Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর কেজি ৩ টাকা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৩৪ পিএম

দেশে আলু উৎপাদনে ঠাকুরগাঁওয়ের অবস্থান দ্বিতীয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয় এখানকার আলু। কিন্তু এবার আগাম আলুর চাষ করে দাম না পেয়ে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। পাইকারি দরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা দরে। তবুও ক্রেতা পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীসহ দেশের অন্য জেলার চাহিদার উপর ভিত্তি করে ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রনোলা সাদা জাতের আলুর আবাদ বেশি হয়। এছাড়াও এস্টারিক্স জাতের লাল আলুও বাজারে উঠেছে। স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও স্বল্প উৎপাদনের কারণে এস্টারিক্স আলু ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সাদা আলুর স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম থাকায় তা জেলার বাহিরে পাঠানো হয়। তবে এ বছর সেই আলুর কেজি ৩ টাকা। বাজারেও নেই ক্রেতা।

জানা গেছে, গত বছর চাষীরা আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে। তবে এবারে সেই আলু কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা। উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা বরং আলু বাজারজাতের খরচ উঠাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত বছর জেলাতে ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। এবারে জেলার ৫টি উপজেলায় ২৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির আলু কর্তন করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন। হিসেব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৪৫-৪৮ মণ। যা গতবারের তুলনায় সমান বলা চলে।
কৃষি বিভাগ জানায়, বর্তমান বাজার দরে চাষীরা প্রতি বিঘায় আলুর দাম পাচ্ছেন ৯-১০ হাজার টাকা। ঠাকুরগাঁওয়ে, গ্যানুলা, ডায়মন্ড, রোমানা, স্টীকসহ আরও বেশ কয়েকটি জাতের আলু চাষ করে থাকেন চাষীরা। গত বছরের কিছু আলু মজুদ থাকায় এবার দাম কম। পুরোনো আলু শেষে হলেই নতুন আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
আলুর বর্তমান বাজার দর নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার ভেলাজানের কৃষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল। সে কারণে ভালো লাভ হয়েছে। এবার লাভ বা আসলতো দূরে থাক আলু উঠাতেই ভয় করছে। এবার অনেক বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হলো।’
আকচা এলাকার আলু চাষি সোহেল রানা বলেন, ‘সাড়ে পাঁচ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। প্রথম দিকে কিছু আলু ৬টাকা দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ৩টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। এরপরও ক্রেতা নেই। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার আলু চাষি শাহজাহান আলী বলেন, ‘প্রথমবার ৪০ একর জমিতে আলু রোপণ করি। কিন্তু সে সময় বৃষ্টি হয়। ফলে বীজ আলু মাটিতেই পচে যায়। পরে সেই জমিতে আবারও আলু রোপণ করি। আলুর ফলন ভালো হয়েছে। খুশি ছিলাম। প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা ৬ টাকা কেজি বললেও বিক্রি করিনি। কিন্তু এখন বাজার দর ৩ টাকা। মহা বিপদে আছি।’

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের ভোপলা গ্রামের কৃষক মিঠুন বাবু বলেন, ‘এবারের আলুর যা দাম তা হিসেব করলে দেখা যায় বিঘায় আমাদের আলু উৎপাদন করতে খরচ হয় ২১-২২ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা আলুর দাম পাচ্ছি গড়ে ৯-১০ হাজার টাকা। কিভাবে আমি সংসার চালাবো তা বুঝতে পারছিনা।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘গত বছরের আলুর বাড়তি মজুত শেষে হলে বাজার ঠিক হবে। চাষ করা আলু এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। চাষিদের যে কোনো পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ