Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্নফাঁসে চরম বিপাকে মেধাবীরা

অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং কষ্টের : ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম সরিষার মধ্যেই যদি ভূত থাকে তাহলে ভূত সারাবে কে : ড. নুরুল আমিন বেপারি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের কথার মতোই সরকারি চাকুরী ‘সোনার হরিণ’। দিন দিন কঠিন হচ্ছে চাকরির বাজার। কোনো একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই দেখা যায় আবেদনের হিড়িক। করোনাভাইরাসের মহামারিতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল নিয়োগ পরীক্ষা। এই সময়ে অনেকের বয়সও নষ্ট হয়েছে। যদিও ব্যাকডেটে সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে, তবে যাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হয়নি এতে তাদের কোনো লাভই নেই। তাদের জীবন থেকে বলা যায়, প্রায় দুই বছর নষ্টই হয়ে গেছে। আর সে কারণেই যে যেভাবে পারছে চাকরি যোগাড়ে ব্যস্ত। বিশেষ করে সরকারি চাকরি।

সময়ের পালাক্রমে সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ সুবিধা অনেক বেড়েছে। মৃত্যু কিংবা চাকরি থেকে অবসরে গেলে সরকারি চাকরিজীবী কিংবা তার পরিবারও পান বেশ কিছু সুবিধা। তাই সবাই যেকোনো মূল্যে ‘সোনার হরিণ’ খ্যাত সরকারি চাকরি পেতে চান। আর এই চাকরি পেতে অসদুপায় অবলম্বনকারীর সংখ্যাও দিনের পর দিন ঊর্ধ্বমুখী। মেধায় না হলে ক্ষমতা, ক্ষমতা না থাকলে টাকা দিয়ে প্রশ্নফাঁস করে এই সোনার হরিণ জোগাড়ে উঠে পড়ে লেগেছে একটি মহল। আর যাদের এই টাকার জোর নেই সেই চাকরিপ্রত্যাশীরা মেধাবী হয়ে জন্ম নিয়ে যেন পাপ করেছেন। প্রশ্নফাঁসকারী চক্র আর ক্ষমতার দাপটে চরম বিপাকে মেধাবীরা। এ খাতের বিশ্লেষকরা এ বিষয়টিকে অস্বস্তিকর এবং কষ্টের বলে মনে করছেন। এছাড়া বৈধ সরকারই এ সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তারা।
প্রথম শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় এখন প্রশ্নফাঁস নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর জাতিকে বিপন্ন করার এই অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে যারা নিয়োজিত, ঘটনার পর প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি তদন্তাধীন বা গুজব বলেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। ফলে প্রশ্নফাঁসের মতো একটি জঘন্য অপরাধ করেও প্রতিনিয়ত পার পেয়ে যাচ্ছেন অপরাধীরা। অনেকেই ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে এসে আবারও একই ধরনের অপরাধের জড়িয়ে পড়ছেন। আর এ চক্রের রাঘববোয়ালরা একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই সংস্কৃতির কারণেই মূলত ঠেকানো যাচ্ছে না প্রশ্নফাঁস। আর প্রশ্নফাঁস বন্ধ না হওয়ায় দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের। ভালো পরীক্ষা দিয়েও মেধাতালিকায় নাম না আসা, সেশনজট বৃদ্ধি পাওয়া, বয়স শেষ হওয়ার হতাশা নিয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে একটি সরকারি চাকরির জন্য বছরের পর বছর প্রস্তুতি নেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নফাঁসের খপ্পরে পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশি। সাম্প্রতিক কিছু জরিপভিত্তিক গবেষণার তথ্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে। বিশেষ করে করোনাকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি। সে সময় সারাদেশে সমস্ত নিয়োগপ্রক্রিয়া ছিল বন্ধ। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, মূলত সম্পর্কের টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, পড়ালেখার চাপ ও আর্থিক অনটনের কারণেই আত্মবিধ্বংসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। চাকরিপ্রত্যাশী অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নফাঁস নিয়ে বিভিন্ন হতাশার চিত্র ফুঁটে উঠেছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অডিটর পদের নিয়োগ (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। অসদুপায় অবলম্বন করে কিছু চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে কাকরাইলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে গত শুক্রবার বিকেলে দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বিজি প্রেস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ও কাফরুলের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই মূল হোতা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন, মাহমুদুল হাসানসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ব্যাংকের চেক, সাতটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ১৮টি প্রবেশপত্র, নগদ ২ লাখ টাকা এবং ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়। মাহবুবা নাসরিনসহ চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার্থী সেজে কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করেন। পরীক্ষার হল থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন বাইরে পাঠানো হয়। বাইরে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রশ্ন দ্রুত সমাধান করে আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠান। এভাবেই প্রশ্নফাঁস করে এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করানো হয় চাকরি প্রার্থীদের। পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৬ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে দেন চক্রের সদস্যরা। এদিকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পরও এই পদের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গত রোববার এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক হাজার ২০৭ জন।
এর আগে সমাজসেবা অধিদফতরের সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) পদের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। এই পরীক্ষা গত ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে আগেরদিনই প্রশ্ন ফাঁস হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব হয়ে যায় প্রশ্ন। হুট করেই পরীক্ষার আগেরদিন নির্ধারিত সময়ের পরীক্ষা অনিবার্য করাণ দেখিয়ে বাতিল করে অধিদপ্তর। এতে করে বিপাকে পড়েন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে নিজ নিজ কেন্দ্রস্থলের আশপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় চলে আসেন। এসব চাকরিপ্রত্যাশীর অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিলেন। হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণে যাতায়াত ব্যয়ের পাশাপাশি পথে ঘাটে নানান ঝক্কিঝামেলার কথা জানিয়েছেন তারা। এক পরীক্ষার্থী জানান, প্রশ্নফাঁস চক্রের কেউ এখন পর্যন্ত ধরা পড়েছে কি না তা এখনও চোখে পড়েনি। দায়টা আসলে কার? হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর এই ভোগান্তির দায় নেবে কে? কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার দায় কেন চাকরিপ্রার্থীরা বহন করবে?
এর আগে গতবছর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন পাঁচটি ব্যাংকের ১ হাজার ৫১১টি ‘অফিসার ক্যাশ’ শুন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ১৮৩টি, জনতা ব্যাংকে ৫১৬টি, অগ্রণী ব্যাংকে ৫০০টি, রূপালী ব্যাংকে ৫টি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৭টি পদ রয়েছে। সেদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পুরো পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি। পরীক্ষা চলাকালীন চিরাচরিত নিয়মে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানায়। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এই পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত চক্রটি। পরে এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখির পর ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই চক্রটি শুধু এই পরীক্ষাতেই নয়, এর আগেও বহু চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করেছে বলে গ্রেফতারের পর স্বীকার করেছে। পরে কমিটি আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তালিকাভুক্ত করে।
অথচ সেদিন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে পৌঁছান। বরিশাল থেকে চাকরিপ্রত্যাশী রুবেলের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত কষ্ট করে, অর্থ ব্যয় করে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিয়ে যখন জানতে পারলাম যে প্রশ্নফাঁস হয়েছে তখন আমার মানসিক অবস্থার কথা একবার চিন্তা করুন। যে ছেলেটা একবুক স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তার স্বপ্ন ভাঙা মুখের দিকে একবার তাকান। এই দুর্দশা শুধু বরিশালের রুবেলেরই নয়। বরং সারাদেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীদের। উল্লেখ্য, সেদিনের পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন চাকরিপ্রত্যাশী। অথচ লাখো চাকরিপ্রত্যাশীর স্বপ্ন নিয়ে যারা খেলা খেলল তারেদর পরিণতি কী হচ্ছে, সেটি জানার সুযোগ এখনো হয়নি! শুধু জানা গেছে এই প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর নিখিল রঞ্জন ধরকে বিভাগীয় প্রধান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াও বহুল প্রতীক্ষিত খাদ্য অধিদফতরের নিয়োগ পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁস, কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, অনেক পরীক্ষার্থীকে হলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মোটা অংকের টাকার লেনদেনেরও অভিযোগ ওঠে। তবে কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও চাকরি পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছে। তবুও কাজ হয়নি। এই পরীক্ষা দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের দাপটও ছিল বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।
সময়ের সঙ্গে কৌশল পাল্টাচ্ছে প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা। জানা গেছে, আগে পরীক্ষা চলাকালে ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর দিত একটি চক্র। এখন প্রশ্ন তৈরিতে যারা যুক্ত, তাদের মাধ্যমে ফাঁস করা হচ্ছে প্রশ্ন। প্রার্থীদের প্রশ্ন না দিয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে মুখস্থ করানো হচ্ছে উত্তর। পরামর্শ দেওয়া হয় শতভাগ প্রশ্নের উত্তর না দিতে। পরীক্ষার হলে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বন্ধের পর কৌশলেও পরিবর্তন আনে প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা। শুরু হয়, প্রশ্ন প্রণয়নে যুক্তদের হাত করার প্রক্রিয়া। চাকরিপ্রত্যাশীদের হাতে প্রশ্ন না দিয়ে পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে নির্দিষ্ট স্থানে একত্র করে মুখস্থ করানো হয় উত্তর। সন্দেহ এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয় শতভাগ প্রশ্নের উত্তর না দিতে।
এক সময়ে দেশের মেধাবীরা বিশ্বাস করতেন নকল করে পরীক্ষায় পাস করলেও ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বা চাকরির বাজারে প্রবেশ করা যাবে না। সেজন্য অবশ্যই দিতে হবে মেধার প্রমান। তবে বর্তমানে তাদের সেই বিশ্বাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালু হয়েছে চাকরি আর ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের এক ভয়াবহ সংস্কৃতি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বেপারি মনে করেন দেশে জবাবদিহিতামূলক সরকার না থাকায় এ সমস্যা বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে দেখছি প্রশ্নফাঁস সবচেয়ে বেশি বেড়ে গেছে। আমি কোন সরকারের প্রশংসা করছি না, আবার দুর্নামও করছি না। বিএনপির আমলে পরীক্ষার হলে প্রশ্নফাঁসটা কম ছিল। কিন্তু এই সরকার আসার পরে বিশেষকরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে। একটা সরকার যদি জবাবদিহিতামূলক প্রক্রিয়ার মধ্যে না থাকে, তার যদি বৈধতা না থাকে, তাহলে কিন্তু সঙ্কট প্রকটরূপে ধারণ করে। অনির্বাচিত সরকার হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও কর্মচারিরা সরকারকে ভয় পাচ্ছেনা। যার ফলে যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তারা কিন্তু বেশিরভাগই সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত। সরিষার মধ্যেই যদি ভূত থাকে, তাহলে ভূত সারাবে কে? যেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেখানেই দেখি উৎসাহ দেয়া হচ্ছে এবং প্রতিকার করা হচ্ছে না। যার ফলে এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, সমস্যা যখন থাকে, তার সমাধানও থাকে। সমাধান আমি বলবো, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যখন পঁচন ধরেছে, সেই পঁচনটাকে যদি আমরা থামাতে না পারি তাহলে কিন্তু সমাজের অন্যান্য জায়গায়ও পঁচনটা থামানো যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমি খুব একটা যে ভেবেছি তা না। অনেকে এ নিয়ে ভাবেন কথা বলেন। আমি এটা বুঝিই না, কি করে বারবার এমনটা হয়। কি ধরনের সাবধানতা নেয়া উচিত। এটা নিয়ে যারা একটু এক্সপার্ট, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে আরও সিরিয়াসলি বসা দরকার। তাছাড়া এটা বন্ধ করতেই হবে, এরকম একটা তাগিদ না থাকলেতো হবে না। এবং তার জন্য যে ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরকে ঠিকমতো কাজ করতেই হবে। এটা বিশেষজ্ঞ মহলে আরও চিন্তাভাবনা দরকার এবচং খুব গুরুত্বের সাথেই নেয়া উচিত। অনেকে যারা সত্যিকারের পরীক্ষা দেয়, তাদের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং কষ্টের। সবদিকেই সময়মতো এবং নিরাপত্তার মধ্যে এই পরীক্ষাগুলো হওয়া উচিত এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে-এটাতো একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিভাবে বন্ধ করা যায়, এনিয়ে বারবারতো চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আরও বেশি উদ্যোগ নেয়া উচিত। আরও কঠিনভাবে এটা দেখা উচিত।
এছাড়া প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে যারা সরকারের বড় বড় পদে আসীন হবেন তাদের কাছ থেকে জাতি কী আসা করতে পারে তা নিয়ে আতঙ্কিত শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, যাদের চাকরির জীবনটাই শুরু হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করবেন কীভাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এটা নিয়ে সরকারের ওপর মহলের ভাবা দরকার। নয়তো এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশটির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশ্নফাঁস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ