পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভিসির পতনের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে আমরণ অনশন কর্মসূচি ৭ম দিনে গড়ালেও পদত্যাগ করছেন না ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ১৪৭ ঘণ্টা অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সব ক’জনকেই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ভিসি অনড় অবস্থায় তাই এবার অনশন ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ পাঠ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এ শপথ পাঠ করেন তারা। মূলত অনশনকারী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর উদ্দেশে এ শপথ পাঠ করা হয়। তবে অনশন ভাঙিয়ে পুনরায় ভিসি পতনের আন্দোলনে কঠিন আন্দোলনে থাকার কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শপথটি হলো- আমি শপথ করছি যে, স্বৈরাচারী ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায়ের লড়াই অব্যাহত রাখব, অনশনরত ভাইবোনদের এতদিনের অকুতোভয় সংগ্রামের অনুপ্রেরণা বুকে ধারণ করে আরো দ্বিগুণ শক্তি ও তেজে আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব, তাদের এই দুর্বিষহ যন্ত্রণা আমরা বৃথা যেতে দেব না, দিন হোক রাত হোক আমরা এই আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাব না। আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় করেই তবে ঘরে ফিরব।
অনশনস্থলের মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধ : আমরণ অনশন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন থেকে চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসা সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দলটি চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন। গত সোমবার গভীর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলনকারীরা এ তথ্য জানান। শিক্ষার্থীদের পক্ষে আরিফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তারা সবাই খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন। তারা অর্গান ড্যামেজের ঝুঁঁকিতে আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনশন দীর্ঘায়িত হলে যেকোনো মুহূর্তে হার্ট ফেইলিওরসহ কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন এই শিক্ষার্থীরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসেও মেডিকেল সাপোর্ট পাচ্ছেন না। যারা আগে চিকিৎসা সহায়তা দিতেন তারা আর আসছেন না। তাদের আমরা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসান, তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা যে টিমটি পাঠিয়েছিলাম, তাদের সবকজনেরই করোনার সবগুলো সিম্পটম দেখা দিয়েছে। তাই তারা সেখানে যেতে পারছে না।
সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী আটক : সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করে সিলেট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আটক শিক্ষার্থীদের পরিবার ও বন্ধুদের অভিযোগ, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শাবিপ্রবির চলমান আন্দোলনে কিছু অর্থ সহায়তা করায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আটককৃতরা হলেন, হাবিবুর রহমান খান, রেজা নূর মঈন, এ এফ এম নাজমুল সাকিব, এ কে এম মারুফ হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তারা (সিআইডি) রেজার গাড়ি ফেরত দিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। যারা বাসায় এসেছিল তাদের গাড়িতে সিআইডির স্টিকার লাগানো ছিল। সিআইডির এক সূত্র জানায়, অনেক সময় পুলিশের অন্যান্য ইউনিটগুলো সিআইডির সহায়তা চেয়ে থাকে। এটা আসলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান। সিআইডি কেবল তাদের সহায়তা করেছে।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, শাবির সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে অর্থের যোগানের অভিযোগে আটক করেছে ঢাকার অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আমরা তাদেরকে একটু আগে রিসিভ করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এখনো কোন মামলা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিলেট জালালাবাদ থানায় মামলা হবে।
শিক্ষার্থীদের মোট ছয়টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ : শিক্ষার্থীদের আর্থিক লেনদেনে বিকাশ, নগদ, রকেট ও ইস্টার্ন ব্যাংকের মোট ছয়টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, শাবিপ্রবির যেকোনো কর্মসূচিতে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা যৌথ উদ্যোগে তহবিল গঠন করে থাকেন। এ আন্দোলনেও সেভাবেই অর্থ সংগ্রহ চলছিল। তবে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে রকেট, নগদ, বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ মোট ছয়টি অ্যাকাউন্ট থেকে তারা কোনো লেনদেন করতে পারছেন না। এমনকি ওই নম্বরগুলোতে ফোন কল আসছে না এবং যাচ্ছেও না।
গতকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন সিলেট-২ আসনের (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) সংসদ সদস্য ও গণফোরামের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। এসময় তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা অনুযায়ী তাদের দাবি যৌক্তিক। এখানে কোনো ধরনের রাজনীতি আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী সব সমস্যা সমাধানে যেভাবে এগিয়ে আসেন। তিনি চাইলেই এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারেন। পরে সেখানে আধাঘণ্টা অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন।
শিক্ষকদের খাবার পৌছে দিল গার্ড : গতকাল দুপুরে ভিসির জন্য নিয়ে শিক্ষকদের খাবার পৌঁছে দিয়েছে নিরাপত্তা কর্মীরা (গার্ড)। ভিসির জন্য খাবার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষকরা খাবার নিয়ে ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাদেরকে ভেতরে যেতে দেওয়া দেয়নি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, ভিসি স্যার কয়দিন ধরে অসুস্থ। তাই আমারা খাবার নিয়ে তাকে দেখতে এসেছি। তবে শিক্ষার্থীরা আমাদের ভেতরে যেতে দিচ্ছে না। আমারা শিক্ষার্থীদের আবারো আলোচনার জন্য আহবান জানিয়েছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ভিসি অসুস্থ হলে তিনি মেডিকেলে যেতে পারেন। আমরা সহযোগিতা করবো, তবে খাবার নিয়ে কাউকে ভেতরে যেতে দিতে পারছি না। আমরা কোন অহিংসতার দিকে যেতে চাই না। তাই গার্ডদের মাধ্যমে আমরা খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা কোন আলোচনায় যেতে চাই না।
ভিসি ভবনে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ : আমরণ অনশনের ১০০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও ভিসি পদত্যাগ না করায় গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলনকারীরা। ফলে বিদ্যুতের অভাবে পানি ও নেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রায় ২৯ ঘণ্টা পর ভিসির বাসভবনে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টায়।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ জানান, ভিসির বাসভবনের পিছনে আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী থাকে। বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখলে তাদেরও দুর্ভোগ বাড়বে। তাই পুনরায় এই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় অনশন ভাঙাতে শপথ বাক্য পাঠের পূর্বে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুডকোর্ট, খাবারের দোকান বন্ধ ও আন্দোলনকারীদের রান্নার কাজের বাবুর্চিকে রান্না করতে না করে দেওয়ার অভিযোগ এনে রাজ বলেন, আমাদের সাথে এমন করলে আমরাও প্রয়োজন হলে আবার ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিব। তবে এবার এমনভাবে করা হবে যেন ভিসি বিদ্যুৎ না পেলেও কর্মচারীরা যেন পায়।
শিক্ষকের জন্য ফেনসিডিল আনতে গিয়ে নাইট গার্ড আটক : ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাজহারুল হাসান মজুমদারের নির্দেশে ওষুধ আনতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে ফেনসিডিলসহ জাহিদুর রহমান নামে এক যুবক আটক হয়েছে। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে ফেনসিডিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানব দেয়াল পাড় করে ঢুকার সময় তাদের হাতে ধরা খেয়ে জাহিদুর রহমান নামের সে গার্ড ডরমেটরিতে অবস্থান করা ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ করে বলে, ওনি অসুস্থ বলে আমাকে এক লোক থেকে একটি ওষুধ আনার জন্য পাঠায়। আমি ভার্সিটি গেইটে গেলে একজন লোক আমার হাতে এই ওষুধ দেয়,আমি তা নিয়ে আসি। এবিষয়ে জানার জন্য মাজহারুল হাসান মজুমদারকে ফোন দিয়ে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।