বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
যশোরের কেশবপুর সদর ইউপি নির্বাচনে স্থগিত হওয়া নূতন মূলগ্রামের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চমধাপের ইউপি নির্বাচনে মূলগ্রাম কেন্দ্রটিতে নৌকার পক্ষে জোর করে প্রকাশ্যে এক হাজার ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে কেন্দ্রেটিতে ভোটগ্রহন স্থগিত করেন রির্টানিং কর্মকর্তা। এদিকে, ভোটকেন্দ্রেটিতে ফলাফল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীই কেউই শেষ বিজয়ের হাঁসি হাসতে পারেননি। উভয়ের মধ্যে ভোটের ব্যবধান মাত্র ৪৫৮। ফলাফল স্থগিত হয়ে যাওয়া কেন্দ্রে ভোটসংখ্যা ২ হাজার ১১৯। ফলে এ কেন্দ্রের ফলাফলের ওপর ঝুলে আছে এই দুই প্রার্থীর ভাগ্য।
সূত্রে জানাগেছে, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের ১১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকার প্রার্থী গৌতম রায় পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৭ ভোট। তার প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর আলা উদ্দীন আলা পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২৯ ভোট। এই ইউনিয়নের স্থগিত কেন্দ্রের ভোট সংখ্যা রয়েছে ২১১৯ ভোট। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৫৮ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। ভোট গ্রহনের দিন বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে নূতন মূলগ্রাম কেন্দ্রে ৫০ থেকে ৬০ জন যুবক হঠাৎ জোর করে কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের মারধর ও ইট ছুড়তে থাকেন। এ সময় বুথে ঢুকে দ্রুত ব্যালটে সিল মারতে থাকেন তারা। সাধারণ ভোটাররা ভয়ে এদিক সেদিক ছুটতে থাকেন। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস প্রায় এক হাজার ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় এ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেন। চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থীর ভাগ্য ঝুলে থাকার সাথে ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের দুই নারী ইউপি সদস্য পদেও ভাগ্য ঝুলে রয়েছে। সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডটিতে তালগাছ প্রতীকের রাশিদা বেগম পেয়েছেন ১ হাজার ৩৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলম প্রতীকের প্রার্থী রুবিনা বেগম পেয়েছেন ৭৪২ ভোট। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রটির ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ১১৯। সুষ্ঠু ভোট হলে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রাশিদা বেগম এগিয়ে থাকলেও নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী রুবিনা বেগমও জয়ী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। এছাড়া কেন্দ্রটিতে সাধারণ ইউপি সদস্য হিসাবে ৪ প্রার্থীর মধ্যেও পুনরায় ভোট গ্রহন হবে। লড়বেন মোরগ প্রতীকে দেবব্রত বাছার, ফুটবল প্রতীকে কামরুজ্জামান, টিউবওয়েল প্রতীকে বিল্লাল হোসাইন ও তালা প্রতীকে সিরাজুল ইসলাম। এ কেন্দ্রে ৭ ফ্রেবুয়ারি আবার ভোট নেওয়ার পর নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হবে।
এই বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, যশোরে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও কেশবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের নূতন মূলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহনের দিন বহিরাগতরা জোর পূর্বক নৌকার পক্ষে সিল মারেন। স্থগিত হওয়া ভোটকেন্দ্রটিতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্দেশনা পত্র যশোরে এসেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, পুণরায় ভোট গ্রহনের দিন ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে আবারও প্রচার-প্রচারনায় জম জমাট নূতন মূলগ্রামটিতে। বাকী ৩ জন প্রার্থীর পরাজয় বুঝতে পেরে তারা কেউ মাঠেই নেই। তবে নির্বাচনে ভাগ্য বদলাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমার্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী দুই জনেই প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত। তবে বিএনপি নেতা ও মোটর সাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলাউদ্দিন আলার অভিযোগ, ৫ জানুয়ারি ভোটেও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবাহিনী তার কর্মী সমর্থকদের হামলা ও নির্বাচন কাজে বাধাগ্রস্ত করেছিলেন। এবারও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যহত রেখেছে। ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রটিতে যদি ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন; তাহলে আমি বিজয়ী হবো। তাছাড়া স্থগিত হওয়া কেন্দ্রটিতে বহিরাগতরা প্রভাব বিস্তার করবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গৌতম রায় বলেন, মানুষ চাই পরিবর্তনের। আমার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই ইউনিয়নে বর্তমান সরকারের কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে পারেননি তিনি। তাই জনগন নৌকায় ভরসা রেখে আমাকে ভোট দিবে। যদিও আমি এখনো অনেক ভোটে এগিয়ে রয়েছি। মিথ্যা অভিযোগে কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহন স্থগিত রেখেছিলো নির্বাচন কর্মকর্তারা। এবার মানুষ আমাকে আবারোও ভোট দিয়ে চুড়ন্ত বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে কেশপুরের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকার প্রার্থী ৪ জন এবং ৬টিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আর একটি ইউনিয়নে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখেন নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।