Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারি চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা গ্রেফতার তিন

লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। চক্রটি সম্প্রতি অভিনব কায়দায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে চাকরি দেবার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। টাকা আত্মসাতের জন্য তারা ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়। চাকরির গ্যারান্টি দিয়ে টাকার গ্যারান্টি হিসেবে ব্ল্যাংক চেক ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প নিতো ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। গতকাল সোমবার মালিবাগ সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রো সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ঈমাম হোসেন।

তিনি বলেন, গত রোববার মিরাজুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগীসহ চার ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে এ চক্রের মূলহোতা হারুন অর-রশিদকে (৩৬) ঢাকার কেরানীগঞ্জ হতে গ্রেফতার করা হয়। তিনি নওগাঁ বদলগাছির আ. জলিলের ছেলে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেকেন্দার আলী (৩৪) ও মাসুদ রানাকে (২৩) কাফরুল থানার মিরপুর-১৪ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের ভুয়া নিয়োগপত্র ৪টি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আবেদনপত্র তিনটি, ভিকটিমদের স্বাক্ষরিত বিভিন্ন ব্যাংকের ব্ল্যাংক চেক ৬টি, ভিকটিমদের স্বাক্ষরিত ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প ২৪টি, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সরকারি চাকরির জন্য সুপারিশকৃত ভুয়া ডিও লেটার ও বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি ও অন্যান্য কাগজপত্র সম্বলিত বায়োডাটা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, যেসব চাকরিতে পদ কম থাকে সেইসব চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখায়। কারণ ওই সব চাকরি হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বেকার যুবকদের চাকরি অফার দিলে অনেকেই রাজি হয়। তিন থেকে ৫ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে নেয়। কাকতালীয়ভভাবে কখনো চাকরি হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয় চক্রটি। বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য চক্রটি চাকরি পাবার পর বাকি টাকা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। আবার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প নিয়ে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে যে, চাকরি আপনার হবেই। এভাবেই প্রতারক চক্রটি ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। শুধু তাই নয়, চক্রটি বদলী বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত। বিভিন্ন মানবিক কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বদলীতে আগ্রহীদের বদলির তদবির করত চক্রটি।
তিনি আরো বলেন, ভুক্তোভোগী রতন জানিয়েছেন, তার খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে হারুনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। হারুন মাঝে মাঝে ফোন দিতো। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে জানাতো। তার মেয়ের কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। জামাই চাকরি খুঁজছিল। হারুন তাকে জানালো, সে খাদ্য অধিদফতরে চাকরি দিয়ে দিতে পারবে। মেয়ের শ্বশুরের সঙ্গে আলাপ করি। ৩০ লাখ টাকায় খাদ্য উপ-পরিদর্শক পদে চাকরির বিষয়ে হারুনের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। মেয়ের শ্বশুর বলেন, চাকরি হলে টাকা দেবেন। আমরা শুরুতে তিন লাখ টাকা দিই হারুনকে। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্টে আমার মেয়ে জামাইয়ের নাম আসেনি। বিষয়টি হারুনকে জানানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে আর ফোন ধরে না। এভাবে ঘোরাতে থাকে। টাকা ফেরত দেয়নি।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, একইভাবে কেউ সৌদির ভিসার জন্য টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, আবার কেউ সেনাবাহিনীতে চাকরি পেতে হারুনকে টাকা দিতে সুদে টাকা এনেছেন। সিআইডি কার্যালয়ে এরকম ৫-৬ জন ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে, যারা হারুনকে বড়মাপের প্রতারক বলেছেন। মেরাজুল ইসলাম নামে শ্যামলীর এক মুদি দোকানি হারুনকে তার শ্যালকের সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার পদে চাকরির জন্য পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
মেরাজুল ইসলাম সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেন, শ্যালকের চাকরির জন্য গত অক্টোবরে ইউসিবি ব্যাংকে হারুনের অ্যাকাউন্টে টাকা দিই। এক মাস পর একটা নিয়োগপত্র দেয় হারুন। আমার শ্যালককে ক্যান্টনমেন্টের পাশের একটি বাসায় নিয়ে রাখা হয়। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একটি বিয়েতে একদিন ডিউটিও করে। এরপর ১৫ দিন তাকে বসিয়ে রাখে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেও নেয় না। তখন আমরা বুঝতে পারি সে প্রতারণার শিকার। এরপর আমি আমার শ্যালককে নিয়ে আসি। হারুনের কাছে টাকা ফেরত চাই। কিন্তু তার কোনও হদিস পাচ্ছিলাম না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ