Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীতে কমছে লবণাক্ততা

গড়াই নদী খনন প্রকল্পের সুফল

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

গড়াই নদী খনন প্রকল্পের সুফল মিলতে শুরু করেছে। শুস্ক মৌসুমে আগে যেখানে নদীতে পানি থাকত না, এখন খননের ফলে নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে। পাশাপাশি কমছে লবণাক্ততাও।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ও মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা থেকে গড়াইয়ের উৎসমুখ শুরু। কুষ্টিয়া ছাড়াও মাগুরা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা হয়ে সুন্দরবনে গিয়ে পড়েছে নদীটি। সুন্দরবন ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে নোনা পানির আগ্রাসন রুখতে বড় ভূমিকা রাখে গড়াইয়ের মিঠা পানি। এর ফলে আবহাওয়া, পরিবেশ জীব বৈচিত্র্যসহ অত্র অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তার উন্নতি সাধন হবে। মিঠাপানির প্রবাহ বাড়ায় সুন্দরবনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সুন্দরবনসহ জীববৈচিত্র রক্ষায় গড়াই খনন প্রকল্প হাতে নেন সরকার। প্রতি বছর বর্ষার পর উৎসমুখে প্রচুর পলি পড়ে পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যায়। তাই পলিবালি অপসারণে প্রতি বছরই ড্রেজিং করছে। গত ২০১৯-২০ পর্যন্ত খনন করেছে ১৩.১০ কি.মি. এবং বালি অপসারণ করেছে ৯২.৭৯ লাখ ঘনমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও গড়াই খনন প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর থেকে নদী খনন শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে চলতি জুনে। এ বছর উৎসমুখ তালবাড়িয়া ও হরিপুর অংশ থেকে শুরু হয়ে খোকসা উপজেলা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। সাতটি ড্রেজার দিয়ে পাঁচটি পয়েন্টে খননকাজ চলছে।
৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮০ লাখ ঘনমিটার পলি ও মাটি অপসারণ করা হবে। এরই মধ্যে পাউবোর নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ৩০ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। উৎসমুখ থেকে ৩২০ ফুট চওড়া করে খননকাজ শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে ১২০ মিটারে গিয়ে শেষ হবে।
তবে প্রকল্পের বাইরেও কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে শুরু করে রাজবাড়ীর পাংশা পর্যন্ত অতিরিক্ত ৮.৫ কিলোমিটার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে খননকাজ চলছে যার প্রস্তাবিত ব্যয় ৪০ কোটি টাকা বলে জানান- পানি উন্নায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন। লক্ষ্যমাত্রা ২৪.৬০ লাখ ঘন মিটার ধরা হয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২.০০ লাখ ঘন মিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান পানি উন্নায়ন বোর্ডের এস.ডি. মো. সালাউদ্দিন।
সব মিলিয়ে এ বছর ৩৬ কিলোমিটারের বেশি খননকাজ করা হবে, যা নদীর পানিপ্রবাহে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। গত ২০২০-২১ এ একই ডিজাইনে ১৮ কিলোমিটার খনন করে ৬৯.০৬ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে এবার। এ জন্য নতুন করে অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে। বাড়তে পারে আরও এক বছর।
সরেজমিনে নদী ঘুরে দেখা গেছে, উৎসমুখে একটি ড্রেজার নদী খনন করছে। যেখানে বেশ খানিকটা এলাকাজুড়ে চর পড়েছে। তবে অন্যবার চর পড়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকলেও এবার তা হয়নি। পাশাপাশি ইনটেক চ্যানেল থেকে শুরু করে লাহিনী গড়াই রেলসেতু পর্যন্ত চারটি চর পড়ত। এবার এসব এলাকায় চর পড়ে পানির গতি বন্ধ হয়নি। এর মধ্যে জুগিয়া, ঘোড়াঘাট ও কয়া এলাকায় পানির প্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। এসব এলাকা দিয়ে আগে হেঁটে বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হওয়া যেত। এখন সেখানে ট্রলার দিয়ে পার হতে হচ্ছে।
গড়াই নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, খননের ফলে শুস্ক মৌসুমে সার্বিক পানিপ্রবাহের যে ধারা, সেটি গত দুই বছরে অনেকটা বেড়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নোনাপানির আগ্রাসন ২০১৯ সালে এপ্রিল থেকে ২০২০ জালের জুন পর্যন্ত চার মাসে বেশ কমেছে। যেখানে নদীর বড়াদিয়া পয়েন্টে ২০১৯ সালের এপ্রিলে নোনাপানির মাত্রা ৯.৪০ পয়েন্ট, সেখানে ২০২০ সালের জুন মাসে কমে দাঁড়ায় ০.৬০ পয়েন্টে। চাপাইলঘাট পয়েন্টে ৪.৬০ পয়েন্ট থেকে কমে ১.৬০ পয়েন্ট, রূপসা পয়েন্টে ১৮.৬০ থেকে কমে ১৫.৮০ পয়েন্ট, মোংলা পয়েন্টে ১৮.৯০ থেকে কমে ১৩.৬০ ও সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে ২৭.৫০ থেকে কমে ২৩.৬০ পয়েন্ট এসে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকা পুনরুদ্ধার ও নদীর পাশ দিয়ে পানি প্রবাহের চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে কুষ্টিয়া উন্নায়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ভাঙন মেরামতের নির্দেশ দেন বলে কুষ্টিয়া পানি উন্নায়ন বোর্ডের জি কে প্রকল্পের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জি কে সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ। গড়াইয়ে নিয়মিত মাছ ধরে কয়া এলাকার বসির উদ্দিন, আলমগীরসহ তাদের দল। তারা জানান, এখন সারাবছরই নদীতে পানি থাকছে। তাই মাছের পরিমাণও বেড়েছে।
গবেষক ও বিশিষ্ট পানিবিদ গৌতম কুমার রায় বলেন, পরিবেশগতভাবে গড়াই নদী গুরুত্বপূর্ণ। নদীর সঙ্গে সুন্দরবনের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বেশ কয়েক বছর আগে গড়াই যেখানে শুকিয়ে চর পড়ে গিয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে ও পানির লবনাক্ততা কমেছে। এটা ভালো দিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ