Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরে ১০ বছরে উধাও ৩৭ হাজার খেজুর গাছ

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপেটার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৯ পিএম

এক দশক আগেও মাদারীপুরে গ্রামগঞ্জে ও মাঠেঘাটে খেজুরগাছ দেখা গেলেও কালের আবর্তে তা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা বিলুপ্তির পথে এই গাছ।গত এক দশকে মাদারীপুরে ৩৭ হাজার খেজুরগাছ কাটা পড়ার তথ্য দিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।খেজুর গাছ না থাকায় রস সংগ্রহে গাছিদের তৎপরতা চোখে পড়ে না। তারাও পেশা পাল্টে নিচ্ছেন।

খেজুরগাছের কদর আর আলোচনা বরাবর হয় শীতকালে। এই মৌসুমে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে সরাসরি পানের পাশাপাশি গুড় তৈরি এখন গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করছে।

উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গুড় নিয়ে বেশ আলোচনা থাকলেও মধ্যাঞ্চলের ফরিদপুর অঞ্চলের কদরও কম ছিল না। গাছের রস রক্ষার জন্য রাত জেগে খেজুরগাছ পাহারাও দিতে হতো।এখন শীত মৌসুম চলছে কিন্তু খুব একটা দেখা মিলছে না গাছিদের।
কথা হলো সদর উপজেলার চরগোন্দ্রিপুর গ্রামের বাবুল শিকদারের সঙ্গে। ৩০ বছর ধরে গাছির কাজ করে আসছেন 'তিনি বলেন, ‘আগে কুয়াশার মইধ্য দুই-তিন ঘণ্টা খেজুর রস সংগ্রহ করতাম। পরে রস জ্বালায়ে গুড় বানাইতার। এহন আর আগের সেই দিন নাই। শীত আইলে কিছু গাছ কাডি। আয়ও আগের মতো হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে অনেক খেজুরগাছ আছিল। কিন্তু এখন আছে মাত্র ১০টা। মাত্র তিনটারতে রস নামাই।’নিজের তিনটি আর প্রতিবেশীদের কিছু গাছ কেটে কোনো রকম চলে যাচ্ছে বাবুলের। সন্তানরা এই পেশায় থাকবেন না, এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।

এ আর হাওলাদার জুট মিল এলাকার মোস্তাক উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও যেই দিকে তাকাইতাম, সেই দিকেই দেখতাম খেজুরগাছ। শীতের দিনে তো গাছে গাছে হাঁড়ি দেখতাম। গাছ কাডার কাজ করত গাছিরা। রস কেনাবেচা আর গুড় বানানোর ধুম পড়ত। রসের জন্য মানুষের সিরিয়াল পড়ত। কিন্তু এখন আর সেই চিত্র নেই।’

সদর উপজেলার কুনিয়ার গাছি জাহাঙ্গীর শরীফ ৪০ বছর ধরে গাছির কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আগে শয়ে শয়ে গাছ কাটতাম। এখন মাত্র ২০-৩০টি গাছ নিয়া আছি। রস, গুড়ের চাহিদা অনেক। কিন্তু গাছ নাই।’এই গাছ কোথায় গেল- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ইটভাটার মালিকেরা গাছ কিনে পুড়িয়েছে। আবার অনেক সময় অজ্ঞাত কারণে গাছ মরে যাচ্ছে।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদাদের মুখে রসের যে কাহিনি শুনি, তা আমাদের কাছে অবাস্তব মনে হয়। আগামীতে রস না থাকলে পরের প্রজন্মের কাছে এসব গালগল্প মনে হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘১০ বছর আগে জেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৮৪ হাজার ৯৮৫টি খেজুরগাছ ছিল। বর্তমানে সেখানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৪৭ হাজার ৭৩১টি গাছ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খেজুরগাছ না কাটার জন্য আমরা জনগণকে সচেতন করছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের অভিযানও চলে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। কেউ যদি আইন অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ