দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আরবী ভাষা আরবী অঞ্চলের ভাষা কথাটি যতটুকু সত্য ও বাস্তব নিরেখে তার চেয় বড় বাস্তবতা ও সত্য হলো আরবী মূলত কুরআনের ভাষা ও জান্নাতের ভাষা। আর কুরআন ও জান্নাত সকল মুমিনের জন্য, সুতরাং আরবী ভাষা পৃথিবীর সকল মুমিনের ভাষা। সহস্র ভাষার মধ্যে মৌলিক ভাষা হলো আরবী। কারণ আরবী জান্নাতের ভাষা। জান্নাত থেকে হযরত আদম (আ.) এ ভাষা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। এ ভাষা থেকে সহস্র ভাষার উৎপত্তি। আমাদের প্রথম ও মৌলিক পরিচয় হলো আমরা মুসলিম। মুসলিম হিসেবে আমাদের সর্বাগ্রের ভাষা হলো আরবী ভাষা। তাইতো এদেশের পরতে পরতে আরবী ভাষার উন্মেষও উচ্ছকিত। এ দেশের তিন লক্ষাধিক মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবেলা দলবদ্ধভাবে ও এককভাবে যে নামাজ পড়া হয় তার ভাষা আরবি। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, তিনি যে দল ও মতের হোন; নামাজের কারণে প্রতিদিন তাকে কম করে হলেও মোট আধা ঘণ্টা সময় নিবীড়ভাবে আরবি ভাষার সঙ্গে কাটাতে হয়। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে তাকে দশ মিনিট আরবিতে খুতবা শোনতে হয়। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী তাদের জন্মের পর মুহূর্তে সর্বপ্রথম যে শব্দ শোনে, যে বাক্যগুলো দিয়ে পৃথিবীর নতুন জীবনে তারা বরণীয় হয়, সমাদৃত হয়, অভিনন্দিত হয়- সেই আজানের ভাষাও আরবি। আবার পৃথিবী থেকে তাকে চিরবিদায় দেওয়া হয় আরবি ভাষায়। জানাজার নামাজ, লাশ কবরে রাখার দোয়া, কবর মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দোয়া সবই আরবিতে। আরবী আমাদের শুরু, আরবী আমাদের মধ্যখানে, আরবী আমাদের প্রণয়ে, আরবী আমাদের শেষ শয়নে। তবে কি আরবিকে শিক্ষায়, মুখে ও চর্চায় প্রাধান্য না দিয়ে অবিচার করছি না? একটি ভাষা ছাড়া আমরা অচল, কিন্তু তাকে তিন নাম্বার বাচ্চারমত দূরে সরিয়ে রেখেছি। এটি তার জন্য সুবিচার হলো না। এ সংকীর্ণতার গণ্ডি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে বাস্তবতার দিকে। আর তা হলো আরবী সাহজবোধ্য করে প্রতিটি মুসলিমের বুলি বানিয়ে দিতে হবে। ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। এটি করতে হবে ইসলামের স্বার্থে। কারণ ভাষা একটি জাতির স্স্কংৃতি, কৃষ্টি-কালচার, তাহযীব-তমাদ্দুন বহন করে। সুতরাং ভাষা বিস্তারের সাথে সে জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতারও বিস্তার ঘটে। বাস্তব নমুনা হলো, ইংরেজরা এদেশের মানুষকে ধরে ধরে তাদের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত করেনি। তারা এদেশের মানুষকে ইংরেজী ভাষা শিখিয়েছিল। আর তাদের ভাষার সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি তাদের সংস্কৃতি ও চাল-চলনের। এখন আমাদের সমাজে প্রত্যহিক অনুশীলন চলে ইংরেজদের কৃষ্টি কালচার। আরবী ভাষা দিবসের আমাদের অঙ্গিকার হোক সর্বত্র আমরা আরবী ছড়িয়ে দিবো, নিজে শিখবো ও অন্যকে শিখাবে এবং তার সহজ পথ ও পন্থা তৈরী করবো।
আরবী ভাষা দিবস পালনের পিছনের ঘটনা, সৌদি আরব ও মরক্কো সরকার উদ্যোগে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৫৪ সালে ৪র্থ ডিসেম্বর নবম অধিবেশনে ৮৭৮ নং প্রস্তাবে বছরে চার হাজার পৃষ্ঠা আরবিতে লিখিত অনুবাদ প্রকাশের বৈধতা প্রদান করে। সাথে শর্ত দিয়ে দেয় যে, অনুবাদের ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট দেশকে বহন করতে হবে। ১৯৬০ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনেস্কো’ আরব দেশগুলোতে আরবি ভাষায় সেমিনার ও জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা এবং নথিপ্রত ও প্রচারপত্র আরবিতে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশগুলোতে অন্য ভাষা থেকে আরবিতে এবং আরবি থেকে অন্য ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। এরপর ১৯৬৮ সালে অনুবাদের সাথে সাথে আরবি ভাষাকে ইউনেস্কোর সাধারণ সভা ও কর্ম পরিষদের কার্যকরি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরবতীতে সৌদি আরব ও মরক্কোর পাশাপাশি আরব বিশ্বের কূটনৈতিক চাপে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ সভায় ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিন্ধান্তে আরবিকে ষষ্ঠ দাপ্তরিক ভাষারূপে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ১৯০তম অধিবেশনে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালন করা হয়। তুলনামূলকভাবে বিদেশি ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি ভাষা অনেক সহজ। সামান্য উদ্যোগ নিলে মানুষের জন্য আরবি ভাষা শেখার সহজ পথ ও পন্থা বের করা সম্ভব। সুতরাং এবারের আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবসের দাবি হোক, শিক্ষার সর্বস্তরে আরবি ভাষার অন্তর্ভুক্তি।
লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা-১২১১
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।