Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যশোরে ফুলের রাজ্যে নতুন শঙ্কা ওমিক্রন

চিন্তার ভাঁজ চাষিদের কপালে

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ও পানিসারা দুই ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার একর জমিতে বছরজুড়ে উৎপাদন হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল। চারদিক ফুলে ফুলে রঙিন। পথের দুই ধারে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গø্যাডিওলাস, গাঁদা ও জারবেরা ফুলের ক্ষেত। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের এক বিস্তীর্ণ বিছানা যেন বিছিয়ে রেখেছে।
এমন দৃশ্যে সবারই চোখ-হৃদয় জুড়িয়ে যায়। দেশে উৎপাদিত ফুলের ৭০ ভাগ যোগান হয় এখান থেকে। ফুল চাষে কৃষকদের ব্যস্ততার শেষ নেই। কেউ ফুল কেটে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকেই ফুল যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। ফুলের ভরা মৌসুমে চাষিদের মুখে হাসির পাশাপাশি করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রনে চিন্তা পিছু ছাড়ছে না।

করোনায় টানা দুই বছরের মন্দাভাব কাটাতে গত কয়েক মাস ধরে পরিশ্রম করছেন ফুলচাষিরা। শফিকুল ইসলাম নামে এক চাষি জানান, প্রায় চার মাসের পরিচর্যায় বর্তমানে দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ, ১২ কাটা জমিতে জারবেরা ও দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলে ফুলে ভরে গেছে।

যশোরের ফুল চাষিদের অপেক্ষা পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস। এসব দিবসে ফুল বিক্রি করে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান চাষিরা। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে হঠাৎ ওমিক্রন চিন্তার ভাজ ফেলেছে তাদের কপালে। ইতোমধ্যে বিধিনিষেধে সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় কমছে ফুলের দাম। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিবসগুলোতে ফুল বিক্রি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন প্রায় সব চাষি।
পানিসারা এলাকার ফুল চাষি ইসমাইল জানান, গত দুই বছর করোনায় ফুল বিক্রি করতে না পেরে তিনি নিঃস্ব হওয়ার পথে ছিলেন। কেউ আবার ফুল ছেড়ে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেছে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করেন ফুলের চাষ। কিন্তু ৪ মাস পরিশ্রমের পর ফুলের ভরা মৌসুমে এসে নতুন ওমিক্রন বেচাকেনায় সংশয়ে ঠেলে দিয়েছে।

গদখালি বাজারে কৃষক ও স্থানীয় পাইকার ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বর্তমানে ফুলের বাজার খারাপ। লকডাউন না দিলেও করোনা আতঙ্কে ফুল বেচাকেনা কম। বর্তমানে প্রতি হাজার গাঁদা ফুলের দাম ২০০ টাকা। নতুন বছরের শুরুতে দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। চার থেকে ছয় টাকা দামের একেকটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২ টাকায়। প্রতিটি রজনীগন্ধা ৭ থেকে ১০ টাকার বদলে সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় ১৫ টাকার রঙিন গøাডিউলাস প্রতিটির দাম এখন ৬ থেকে ৯ টাকা। জারবেরা দামও প্রায় অর্ধেক নেমে হয়েছে ৮টাকা। ফুল বাঁধার জন্য কামিনীর পাতার আঁটি ৫০ থেকে ৬০ টাকার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। জিপসির আঁটি ৪৫ টাকা থেকে কমে এখন ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ফুলের ব্যবসা মূলত অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক। গত দুই বছর লকডাউনে ফুল বিক্রি করতে না পেরে নিঃস্ব হতে বসেছিল চাষিরা। কেউ আবার ফুলের চাষ ছেড়ে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেছিলেন। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় ঘরে দাঁড়াতে ঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করে ফুলের আবার ওমিক্রনে চোখে অন্ধকার দেখছেন।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ইনকিরাবকে জানান, চলতি বছর ঝিকরগাছার গদখালি-পানিসারা এলাকায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হবেন ফুল চাষিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওমিক্রন

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ