Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশে ২ কোটি ৯ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষে মাঠে মাঠে কৃষকরা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫২ পিএম

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি আর বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলা সহ সারা দেশে ২ কোটি সাড়ে ৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষে বোরো ধানের আবাদে কৃষি যোদ্ধাগন এখন মাঠে। আমন ও আউশের লক্ষ্য অর্জনের পরে এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় সোয়া ৩ লাখ হেক্টর সহ সারা দেশে প্রায় ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ভাটি এলাকা বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার প্রায় ১৮ ভাগ জমিতে এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলার প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে ইতোমধ্যে অগ্রহায়ণের অকাল বর্ষণের পরে পৌষ-মাঘের হাড় কাঁপানো শীতের ‘কোল্ড ইনজিুরী’তে বোরো বীজতলার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু এসব ছাপিয়ে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠে মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন সকাল-সন্ধ্যা বোরো বীজ উত্তোলন থেকে বপন সহ সেচ ও সার প্রয়োগে ব্যস্ত।

এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সার ও ডিজেল সংকট নেই। কিন্তু এখনো দেশের মোট আবাদকৃত বোরো জমির ৮০ ভাগেরও বেশী এলাকাতে ডিজেল চালিত পাম্পে সেচ দেয়া হলেও সরকারী ভর্তুকি রয়েছে ২০ ভাগেরও কম বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রে। ফলে বোরো আবাদে বেশীরভাগ কৃষকই সরকারী কোন ধরনের প্রণোদনা পাচ্ছে না।

বোরো ধান ইতোমধ্যে দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান করে নিলেও দক্ষিণাঞ্চলে এখনো আমন প্রথম স্থানেই রয়েছে। এরপরেও প্রতি বছর দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন হচ্ছে। গত বছর রবি মৌসুমে দেশের প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মত ২ কোটি ৮ লাখ টনেরও বেশী বোরো চাল উৎপাদন হয় বলে কৃষি মন্ত্রী দাবী করেছেন। চলতি বছরে দেশে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪৮.৭৩ লাখ হেক্টরর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৭ হেক্টর এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় আরো প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। সারা দেশে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলাতেই প্রায় ১৫ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির রয়েছে।

তবে গত বছর রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও এবার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি সহ একের পর এক বৈরী আবহাওয়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ ধানের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। অগ্রহায়ণের শেষে অকাল বর্ষণ যেমনি বোরো বীজতলাকে প্লাবিত করে, তেমনি কয়েক দিনের ব্যবধানেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় ৫ডিগ্রী নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক জমির বীজতলাই ‘কোল্ড ইনজুরীর’র শিকার হয়। গত দুদিন ধরেও ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের বীজতলা সহ রোপা বোরো’র জমি ঝুঁকির কবলে রয়েছে।

বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সাথে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবার ইরি-বোরা আবাদকে যথেষ্ট ব্যাহত করার শংকার কথা বলেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার যে সাড়ে ১০লাখ কৃষক ইরি-বোরোর আবাদ করে থাকেন, তার সেচকাজে প্রায় ৬৫ হাজার পাওয়ার পাম্প ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যারমধ্যে মাত্র ৬ হাজারের মত বিদ্যুৎ চালিত। অবশিষ্ট প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশী পাম্প ডিজেল চালিত বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিগত দিনের একটি পরিসংখ্যানে জানা গেছে।

এমনকি নদী-নালা ও খাল-বিলের দেশ হওয়া সত্বেও সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশেই এখনো সেচ ব্যায় সর্বাধিক, ২৮-৩০%। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারতের মরুময় এলাকা পাঞ্জাবে সেচ ব্যায় মোট উৎপাদন ব্যয়ের মাত্র ১৩%। যা থাইল্যান্ডে ৮% ও ভিয়েতনামে মাত্র ৬% । উপরন্তু এবার ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশে সেচ ব্যায় আরো বেড়ে যাবার আশংকা কৃষিবীদদের।
অথচ মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে ২০০৩-এর ৪ মে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও ডিজেলের ওপর ভতর্’কি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও ডিজেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। সর্বপ্রথম ২০০৭-০৮ সালে ডিজেল নির্ভর সেচ কাজের জন্য শতাংশ প্রতি নগদ আড়াইশ টাকা করে ভতর্’কি প্রদান করা হলেও পরের বছর তা বন্ধ রাখা হয়। পুনরায় ২০০৯-১০ সেচ মওসুমে সেচ কাজে ব্যবহৃত ডিজেলের ওপর ভতর্’কি প্রদান করা হলেও অদ্যাবধি তা বন্ধ রয়েছে।

তবে এসব প্রতিবন্ধকতা সত্বেও গত দুই দশকে দেশে বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা কেউ ভাবেনি বলে আক্ষেপ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ