Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন আইন পাস

সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী : ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সার্চ কমিটির কাজ শেষ হবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

সার্চ কমিটিতে প্রেসিডেন্ট মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত করে বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। এছাড়া সার্চ কমিটির কাজ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত বিলে ১০ কার্যদিবস ছিল। বিলটি পাস হওয়ার সময় এই দু’টি সংশোধনী এমপিদের থেকে সুপারিশ আকারে এসেছে।

আলোচিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ গতকাল সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয় এবং জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব দেন। এখন প্রেসিডেন্ট সই করার পর গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ।

প্রথমে প্রস্তাবিত বিলের নাম ছিল, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হবে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন সার্চ কমিটিতে দুইজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার প্রস্তাব দেন। আইনমন্ত্রী সে প্রস্তাব গ্রহণে সায় দিলে সংসদ তা ভোটে গ্রহণ করে। অর্থাৎ, ইসি গঠনের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে নাম সুপারিশের জন্য যে সার্চ কমিটি থাকবে সেখানে একজন নারী থাকবেন। বিলে বলা ছিল প্রেসিডেন্ট ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। এখন প্রেসিডেন্ট মনোনীত ওই দু’জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত হয়েছে। বিলে সার্চ কমিটির কাজ ১০ কার্যদিবস করার বিধান রাখা হয়েছিল। সেটি এখন ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এ সংক্রান্ত সংশোধনী সংসদ গ্রহণ করে। এ ছাড়া তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাবগুলো পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সার্চ কমিটিতে সংসদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। তারা বিলটির নানা দিকের সমালোচনা করেন। এছাড়া বিলের ওপর বিভিন্ন শব্দ ও ছোটখাটো কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।

বিলটি পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে। এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্টর সঙ্গে সংলাপ করে। যারা সংলাপে যায়নি এবং গিয়েছেন তারা সবাই আইনের কথা বলেছেন। মহামান্য প্রেসিডেন্ট আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালেই এই আইনের কথা উঠেছিল।

এই বিল নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরের সমালোচনার জবাব দেন আইনমন্ত্রী। এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) এ আইন সংক্রান্ত খসড়া থেকে পড়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ওই দু’টির সঙ্গে সরকারের আনা বিলের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বিলটি নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সুশীলসমাজের নানামুখী সমালোচনা রয়েছে। দেশের পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এই আইনের অধীনেই গঠন করা হবে।

গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২৬ জানুয়ারি দু’টি পরিবর্তনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন সংসদে পেশ করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার।

সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা ছিল, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্য‚ন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশায়’ যুক্ত করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। অর্থাৎ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে সার্চ কমিটি কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে এমন কাউকে করতে হবে, যার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা অন্যান্য পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে।

আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬(ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদÐে দÐিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদÐ উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদÐের সুপারিশ করে কমিটি। অর্থাৎ নৈতিকস্খলন ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সংসদীয় কমিটির এ দু’টি সুপারিশসহই বিলটি পাস হয়েছে।

সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে নাম সুপারিশ করবে। এ অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ প্রেসিডেন্টের কাছে দেবে বলে বিলে বলা হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলে ১০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেয়া ছিল। সংশোধনীর মাধ্যমে তা ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনে বলা আছে, সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহবান করতে পারবে।



 

Show all comments
  • Abbas Sharif ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৩৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশে এখন আর সেই আগের মতো নির্বাচনী পরিবেশ নেই। এখন পেশিশক্তি ও টাকার খেলা চলে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায়: ড এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের মতো স্বাধীন, দক্ষ, সাহসী ও দেশপ্রেমিক নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। দলকানা কমিশন দিয়ে কোন সুন্দর নির্বাচন আশা করা যায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Jan Alam ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫০ এএম says : 0
    সরকার জনগণের টাকার অপচয় করে নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যর্থ আইন সংসদে পাশ করেছেন শেষ পর্যন্ত হয়ত জনগণের দাবির কাছে সরকার মাথা নত করতে হয়ত বাধ্য হবে তখন এই অর্থ অপচয়ের দায় দায়িত্ব কি সরকার নেবেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • আলী হাসান শিহাব ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫০ এএম says : 0
    ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার আর একটি পদক্ষেপ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Delowar Hossen ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫১ এএম says : 0
    আইন পাস করতে হলে জনগণের জনসমর্থন প্রয়োজন । ৩০০ জন এমপি কখনো ২০ কোটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা পারেনা পারেনা ।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Muhammad Miah ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫১ এএম says : 0
    এই সমস্ত চালাকিতে কাম হইবো না,বিশ্বের মানুষ জানে এইটা কি আইন।আগামী নির্বাচন করতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Yasin ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫১ এএম says : 0
    সংসদে কারা আইন পাশ করবে তারাই তো বিনা ভোটে নির্বাচিত এমপি মন্ত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Arfat Hossain ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫১ এএম says : 0
    আরও ৫ বৎসর ভোটবিহীন সংসদ সদস্যরা সংসদের সংসার করুক তাদের অসমাপ্ত কাজগুলোর মাধ্যমে টাকার বস্তাগুলো পরিপূর্ণ হোক। জাতি নির্বাচন নামের তামাশা চাই না, কোন নির্বাচন কমিশনের দরকার নায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shariful Islam ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
    নির্বাচন এর দরকার নাই,খালি সব কিছুর দাম কমিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jasim Uddin ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
    রাজনৈতিক বা নির্বাচনী সংঘাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেলেও এই সরকার ক্ষমতা ছাড়বে না ।এই সরকারের কারনে দেশ আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় পরিণত হবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Emran Hossen ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
    ২০৪০ সাল পর্যন্ত এভাবেই অবৈধ ভাবে ক্ষমতা ধরে রেখে একনায়কতন্ত্র চালিয়ে যাওয়ার দিকে ফার্স্ট স্টেপ কম্পিলিট..
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ শহীদুল ইসলাম ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৪৪ এএম says : 0
    মনে হয় এই নতুন পদ্ধতি দেখে বি.এন.পি আশায় বুক বেঁধে নির্বাচনে আসবে এবং আবারও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ