Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটা

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ২৬ অবৈধ ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী এ সকল ইটভাটার নেই কোন সরকারি অনুমোদন। আর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই তিন ফসলি কৃষি জমিতে গড়ে তোলা ২৬টি ইটভাটা কিভাবে চলছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মনে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। তাছাড়া এ সকল ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অন্যদিকে এ সকল ইটভাটার মাটি ও ইট পরিবহনে কয়েক শতাধিক শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি দৌলতপুরের সড়কগুলোতে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে কেউ প্রাণ হারাচ্ছে কেউ হচ্ছেন পঙ্গু।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে আল সালেহ মামুন, হজমুদ্দিনের ছেলে ইদবার আলী, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আনারুল ইসলাম, স্বরুপপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে আবু বক্কর অবৈধভাবে সাদিপুর গ্রামেই তিন ফসলি জমিতে জনবসতি এলাকায় চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। পার্শ্ববর্তী স্বরুপপুর গ্রামে মৃত শাসুদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও বজলুর রহমান এবং ইয়াকুব হালসানার ছেলে নুরুল ইসলাম তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। ফলে এই দুই গ্রামের রাস্তাঘাট ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে দৌলতপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সম্পূর্ণ আবাদি জমিতে ইয়াছিন আলী ও আব্দুল্লাহ, খান পাড়ায় জল্লাদ খান তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। দৌলতপুর কলেজ ও দাখিল মাদরাসার পাশে আব্দুল হান্নান ও চক দৌলতপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে রমজান আলী, দৌলতপুর থানার পুর্বপাশে অর্পিত সম্পত্তিতে নজরুল ইসলাম, রিফাইতপুর জোয়াদ্দার পাড়া গ্রামে শহিদুল ইসলাম ওলি, পাশ্ববর্তী গলাকাটি মোড়ে ঝুমুর আলী, আব্দুস সালাম ও নজরুল ইসলাম, বড়গাদিয়ায় হাবলু মোল্লা, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, জয়রামপুরে কান্টু মোল্লা, ডাংমড়কায় কুষ্টিয়া প্রাগপুর সড়কের সাথে আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছেন। সাদিপুর গ্রামের কৃষক মেহেরুল জানান, তাদের আবাদি জমির চারিপাশে ইটভাটা গড়ে তোলায় সেখানে আর কোনো ফসলের আবাদ করতে পারছেন না।

উপজেলার ২৬টি ইটভাটা ব্যবসায়ী দিনে ও রাতের আধারে ডাম্পার ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন। সড়কগুলোতে এসব অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অভিযোগে জানা যায়, এ সকল ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে একদিকে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে অন্যদিকে জনবসতি এলাকায় অসংখ্য ইটভাটার ফলে সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

দৌলতপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিএইচএ ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, দীর্ঘদিন ইটভাটার ধোঁয়ায় বাতাসে কার্বন বৃদ্ধি পায়। এবং তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হবে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক আতাউর রহমান জানান, কোনো ইটভাটা মালিক পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়নি। খুব শীঘ্রই এসকল অবৈধ ইটভাটা গুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এলাকাবাসী জানায়, ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স না থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর কুষ্টিয়া অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা আরো জোরদার করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ