Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনড় শাবি শিক্ষার্থীরা

প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি : ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

শাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছে। দাবি আদায়ে গতকাল মঙ্গলবারও শিক্ষার্থীরা দিনভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে। দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে গত সোমবার রাতে মুঠোফোনে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, গতকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মধ্যস্থতা করতে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতারা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

ভিসি ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানের পর গতকাল শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে জড়ো হয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে গোলচত্বরে শতাধিক শিক্ষার্থীকে কর্মসূচিতে অংশ নিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সিলেট-১ আসনের এমিপ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর পাঠানো প্রতিনিধির মাধ্যমে মুঠোফোনে কথা বলেন। এরপর প্রধান ফটকের সামনে অবস্থানরত পুলিশ, রায়ট কার ও জলকামান প্রত্যাহার করা হয়। প্রধান ফটক থেকে পুলিশ সরে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরাও ভিসির ভবনের সামনে থেকে সরে যান। তবে সরে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গোলচত্বরে জড়ো হয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে যান।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, এ ভিসির নির্দেশে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা তাকে আর দেখতে চাই না। তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবো না। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে শাবিপ্রবির উপ-ডাকঘরের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের বঙ্গভবনের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। এর আগে খোলা চিঠি হিসেবে পাঠ করেন আন্দোলনকারীরা। চিঠিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে রোববার সন্ধ্যায় ভিসির মদদে পুলিশী হামলার বিষয় উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদের কাছে ভিসির পদত্যাগের দাবি এবং নতুন যোগ্য ভিসি নিয়োগের দাবি জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে তারা লিখেছেন, জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শিকার হন নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বিশের অধিক। এর মধ্যে কারো মাথা ফেটেছে, কারো রাবার বুলেট বা সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষত হয়েছে। ছাত্রীদের উপর নিষ্ঠুরভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের উপর এমন নৃশংস হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলায় শাবিপ্রবি ভিসি যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন তা সরাসরি সংবিধান বিরোধী এবং আপনার কর্তৃক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উপর অর্পিত দায়িত্বের বরখেলাপ। তারা লেখেন, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সকল যৌক্তিক, নৈতিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। এই ঘটনা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে যে এই অথর্ব, অযোগ্য ও স্বৈরাচারি ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতায় বহাল রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রের পরিপন্থী।

দুপুরের দিকে খোলা চিঠি পাঠের পরপরই স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তারা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দাবিতে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে বলেন, ভিসিসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে থাকা সবাই ব্যর্থ। তারা কেউই শিক্ষার্থীবান্ধব না। তাদের ব্যর্থতার জন্যই আজকের এ অবস্থা। অবিলম্বে ভিসির পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের পদত্যাগ করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছে। যেকোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সব সময় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সমাধান হয়ে থাকে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রথম যেসব দাবি ছিল তা মেনে নিয়েছে, তাই সবার উচিত ঘরে ফিরে যাওয়া। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান শুরু করেন।

বেলা দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে ভিসির বাসভবনে যান। এর পাঁচ মিনিট পরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে সেদিকে যান। বেলা তিনটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এজাহারের অভিযোগে বলা হয়, ২০০ থেকে ৩০০ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের কাজে বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। কর্তব্যরত পুলিশের সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করাসহ পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়ে। পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ৩১টি শটগানের গুলি এবং ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে হলের কয়েক’শ ছাত্রী ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের সূচনা করেন। গত রোববার অবরুদ্ধ ভিসিকে মুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার পাশাপাশি শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান ভিসি। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ