Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বোরো আবাদ অনিশ্চিত

ভবদহের ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পানিবদ্ধতা

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

যশোরের দুঃখ ভবদহ! ভবদহ অঞ্চলের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও ডুমুরিয়া উপজেলার ৫২টি গ্রামে স্থায়ী পানিবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ২১টি বিলের বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
অভয়নগর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরিপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, গত বছর ভবদহ অঞ্চলে মাত্র ১২৫১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়নি। এবার পানি সেচের মাধ্যমে সকল জমিতে চাষ করা সম্ভাব হবে। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলাতে ১২ হাজার একশ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হবে বলে দাবি করেন তিনি।
তীব্র শীত হলেও এখনো বীজতলা তৈরি করার মত জমি প্রস্তুত করতে পারেনি কৃষকরা। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বোরো মৌসুমে ২১ বিলের প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে না বলে জনমনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত কিছু জমিতে বোরো চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জানা যায়- সুন্দলী ইউনিয়নের ১৪২২ হেক্টর ফসলি জমি আছে। তবে কিছু জমিতে সেচের ব্যবস্থা করলেও এখন আবাদ শুরু করতে পারেনি কৃষক। ফলে আবাদ শুরু হওয়ার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রায় ১৩২২ হেক্টর জমিতে।
মণিরামপুর উপজেলার মুক্তেশ্বরী তার গতি হারিয়ে, টেকা, শ্রীনদীর নাব্য হারিয়ে তলদেশ উঁচু হয়ে, ফলে দ্রুত পানি সরার কোন সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না।
ভবদহ সংলগ্ন অভয়নগর, মনিরামপুর উপজেলার বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, আড়পাতা, ঝিকরের বীল, ডুমরবীল, বাড়েদা, কাচোরাবাদ, বলারাবাদ, ডুমুরতলা, চলশিয়া বিল, পায়রা, পাচাকড়ি, কপালীয়াসহ ছোট বড় সকল বিলে এখনো পানিতে নিমজ্জিত। এমনকি এখন ঘেরের বেড়ির ওপর পানি।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, চলতি বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে ডিসেম্বর থেকে। আর তা চলবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এবার বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি।
ভুক্তভোগী চাষি জানান, বর্তমান বিদ্যুৎ, ডিজেল, সারের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে করে লোকসানের ভার মাথায় নিয়ে বোরো আবাদ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া পানিবদ্ধতার কারণে এবার কুচলিয়া, পাঁচকাটিয়া, কুমারসিমা, ভুলবাড়িয়া মাঠে বোরো আবাদ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
এ জনপদের কৃষকরা বছরে একটি মাত্র ফসল ঘরে তুলতে পারলেও অভিশপ্ত ভবদহের পানিবদ্ধতায় তাও সম্ভব হচ্ছেনা বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় লোকজন।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, প্রতিবছর ভবদহ এলাকার বিলসমূহ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্যে সরকার লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ করছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা ও স্থানীয় এক শ্রেণির দালালের যোগসাজসে তার সিংহভাগই নিজেদের পকেটে ভরছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হোসেন জানান, উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের রিপোর্ট মোতাবেক পানিবদ্ধতার কারণে ভবদহ এলাকায় এবার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে কিছু ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় আবাদের জন্যে সেচের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এক একটি ছোট ছোট বিলকে বাঁধ দিয়ে সেচের আওতায় আনছে। তবে কোন অবস্থাতে পানি কমাতে পারছে না। কারণ জানতে চাইলে বলেন চারি দিক এত এত পানির চাপ, নিমিশেই পানি আবার প্রবেশ করছে সেচ দেয়া মাঠের মধ্যে।
এ দিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বিঘা প্রতি। সে টাকাতো কোন অবস্থাতে সেচ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনমনে বিরাজ করছে চরম হতাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ