পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতীতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আসলে প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যেতে। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ১২ মাসই প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কারণ এখন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে কৌশলও পাল্টাচ্ছে ওই চক্রের সদস্যরা। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালে ডিভাইসের মাধ্যমেও উত্তর দিচ্ছে চক্র। আবার কখনো কখনো প্রশ্ন তৈরিতে যারা যুক্ত, তাদের মাধ্যমে ফাঁস করা হচ্ছে প্রশ্ন। প্রার্থীদের প্রশ্ন না দিয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে মুখস্থ করানো হচ্ছে উত্তর। পরামর্শ দেওয়া হয় শতভাগ প্রশ্নের উত্তর না দিতে। আর ওইসব চক্রের সাথে জতিড় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিও প্রশ্নফাঁস চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইল এলাকায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ওই চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য। তাদের মধ্যে একজন মাহবুবা নাসরিন রুপা। তিনি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী। তিনি ইডেন মহিলা কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। একই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রুপার সাথে গ্রেফতার হয়েছেন মাহমুদুল হাসান আজাদ নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে (সিজিএ) অডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১৯ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, বগুড়া ব্য্যুরো জানায়, প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় মাহবুবা নাসরীন রুপাকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। গতকাল রোববার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদের ঢাকায় সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবা নাসরীন রুপার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তার এ কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ কারনে তাকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে। চক্রের সদস্যরা ইতোপূর্বে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে ও নগদে হাতিয়ে নিয়েছে।
গত ১০ নভেম্বর প্রশ্নফাঁস চক্রের আরো পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনেশিয়ান প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁসের মূলহোতা মোক্তারুজ্জামান রয়েল। এছাড়া আরো তিনজন বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত ৬ নভেম্বর বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পাঁচটি ব্যাংকের ১ হাজার ৫১১টি অফিসার ক্যাশ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। ওইদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পুরো পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির। তাই ওই বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রশ্নফাঁস করতো ওই চক্রের সদস্যরা। পরীক্ষার আগে চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলানগর, পল্লবী এলাকায় বুথ বসাতো। যেখানে পরীক্ষার ৫-৬ ঘণ্টা আগে নিজস্ব লোকের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের ফাঁস করা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মুখস্থ করানো করাতো। চক্রের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক বুথে ২০-৩০ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করিয়ে কেন্দ্রে পাঠানো হতো।
পরবর্তীতে ওই চক্রের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্তে বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নিখিল রঞ্জন ধরের নাম আসে। এরপর বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পাশাপাশি তাকে কোনো পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের আরেকটি ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া দুই ব্যাংক কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক এক কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে গত বছর ছয় কোটি টাকা পায় সিআইডি।
এরও আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। জালিয়াতির মাস্টার মাইন্ড ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিনজন এবং জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া ১২ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত বছর ছাত্রলীগের ২১ নেতা-কর্মীসহ ১২৫ জনের বিচার শুরু হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করে ওই চক্রের সদস্যরা। পরে উপস্থিতি ও স্বাক্ষর গ্রহণকালে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের ছবি তুলে দ্রুত তা বাইরে পাঠিয়ে দেন চক্রের সদস্যরা। এই কাজ করতে চক্রের সদস্যরা মাত্র দুই মিনিট সময় নেন। বাইরে থেকে প্রশ্নের সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের ডিভাইসে উত্তর পাঠান চক্রের অন্য সদস্যরা। সেই উত্তর দেখে পরীক্ষা দেন চাকরিপ্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে, সেটা মহাহিসাব নিরীক্ষকের মহাপরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নফাঁস চক্রের নেটওয়ার্ক গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। শুধু তাই নয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য চীন থেকে বিশেষ ধরনের ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ সংগ্রহ করে ওই চক্রের সদস্যরা।
ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা তা সংশ্লিষ্ট দফতরই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সম্প্রতি একটি নিয়োগ পরীক্ষায় ১৮ শিক্ষার্থীর ওই চক্রের সদস্যদের চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে ৯ শিক্ষার্থীদের ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।