পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ এর খসড়া উত্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এর আগে গঠিত সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে এ বিলে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গতকাল সংসদে আইনটি উত্থাপন করেন। পরে বিলটি ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলটির উঠানোর জন্য আইনমন্ত্রী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ খসড়া আইনটিকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করেন। যদিও হারুনের আপত্তি সংসদের ভোটে টিকেনি। হারুনের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অন্যকিছু না পেয়ে উনারা এইটা নাই, ওইটা নাই বলে নাচ-গান শুরু করেছেন’।
বিগত ২০১২ এবং ২০১৭ সালে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রেসিডেন্ট ইসি নিয়োগ করেছিলেন, সে প্রক্রিয়াই আইনের অধীনে আনা হচ্ছে- এ বিলের মাধ্যমে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রস্তাবিত এই আইনে।
বিলটি সংসদে উঠানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির দলীয় এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, যে বিলটি আইনমন্ত্রী এনেছেন, তাতে জনগণের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলোর এবং সুশীল সমাজের যে প্রত্যাশা, তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য একটি আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। আজকে আইনমন্ত্রী যে বিলটি উত্থাপন করেছেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলা হয়েছে- ‘যাহা লাউ তাহা-ই কদু’। অর্থাৎ এতে সার্চ কমিটিকেই আইনের মোড়কে আনা হয়েছে মাত্র।
এমপি হারুন বলেন, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বলতে চাই- সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিগত যে দুটি নির্বাচন কমিশন, রকিব ও হুদা কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এত প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৬ সালে বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। ১৯৯৫-৯৬ সালে দীর্ঘ ১৭২ দিন হরতালের মধ্যদিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী সেই সময় দাবি করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবেন না। বর্তমান সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়াদ শেষ হবে। উনাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস ও দুর্নীতির যে অভিযোগ রয়েছে- তার জন্য উনাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, আজকে যে আইনটি তোলা হয়েছে, তাতে ধরে নিতে পারি ইতোপূর্বে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুটি কমিশনকে বৈধতা দেয়ার জন্য আনা হয়েছে। এখানে নতুনত্ব কিছু নেই। ইতোপূর্বে যে কমিশন গঠিত হয়েছে তার অনুরূপ বিল এখানে তোলা হয়েছে।
সার্চ কমিটির সদস্যদের তথ্য তুলে ধরে বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, এ আইনটি প্রশ্নবিদ্ধ। এ আইন দিয়ে বর্তমান সঙ্কটের নিরসন হবে না। সঙ্কট থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না। আমি দাবি করব- আইনটি প্রত্যাহার করুন। আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, এরকম একটি আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের সাথে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এই কথা বলার পর তিনি কী করে এই আইনটি আনেন। হারুন তার বক্তব্যের সময় সংসদে উত্থাপিত বিল এবং সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ থেকে পড়ে শোনান।
এর জবাব দিতে উঠে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা পড়ে ব্যাখ্যা করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, উনাদের ইতিহাস বলতে হয়। নিজেরা নিজেরা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যতরকম কারসাজি- বিচারপতি আজিজ সাহেবকে দিয়ে কমিশন গঠন, ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি, একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিচারকদের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করেছিলেন। এটা উনারা কার সঙ্গে আলোচনা করে করেছিলেন? উনারা এখানে বসে নিজেরা-নিজেরা করে ফেলেছিলেন। উনারা কারও সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেননি। কারচুপি করে ক্ষমতায় আসার জন্য উনারা নিরবচ্ছিন্ন ইলেকশন করতে চেয়েছিলেন। মানে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসার জন্য।
এ আইন করার উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বিলে বলেছেন, প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়। বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ইতোপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তাদের সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হইবে এবং এ বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
কী হবে সার্চ কমিটির কাজ
খসড়া আইনে সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করবে। এ অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটির গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ প্রেসিডেন্টের কাছে দেওয়ার কথা খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে। বিলে বলা আছে সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
কারা থাকবেন সার্চ কমিটিতে
বিলে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন- প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে বলে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা
প্রস্তাবিত আইনে সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আদালত অপ্রকৃতিস্ত ঘোষণা করলে, দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে, আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।
অনুগত ইসি গঠনে সংসদে বিল উত্থাপন হয়েছে : অনুগত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতেই সরকার জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংসদে নির্বাচন কমিশন বিল উত্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিলে অতীতের সব সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজকে দায়মুক্তির প্রস্তাব অনৈতিক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। বিতর্কিত বিল প্রত্যাহার করে সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিন, নিজেদের সদিচ্ছা প্রমাণ করুন। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, হুদা কমিশন ও রকিব কমিশনের মতো অকার্যকর, অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের দুর্বুদ্ধি থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী উত্থাপিত এ বিলে বস্তুত সরকারের পছন্দের সার্চ কমিটিকে আইনি পোশাক পরানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’-এর মতোই। প্রস্তাবিত বিলে এর আগে গঠিত সার্চ কমিটি ও এর মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন ও তাদের যাবতীয় অন্যায় ও অবৈধ তৎপরতাকে যেভাবে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা অস্বাভাবিক, অনৈতিক ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। এই বিল পাস হলে সংক্ষুব্ধ মানুষ তাদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে যেতে পারবে না।
সাইফুল হক বলেন, গোটা সংকটটি রাজনৈতিক। সে কারণে সরকারকে রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে মতৈক্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন কমিশন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারসহ সামগ্রিক বিষয়ে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।