Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-রাঙামাটি উচ্চ ঝুঁকিতে

এক সপ্তাহে করোনায় দ্বিগুণ রোগী : স্বাস্থ্য অধিদফতর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকা ও পার্বত্য রাঙামাটি জেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মাঝারি মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সীমান্তবর্তী ৬টি জেলা।

সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় সারাদেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। লাল উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, হলুদ মধ্যম এবং সবুজ কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। উচ্চ ঝুঁকির এলাকা ঢাকা ও রাঙামাটি জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে।

হলুদ জোন অর্থাৎ মধ্যম মাত্রার ঝুঁকিতে রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও যশোরে শনাক্তের হার এখন ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে। আর সংক্রমণের হার শূন থেকে চার শতাংশের মধ্যে রয়েছে এমন ৫৪টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে সবুজ রঙে। এখন পর্যন্ত এই তিনটি চিহ্নের বাইরে রয়েছে পঞ্চগড় ও পার্বত্য বান্দরবান জেলা। এই জেলাগুলো হল চট্টগ্রাম, বগুড়া, গাজীপুর, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া, নীলফামারী, বরগুনা, শেরপুর, মেহেরপুর, ঠাকুরগাঁও, ফেনী, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জ, নওগাঁ, ঝালকাঠি, খুলনা, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, ফরিদপুর, বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, সিলেট, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, গাইবান্ধা, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, পার্বত্য খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ, পাবনা, মাদারীপুর, মাগুরা, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, ভোলা, টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নড়াইল।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে ঢাকা জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ মধ্যম থেকে উচ্চ ঝুঁকির পর্যায়ে রয়েছে। রাঙামাটি জেলা গত সপ্তাহে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় থাকলেও এ সপ্তাহে তা উচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে। কম ঝুঁকি থেকে মধ্যম ঝুঁকির তালিকায় এসেছে রাজশাহী, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও যশোর। নাটোর জেলা গত সপ্তাহ থেকেই মধ্যম ঝুঁকিতে ছিল। এ সপ্তাহে অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত এক সপ্তাহে ঢাকা জেলায় ৪৩ হাজার ১৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫ হাজার ৫৬৯ জনের করোনা ধরা পড়েছে, যা শতকরা ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে ঢাকা জেলায় শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল। রাঙামাটি জেলায় ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এ সপ্তাহে। এই জেলায় শনাক্তের হার এখন ১০ শতাংশ, যা আগের সপ্তাহে ১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল।

করোনা ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময় গত বছর জুলাই-অগাস্ট সময়ে দৈনিক শনাক্তের হার ৩০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর তা নামতে নামতে জুলাই মাসে ২ শতাংশের নিচে চলে আসে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রনের ত্রাস। গত ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ এবং ৬ জানুয়ারি তা ৫ শতাংশ ছাড়ায়।
সরকারি হিসেবে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১০৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে জানানো হয়, গত সাত দিনে দেশে করোনার সংক্রমণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মহাদেশে দেখা যাচ্ছে বর্তমান সময়ে সব চেয়ে বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেলটা ভাইরাস দুটোই কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, গত ১ সপ্তাহে বাংলাদেশে ১০ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। ৭ দিনে দেড় লাখ টেস্ট হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৪ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ দিনে ৬ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহে ১৬৯ দশমিক ১২ শতাংশ রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯ জন। যদিও আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মৃত্যু ২০ শতাংশ কম।

রোবেদ আমিন বলেন, গত ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা শতাংশের হিসাবে প্রায় দ্বিগুণ রোগী পেয়েছি। ৫ জানুয়ারি ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১১ জানুয়ারি এসে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে। গত ৭ দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারপর থেকে এটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু একই ধারায় বৃদ্ধি হচ্ছে তা না, প্রোগ্রেসিভলি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং। পুরো ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৫৮৮ জন রোগী আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। সেখানে জানুয়ারির মাত্র ১১ দিনে ১২ হাজার ৮৫০টি রোগী ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ