Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ড্যান্ডিতে আসক্ত হচ্ছে পথশিশুরা

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ফেনীতে পথ শিশুরা স্নিফিং গ্লু (ড্যান্ডি)’র নেশায় আসক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ১২/১৫ বছর বয়সী পথশিশুরা এই ড্যান্ডির নেশায় নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেছেন। শহরের প্রধান সড়ক, দোয়েল চত্বর, রেলস্টেশন, বেদে পল্লী, বিরিঞ্চি হাঙ্গার, পুরাতন জেলগেটসহ অলি-গলি থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় সবখানেই পথশিশুদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এসব প্রবণতা। তারা দিনভর বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা, চুরি-ছিনতাই, টোকাই ও ভাঙারি মালামাল বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড় করে বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন এ ভয়ঙ্কর নেশার কারণে শিশুদের মধ্যে অনেকের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, লিভার ডিজিজ, কিডনি ডিজিজ এবং শিশুরা মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সংকট সমাধানের পথ খুঁজছেন জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ। এদিকে শিশুদের এ ভয়ানক নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে জেলা পুলিশ। আভিযানিক টিম ফেনী শহরে বিভিন্ন এলাকা অভিযান পরিচালনা করে হাজী হার্ডওয়ার-এর মালিক সাইফুল ইসলাম, মোল্লা হার্ডওয়ারের মালিক গিয়াস উদ্দিন, ডি. কে. হার্ডওয়ার-এর মালিক অমিত কর্মকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনেন।
পরবর্তীতে তাদেরকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পথ শিশুদের নিকট গামের কোটা বিক্রি করবেন না বলে আশ্বাস দেন। পথশিশু কিংবা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিকট যাচাই-বাছাই না করে গাম বিক্রি করার কারণে পথশিশুরা নেশায় আসক্ত হচ্ছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন এবং এই সকল পথশিশুরা যাতে নেশায় আসক্ত হতে না পারে সেই জন্য সামাজিক সচেতনতামূলক কাজেও অংশগ্রহণ করবেন বলে তারা জানান। জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফেনী শহরে প্রায় ৭০/১০০ জন পথশিশু রয়েছে। তাদের বয়স আনুমানিক ১০/১৫ বছর। উক্ত পথশিশুদের মধ্যে অধিকাংশই ড্যান্ডি (গাম) নেশায় আসক্ত।
শুধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান কিংবা আসক্ত শিশুদের ধরলেই এ সংকটের সমাধান হবে না। শিশুদের এ আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং এবং পুনর্বাসনের। এমনটাই বলছেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল-হাসান বলেন, এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আমরা আলোচনা করবো। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কার্যকরী প্রদক্ষেপ প্রশাসন থেকে নেয়া হবে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুহাম্মদ মুসা হাসনাত বলেন, ড্যান্ডি মূলত এক প্রকার গাম বা আঠা জাতীয় উদ্ধায়ী পদার্থ যা সাধারণ তাপমাত্রায় সহজেই বাষ্প বা ধুম্রে পরিণত হয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘গ্লু স্নিফিং’ বলে। বর্তমানে ইহা ‘ড্যান্ডি’ নামেই সবার কাছে ব্যাপক পরিচিত। এর ফলে মাথা ঘোরা, চলাচলে অসংলগ্নতা, কথা জড়িয়ে আসা, হাত-পা কাঁপা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, রক্ত বমি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। এমনকি নেশার অতিমাত্রায় নিউমোনিয়া, হার্ট ফেইলিউর কিংবা শ্বাসরোধ বা দুর্ঘটনার কারণে আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃত্যুও ঘটতে পারে। যক্ষা, এইডস, যৌন বাহিত নানা রোগ, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ও ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে। এছাড়া উত্তেজনা তথা উন্মত্ততা, উদাসীনতা, বিবেক বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, চিত্তবিভ্রম, শ্রুতি ও দৃষ্টিবিভ্রম, কলহপ্রবনতা, হতাশা, উদ্বিগ্নতা, মনোবৈকল্য, আত্মহত্যা সিজোফ্রেনিয়ার মত মানসিক রোগেও আক্রান্ত হতে পারে আসক্তরা। এ বিষয়ে জনসচেতনা বাড়ানো উচিত।
ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, শহরের কয়েকজন হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীকে ধরে এনে জিজ্ঞাবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন পথশিশুদের এ ধরনের ড্যান্ডি বা গামের আসক্তি থেকে দূরে রাখলে শহরের মধ্যে ছোট বড় অপরাধ ধীরে ধীরে কমে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ