Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অবশেষে নিলাম স্থগিত দেশের প্রথম শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতবর্ষী সেই ভবনটির

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৯ পিএম

নিলামে উঠছে না দেশের প্রথম শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলনার মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট। বাংলাদেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন চিত্রশিল্পী শশীভূষণ পাল। তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় শত বছরের পুরাতন ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছিল। নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রও জমা দেয়। স্থানীয় লোকজন ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের দাবির প্রেক্ষিতে আজ বুধবার বিকালে নিলাম স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯২৯ সালে বর্ধমানের মহারাজাধিরাজের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারিভাবে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ওই বছরের ১৯ মে ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়ের খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর এইচ কুইনন্টন। ভবনের দেয়ালে থাকা শিলিলিপিতেই এসব তথ্য লেখা আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একতলা ভবনটি চুন-সুরকি আর ইটের গাঁথুনিতে তৈরি। বারান্দার সামনে ছয়টি প্রবেশপথসহ মোট ৯টি দরজা রয়েছে। ৫৫ ফুট দৈর্ঘ্য আর ২৫ ফুট প্রস্থের ভবনটির দরজা-জানালাগুলো বেশ প্রশস্ত। লোহার পাতের ওপর মাটির টালি বসিয়ে তার ওপর ছাদ ঢালাই দেওয়া। ভবনের গায়ে কয়েকটি অশ্বত্থগাছ বড় হয়ে উঠছে।
শিক্ষাবিদ, ইতিহাস গবেষক এবং খুলনা অঞ্চলের ইতিহাসের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯০৪ সালে বাংলাদেশ ভূসীমানায় প্রথম শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন শশীভূষণ পাল। বর্তমান যশোর রোডের পূর্ব পাশে নিজ বাড়িতে মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট নামে এই অঙ্কন বিদ্যাপীঠটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, সে সময় পূর্ববঙ্গে আর কোনো শিল্প-শিক্ষায়তন ছিল না। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি জেলা বোর্ড ও সরকারি অনুদান পেতে শুরু করে। ১৯২৯ সালে বিদ্যালয়টি যশোর রোডের পশ্চিম পাশে স্থানান্তরিত হয়। সেখানেই সরকারি ভবটি গড়ে ওঠে। এই শিক্ষায়তনে প্রায় ৪১ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শশীভূষণ পাল। বাংলার গভর্নর, বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতব, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পল্লিকবি জসিমউদ্‌দীন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী এস এম সুলতানসহ দেশি–বিদেশি অনেক শিল্পরসিক এই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এসেছিলেন। জয়নুল আবেদিনও এটাকে এই বঙ্গের প্রথম শিল্প–শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
সময়ের পরিক্রমায় মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট নামের সেই বিদ্যায়তনটি খুলনার গল্লামারী এলাকায় স্থানান্তরিত করে ১৯৮৩ সালে প্রথমে শশীভূষণ আর্ট কলেজ, পরে খুলনা আর্ট কলেজে রূপান্তরিত হয়। ২০০৯ সালে সেটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউট হিসেবে স্বীকৃতি পায়। নগরের দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা কুলিবাগান এলাকায় শুরুর দিকের ওই সরকারি ভবনটিতে প্রায় চার দশক আগে শশীভূষণ শিশু বিদ্যা নিকেতন গড়ে তোলেন স্থানীয় সুধীজনেরা। এরপর ১৯৮০ সালে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৯১ সালের দিকে সেখানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে ওই কমপ্লেক্সেই তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
২০২১ সালের ২৯ আগস্ট খুলনা সিটি করপোরেশনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে খুলনা নগর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণের জন্য এক সভা হয়। সভায় সেই সময়ের কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান দৌলতপুরের শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শত বছরের পুরোনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি উত্থাপন করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয় এবং এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবনটি বিধি মোতাবেক ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিদ্যালয়ের তখনকার প্রধান শিক্ষক নাহিদ সুলতানার কাছে চিঠি পাঠায় কেসিসি। এরপর ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিদ্যালয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় সভায় বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্যে থাকা পুরোনো ভবনটি অপসারণ করে এর আদলে অন্য একটি ভবন নির্মাণ করা এবং সেই ভবনের সামনে শশীভূষণ পালের একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ভবনটি নিলামে নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। গত ২১ ডিসেম্বর পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ৪ জানুয়ারি ভবনটির দরপত্র জমার শেষ দিন মোট ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আজ ১২ জানুয়ারী চিঠি দিয়ে নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ভবনটি অপসারণের সকল কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ