বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দক্ষিণাঞ্চলের দেড় হাজার কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সংযোগ সড়কÑমহাসড়কে ফেরি ঘাটের সংখ্যা ৪০ থেকে ১৯টিতে নেমে আসায় সড়কপথে বিড়ম্বনা অনেকটা কমে আসলেও মানসম্মত ও যাত্রী বান্ধব যানবাহন চলাচলের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। এক সময়ে ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় ফেরি ঘাটে কাটে’ বলে প্রবাদটি এখন অনেকটাই অতীত। আগামী জুনের মধ্যে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে ‘৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ চালু হলে আরো একটি ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা বন্ধের পাশাপাশি চড়খালী ফেরি সেক্টরেও যানবাহন পারাপার প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এ অঞ্চলের সড়ক অধিদপ্তরের ফেরি পয়েন্ট অবশিষ্ট থাকবে ১৯টি।
কিন্তু এ অঞ্চলের প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ২৯০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ১ হাজার ২শ কিলোমিটার জেলা সংযোগ সড়কগুলোতে মানসম্মত গনপরিবহন সহ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনৈতিক কর্মকান্ড কবে বন্ধ হবে, তা এখনো সবার কাছেই অজ্ঞাত।
বরিশাল থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দুরে পটুয়াখালী জেলা সদর এবং ১০৮ কিলেমিটার দুরে কুয়াকাটায় পৌছতে এখনো যথাক্রমে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ও প্রায় ৪ পর্যন্ত সময় লাগছে। ইতোপূর্বে বাস মালিক ও শ্রমিকরা এ মহাসড়কে লাগামহীন বিলম্বের জন্য লেবুখালীতে ফেরি পারপারের বিড়ম্বনাকে দায়ী করে আসলেও গত ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এমনকি রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি পর্যন্ত বরিশলÑকুয়াকাটা সহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রুটে মানসম্মত ও বাতনুকুল বাস সার্ভিস সম্প্রসারনে কোন উদ্যোগ নেয়নি এখনো।
এমনকি আগামী জুনের মধ্যে বরিশালÑখুলনা মহাসড়কে বেকুঠিয়ায় সেতু চালুর পারেও দুটি বিভাগীয় সদরের মধ্যে যাত্রী বান্ধব ও মানসম্মত যাত্রী পরিবহন নিয়ে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির কোন মাথাব্যাথা নেই। সংস্থাটি আজ পার্যন্ত বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা এবং সেখান থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত কোন বাস সার্ভিস চালু করতে পারেনি।
দক্ষিণাঞ্চলে অনুমোদিত প্রায় ৪০টি রুটে গনপরিবহনের বাসগুলো যাত্রী বান্ধব নয় বলে অভিযোগের পাশাপাশি অনেকটা লোকাল বাসের মত মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পথে পথে বিলম্ব করে বলেও অভিযোগ যাত্রীদের। বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতি দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ রুটের গন পরিবহনকে পরিচালন ও নিয়ন্ত্রন করে আসছে। সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সড়ক ও নৌপথে বরিশালে পৌছে এখান থেকে বরিশালÑপটুয়াখালী মহাসড়ক ধরেই কুয়াকাটায় যাতায়াত করছে। এতদিনের লেবুখালীতে ফেরির বিড়ম্বনা না থাকলেও পটুয়াখালী ও কুয়াকাটাগামী গনপরিবহনে দ্রত ও সময়মত গন্তব্যে পৌছানর বিষয়টি পরিপূর্ণ নিশ্চিত হয়নি। উপরন্তু এঅঞ্চলের বেশীরভাগ বাস ও মিনিবাসই যাত্রী বান্ধব নয়।
অপরদিকে বরিশাল বাস মালিক সমিতি মহানগরী থেকে বানরীপাড়া, ছারছিনা, ভুরঘাটা, মীরগঞ্জ ছাড়াও মাদারীপুর ও মাওয়া’র কাঠালবাড়ি পর্যন্ত আঞ্চলিক রুট গুলোতে বাস পরিচালন ও নিয়ন্ত্রন করে আসছে। কিন্তু প্রায় সব রুটেই যেমনি মানসম্মত বাসের অভাব রয়েছে, তেমনি তা সম্পূর্ণ লোকাল গাড়ীর মত চলাচল করায় যাত্রীদের দূর্ভোগের কমতি নেই।
তবে এব্যাপারে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিকদের একাধীক নেতৃবৃন্দ নানা বানিজ্যিক সমস্যার কথা তুলে ধরে যত দ্রæত সম্ভব যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছান সহ যাত্রী বান্ধব বাস চালানোর কথা বলেছেন। পাশাপাশি পায়রা সেতুতে ফেরি ভাড়ার তিন থেকে পাঁচগুন টোল নির্ধারনের সাথে ডিজেলের দাম ২৩% বৃদ্ধিতে এঅঞ্চলের পরিবহন সেক্টরে চরম দূর্যোগের কথা বলে তাদের উদ্বেগের কথাও জানান। কোন কোন বাস মালিক বর্ধিত টোল প্রত্যাহার সম্ভব না হলে পুনরায় ফেরি সার্ভিস চালুরও দাবী জানিয়েছেন।
অন্যথায় বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১০৮ কিলোমিটার মহাসড়কে ৬টি সেতুর টোল পরিশোধ করে চলতে হলে যাত্রী ভাড়া আরো বৃদ্ধি করতে হবে বলেও জানান বাস মালিকগন। তাদের মতে পায়রা সেতুতে টোল হার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। যা যমুনা সেতুর পরের অবস্থানে নির্ধারন করা হয়েছে।
এদিকে সারা দেশের সাথে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ হলেও বিআরটিসি’র পক্ষ থেকে এ রুটে যাত্রী পরিবহন সম্প্রসারনের কোন পদক্ষেপ নেই। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারীতে বরিশালÑকুয়াকাটা রুটে ১টি ‘পর্যটক স্পেশাল বাস সার্ভিস’ চালু করে। অতি সম্প্রতি সকাল ৮টায় ১টি বাতনুকল বাস বরিশাল থেকে চালু করা হলেও তা সকাল ৭টায় চালানোর দাবী পর্যটক সহ সাধারন যাত্রীদের। পাশাপাশি বরিশাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাতানকুল বাস সার্ভিস চালুরও দাবী সাধারন যাত্রীদের।
তবে সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোতে বিদ্যমান মাত্র ১৪টি এসি বাসের ৯টি কাঠালবাড়ি রুটে চলাচল করছে। অপর ৬টির মধ্যে কুয়াকাটাÑকাঠালবাড়ী এবং কুয়াকাটাÑখুলনা রুটে দুটি করে এবং ভান্ডারিয়া থেকে কাঠালবাড়ি ও বরিশালÑকুয়াকাটা রুটে মাত্র ১টি করে বাস চলছে।
এ ব্যাপারে বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোর ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, সদর দপ্তরে আরো ৪টি এসি বাস-এর চাহিদা দেয়া হয়েছে। তবে গাড়ী সংকটে এসব বাসের বরাদ্ব পাওয়া যায়নি। নতুন এসি বাস পলে বরিশালÑকুয়াকাটা ও গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা-যশোর-বেনাপোল রুটে মানসম্মত বাস সার্ভিস সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহনের কথাও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।