৬৫টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা রেকর্ড হয়। সে হিসাবে প্রতিবছর তালাকের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
সাজানো সংসার কেন ভাঙ্গছে তা নিয়ে কোন গবেষণা নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেপরোয়া-স্বাধীনচেতা মনোভাব, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়ায় সমাজে এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাদকাসক্তিও সংসার ভাঙ্গার নেপথ্যে বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। অভাব-অনটন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনও সংসার ভাঙ্গার বড় কারণ। সামাজিকভাবে অর্থাৎ অভিভাবকদের পছন্দে বিয়ের সংখ্যা কমে আসছে। তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করছেন আবার নিজেদের ইচ্ছায় সংসার ভাঙ্গছেন। তালাকে এগিয়ে রয়েছে নারী বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা।
সিটি কর্পোরেশনের রেকর্ড বলছে, মধ্যবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে বেশি সংসার ভাঙ্গছে। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের মধ্যেও বাড়ছে তালাকের প্রবণতা। সংসার ভেঙ্গে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে সন্তানেরা। তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাদের ভরণ-পোষণ নিয়ে সংকটে মায়েরা। বিষয়টি গড়াচ্ছে আদালতে। তালাকের পর অনেক সন্তান সৎ মায়ের ঘরে বড় হচ্ছে। কারও ঠাঁই হচ্ছে দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানির সংসারে। অব্যাহত বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় পরিবার, সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা।
সিটি কর্পোরেশনের সালিশী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদ চেয়ে কয়েকটি আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্ত্রীরাই সংসার ভাঙ্গতে চাচ্ছেন। অভিযোগ হিসাবে স্বামীদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তি, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া, সংসারে অমনোযোগী, স্ত্রী-সন্তানদের মারধর উল্লেখ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরকীয়ার অভিযোগ স্বামীদের বিরুদ্ধে। আবার প্রথম স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণেও অনেক নারী তালাকের আবেদন করছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে আর্থিক টানাপোড়নেও ভাঙ্গছে সংসার।
কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে নিজের আয়ের টাকা স্বামী জোর করে নিয়ে যাচ্ছেন আর না দিলে মারধর করছেন এমন অভিযোগে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। পরকীয়ার ঘটনা উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারেও বিপদ ডেকে আনছে। ধনাঢ্য পরিবারগুলোতে পরকীয়ার পাশাপাশি সম্পত্তির বিরোধেও তালাকের ঘটনা ঘটছে। স্বামীদের পক্ষ থেকে স্ত্রীদের বিরুদ্ধে পরকীয়া এবং স্বামীর অর্থ নয় ছয় করারও অভিযোগ আসছে। বিশেষ করে প্রবাসী স্বামীরা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে স্ত্রীদের তালাক দিচ্ছে। প্রবাসের পুরো আয় স্ত্রীর কাছে পাঠানোর পর দেশে ফিরে এসে দেখেন তার পুরোটাই খরচ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে শ্বশুর বাড়ির লোকজনও অর্থ আত্মসাতে জড়িত। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনায় বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছেন প্রবাসীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা বিশেষ করে চট্টগ্রাম ইপিজেড, কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে বেশি।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়া, স্বাধীনচেতার নামে বেপরোয়া এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সংসার ভাঙ্গছে। মাদকাসক্তি, বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, অভাব-অনটনের কারণেও বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রামের মতো রক্ষণশীল সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে সকলের ভূমিকা রাখতে হবে। কোন পরিবারে সমস্যা দেখা দিলে পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে তা সমাধান করতে হবে। বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হতো। এখন তথাকথিত আধুনিকতার নামে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের পছন্দে বিয়ে করছে। আবার অপছন্দ হলে সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছে। সমাজে অস্থিরতা, সীমাহীন দুর্নীতি, নৈতিক অধপতনও এজন্য দায়ী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী বলেন, অপসংস্কৃতি তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের কারণেই পরিবারে অশান্তি হচ্ছে। আর এ থেকে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষ তার শেকড় এবং পারিবারিক মূল্যবোধ ভুলতে বসেছে। সংসারে সংকট হলে তা সমাধানেরও পথ আছে। কিন্তু সংসার ভেঙ্গে দেওয়া কোন সমাধান নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।