Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকির মুখে নাকুগাঁও স্থলবন্দর

ভোগাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

শেরপুরের সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকা ঘেঁষে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ইজারাকৃত স্থানের বাইরে থেকে নাকুগাঁও ভোগাই নদীতে চলছে বালু উত্তোলনের উৎসব। এতে হুমকির মুখে পড়েছে স্থলবন্দরটি। ২০-২৫ জন লোক ইজারাকৃত স্থানের বাইরে থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে নাকুগাঁও স্থলবন্দর। ইজারাদারকে টাকা দিয়ে নির্ধারিত সীমানার বাইরে বালু উত্তোলনের কারণে এই ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
গত বছরের এপ্রিলে ৯০ লাখ টাকায় উপজেলার ভোগাই নদীর চারটি মৌজায় বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা পায় ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইজারাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ নভেম্বরে স্থলবন্দর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে বালু তোলার অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ইজারাদারকে টাকা দিয়ে নাকুগাঁও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ২০ থেকে ২৫ জন লোক উল্টো স্থলবন্দর ঘেঁষে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে প্রায় ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নাকুগাঁও স্থলবন্দর।
জানা যায়, নাকুগাঁও সীমান্তে দুই লেন সড়ক ঘেঁষে ভোগাই নদী ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে এসেছে। নদীর এক পাশে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের অবকাঠামো, বিজিবি চেকপোস্ট ও নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন কার্যালয় অবস্থিত। এর ৩০ থেকে ৬০ মিটার দূরে ৩০-৩৫টি শ্যালোমেশিনের মাধ্যমে নদী থেকে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভেঙে স্থলবন্দর এলাকার কিছু অংশ ইতোমধ্যেই ধসে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
নাকুগাঁও গ্রামের বালু ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য তিনি ইজারাদারকে প্রতি ১২ চাকার ট্রাকের জন্য ২ হাজার আর ৬ চাকার ট্রাকের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা করে দেন।
নয়াবিল ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, দুই লেন সড়ক, স্থলবন্দরের অবকাঠামো, ইমিগ্রেশন ও বিজিবি চেকপোস্ট ঘেঁষে ভোগাই নদীতে বড় গর্ত করে প্রায় এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে সরকারি এই স্থাপনা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। দ্রুত এই বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ভোগাই নদীতে বালু উত্তোলনের ইজারাদার জোবায়ের আহমেদ বলেন, নির্ধারিত সীমানার ভেতর থেকেই বালু তোলা হচ্ছে। এর বাইরে থেকে বালু তোলা হচ্ছে না।
নাকুগাঁও বন্দর কর্তৃপক্ষ, সওজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ১৮ জুন নাকুগাঁওয়ে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে স্থলবন্দর ঘিরে ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে স্থলবন্দরের নানা স্থাপনা। এরপর ২০১৬ সালে সওজের উদ্যোগে সাড়ে ৩ কোটি টাকায় নাকুগাঁও শূন্যরেখা থেকে নকলা পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটার দুই লেন সড়ক নির্মাণ করা হয়।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন বলেন, আইন অমান্য করে বালু তোলা যাবে না। এ নিয়ে বালু ব্যবসায়ীসহ ইজারাদারকে একাধিকবার বলা হয়েছে। দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নালিতাবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু বলেন, নাকুগাঁও স্থলবন্দরকে হুমকির মূখে ফেলে কোন অবস্থাতেই নিকটবর্তী এলাকা ঘেষে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। তারপরও ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলে তা বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ