Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গলে গেলেও থেকে যাবে প্রভাব

আইসবার্গ এ৬৮

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

২০১৭ সালে অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে গলে নিঃশেষ হওয়ার আগে আলোচিত হয়েছিলো বিশাল আইসবার্গ এ৬৮। এটি ছিল এখন পর্যন্ত দেখা বৃহত্তম আইসবার্গগুলোর মধ্যে একটি, যা ছিল ১০০ মাইলেরও বেশি লম্বা এবং ৩০ মাইল চওড়া। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর আগে এটি দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ কোটি টন পর্যন্ত পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করেছে। অর্থাৎ বৃটেনের সকল মানুষ প্রতিদিন মোট যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করেন এটি প্রতিদিন তার ১৫০ গুণ বেশি পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করেছে।

অল্প সময়ের জন্য হলেও এ৬৮ ছিল বিশ্বের সবথেকে বড় আইসবার্গ। এর আয়তন ছিল ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। প্রায় ৪ বছরে বিশাল এই আইসবার্গটি সমুদ্রে পুরোপুরি মিশে গেছে। আইসবার্গটি দক্ষিণ মহাসাগরে প্রবেশের পর থেকে গরে যাওয়ার আগে কয়েক বছর ধরে ওয়েডেল সাগরের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়েছিল। ২০২০ সালে এটি আবার যখন আলোচনায় আসে, তখন এটি এক হাজার মাইলেরও বেশি পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আটলান্টিকের দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপে চলে এসেছিল। দীর্ঘ যাত্রাপথে এটি অনেক সঙ্কুচিত এবং পাতলা হয়ে গিয়েছিল। তবে এর অস্তিত্ব এখন আর নেই। গত বছর, দক্ষিণ জর্জিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে, এটি এতটাই পাতলা হয়েছিল যে, ছোট ছোট টুকরো টুকরো হয়ে সমুদ্রে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।

এ৬৮ আইসবার্গটি একসময় প্রায় ৪০০ ফুট পুরু ছিল, যদিও এর ১২০ ফুট বাদে বাকি অংশ পানির নীচে লুকানো ছিল। ইকোলজিস্ট এবং অন্যরা আশঙ্কা করেছিলেন যে, যাত্রার সময় আইসবার্গটি দক্ষিণ জর্জিয়ার কাছে আটকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিচরণ ও শিকারের জায়গা হারিয়ে লাখ লাখ পেঙ্গুইন এবং সীল হুমকির মুখে পড়ত যারা সেখানে বাস করে এবং বংশবৃদ্ধি করে। তবে সেটা সেটা ঘটেনি। গবেষণার ফলে জানা গেছে, এ ৬৮ সে সময় ভেসে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আকার হারিয়ে ফেলেছিল। ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে আইসবার্গটি অসংখ্য ছোট ছোট টুকরো টুকরোয় বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে সেগুলো আর নজরে রাখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পরিবেশগত প্রভাব অনেক দিন থেকে যাবে।

বিজ্ঞানীরা এখন এ৬৮ আইসবার্গ গলে যাওয়ার প্রাকৃতিক প্রভাব বুঝার চেষ্টা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দৈত্যাকার চ্যাপ্টা হিমশৈলগুলো এদের বিচরণের এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব রাখতে পারে। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসা মিষ্টি পানির ভান্ডার স্থানীয় সমুদ্র স্রোতকে পাল্টে দেয়। এছাড়া এসবের মধ্যে থাকা লোহা ও অন্যান্য খনিজদ্রব্য সাগরের লোনা পানিতে মিশে নতুন জৈবিক উৎপাদনের সূচনা করে। ‘বৃটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে’ আইসবার্গটির সম্পূর্ণভাবে গলে যাওয়ার আগে এর ওপর নজর রাখতে আশেপাশে কিছু রোবোটিক গøাইডার স্থাপন করেছিল। জৈব সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জেরাইন্ট টারলিং বলেন, এগুলোসহ অন্যান্য যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। তবে এখনও সব তথ্য উপাত্ত পুরোপুরি বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, এ ৬৮ এর আশেপাশের সাগরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের প্রজাতির মধ্যে পরিবর্তনের জোরালো সংকেত পাওয়া গেছে। পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এর কাছাকাছি সমুদ্রের গভীর অংশে সঞ্চিত বস্তুর ক্ষেত্রেও।

কিন্তু গবেষণাটি দক্ষিণ জর্জিয়ার আশেপাশের বাস্তুতন্ত্রের জন্য আইসবার্গ থেকে আরেকটি সম্ভাব্য হুমকিও প্রকাশ করেছে। এটি দক্ষিণ মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পানির মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আটলান্টিকে যাওয়ার সময়, এটি নীচে থেকে গলে যায়, অবশেষে দ্বীপের কাছে সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে তাজা পানি ছেড়ে দেয়। এত বেশি মিষ্টি পানির আগমন সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলে প্লাঙ্কটন এবং অন্যান্য জীবকে প্রভাবিত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই আইসবার্গ থেকে গলিত পানির পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন। যখন আইসবার্গটি দক্ষিণ জর্জিয়ার কাছে ছিল, তখন সমীক্ষার সাথে বিজ্ঞানীরা পানির নমুনা নিতে স্বয়ংক্রিয় আন্ডারওয়াটার গøাইডার স্থাপন করতে সক্ষম হন। ২০২০ সালে যখন আইসবার্গটি দক্ষিণ জর্জিয়ার কাছাকাছি ছিল, তখন ক্রিলের (খাদ্য শৃঙ্খলে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের ঠিক উপরে থাকা ছোট ক্রাস্টেসিয়ান) উপরে এর খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।

এ৬৮ গলে গেলেও তার চিহ্ন রেখে গেছে। অধ্যাপক টারলিং বলেন, যদিও এ৬৮ গলে গিয়েছে, তবে সাম্প্রতিক দশকগুলিতে আরও কয়েকটি বড় আইসবার্গ রয়েছে। একটি আইসবার্গের চলাচল এবং স্থির হয়ে যাওয়া সমুদ্রতলের বা কাছাকাছি বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারে। এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্ভাব্য আরও আইসবার্গকে স্থির অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে। উষ্ণায়নের ফলে বিশাল অ্যান্টার্কটিক বরফের কিছু অংশ সাগরের দিকে দ্রæত প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে উত্তর দিকে যাত্রা করা বরফগুলো আরও আইসবার্গে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে বাস্তুতন্ত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। সূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ