Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এইচএসসিতে দুবার ফেল করেও তিনি ডাক্তার!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৯:৪৬ পিএম

কাশিমপুর ডক্টরস হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শিবলী সাদিক। ১৯৯৮ সালে বিকেএসপি থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করলেও ২০০০ ও ২০০১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অবলম্বন শুধু প্যারামেডিক ডিপ্লোমা। এই ডিগ্রি দিয়েই তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর মোড়ে কাশিমপুর ডক্টরস হাসপাতালে ডাক্তার হিসাবে দিব্যি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

শুধু কি তাই, চীন থেকে ভুয়া এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে হাসপাতালের চেয়ারম্যান পদও বাগিয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সব জালিয়াতি ফাঁস হয়ে গেছে। আজ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) গাজীপুর কাশিমপুর ডক্টরস হাসপাতাল থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনির নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগেও এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া ৭ চিকিৎসককে ১৯ জানুয়ারি দুপুরে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দুদক। যাদের সূত্র ধরেই শিবলীকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ভুয়া ১২ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। সেই মামলাতেই শিবলী সাদিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। চীনের ভুয়া ডিগ্রি দিয়ে বাগিয়েছেন বিএমএ ও বিএমডিসির নিবন্ধন, সম্পদ অর্জনে কম যাননি শিবলী। সাভারে ৫তলা বাড়ি, দামি গাড়ি ও নিজের হাসপাতালসহ বিপুল সম্পদ। এমনকি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে জালিয়াতির নেতৃত্বে ছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

এর আগে গ্রেফতার হওয়া ভুয়া চিকিৎসকরা হলেন- ইমান আলী, সুদেব সেন, তন্ময় আহমেদ, মোক্তার হোসেন, মো. কাওছার, রহমত আলী ও মাসুদ পারভেজ। তারা চীনের তাইশান মেডিকেলের এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০২০ সালের মামলায় যে ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন সে আসামিরা হলেন- কুমিল্লা জেলার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন। অপর দুই জন হলেন- বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে গেলে, তার জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর সনদ ভুয়া। এমবিবিএস সনদধারী ওই ব্যক্তিরা কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করে বলে জানায়। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। উত্তীর্ণ হয়েছেন এই বলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায়, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। এজাহারে আরও বলা হয়, এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ওই সনদপত্রগুলো যাচাই করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠায়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, উল্লিখিত ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত গ্রহণ করা হয়, তাতেও দেখা যায় যে সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। ওই ১২ জন ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ কেবলমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন, সে দেশে থাকার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং তাদের এমবিবিএস ডিগ্রির সনদগুলো ভুয়া।



 

Show all comments
  • ash ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১০:২১ এএম says : 0
    ERA MANUSHER JIBON NYE KHEL KHELTO !! HAJAR HAJAR NIRYHO OSHUSTHO MANUSHER SHAHE PROTAROK KORECHE !! AMAR TO MONE HOY NA ODER MOTO AMON BATPARDER BECHE THAKAR KONO HOQUE ASE !! ODER LINE BEDHE LOTKANO WICHITH !! NA HOLE AMON BATPAR DER SHONGKHA BARTEI THAKBE !!! MANUSH TO R KOSTO KORE MADICAL E PORTE JABE NA
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ