Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীত-বৃষ্টি-করোনা উপেক্ষা করে খুলনায় জীবনযুদ্ধে নিম্ন আয়ের মানুষেরা

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৪২ পিএম

মাঘের কনকনে শীত, সাথে তির-চার দিন ধরে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। অন্যদিকে মহামারীর করোনার থাবা। এর মাঝেও থেমে নেই খুলনার নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিদিনকার জীবনযুদ্ধ। বৈরি আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোরে তারা বের হচ্ছেন জীবিকার সন্ধানে। শীত-বৃষ্টি উপেক্ষা করা যায়, করোনাকেও অবহেলা করা যায় কিন্তু জঠর জ্বালা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই তাদের। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের অন্ন সংস্থানের জন্য ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঘর হতে বের হতেই হচ্ছে।
আজ রোববার দুপুরে খুলনার আলমনগর মোড় এলাকায় দেখা গেছে, যান্ত্রিক মেশিনে ইট ভাঙ্গছেন ৫-৬ জন শ্রমিক। সারাদিন ইট ভেঙ্গে একেক জন পাবেন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। চুক্তিতে কাজ করছেন তারা। তাদের মুখে মাস্ক নেই। টিকাও নেননি তারা এ পর্যন্ত। প্রত্যেকেই পরিবার নিয়ে নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে থাকেন। তাদের সরদার ইসমাইল হোসেন জানালেন, একদিন কাজ না করলে, না খেয়ে ঘরে বসে থাকতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার ওঠে না। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও বাধ্য হয়ে কাজে নামতে হয়। তার সাথে আরো ৬ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের কেউই করোনার টিকা নেননি বলে জানান। কাজের সময় মাস্ক ব্যবহারে সমস্যা হয় বলে মাস্ক নেই তাদের মুখে। তবে এ পর্যন্ত তাদের কারো করোনা হয়নি বলে তারা দাবি করেন।
নগরীর মুজগুন্নি এলাকায় নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনে কাজ করছেন জেলার পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন। প্রায় দু’ মাস টানা কাজ করছেন। মজুরী ভালই, দিনে ৫শ’ টাকা। সারা মাসে তার ৫ হাজার টাকা মত খরচ হয়, বাকী টাকা গ্রামে পরিবারের কাছে পাঠান। তিনি বললেন, আমরা গরীব মানুষ, পরিশ্রম করে খাই, করোনা বড়লোকদের অসুখ, আমাদের হবে না। এসময় তার সাথে থাকা রাজমিস্ত্রী হুমায়ুন জানালেন, তিনি করোনার এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। আরেক ডোজ নেবেন। করোনা নিয়ে তার ভয় নেই। তার ভয়, করোনার কারণে যদি এই বাড়ির কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তাকে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হতে পারে।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে নিরালা’র মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন ষাটোর্ধ হেমায়েত ফকির। তিনি বললেন, আগে ব্যাটারীর রিকশা চালাতাম, কোনো পরিশ্রম ছিল না। এখন রাস্তাঘাটে পুলিশ আটকায়, তাই পায়ে চালিত রিকশা চালাতে হচ্ছে। এতে খুব কষ্ট। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা, সাথে কিছুটা বৃষ্টি। যাত্রীও কম। দুপুর ২ টা বাজে। মাত্র দেড়শ’ টাকা আয় হয়েছে। একটি এনজিও থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে তাকে প্রতিদিন সুদসহ দুই শ’ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তিনি উৎকন্ঠায় রয়েছেন, করোনায় যদি লকডাউন আসে, তাহলে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। নিজের তিনটি ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাওয়ায় এই বয়সে তাকে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই পথে রোজগারের জন্য নামতে হয় বলে জানান তিনি।
একই চিত্র দেখে গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে। তাদের সবারই অভিযোগ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এতো বেড়েছে, সারাদিন পরিশ্রম করেও উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কাছে খারাপ আবহাওয়া বা করোনা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় না, দু মুঠো খেয়ে পড়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকাটাই আসল কথা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ