Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে গারো পাহাড়ের বৈচিত্র্য

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অথচ মাত্র দেড় যুগ পূর্বেও গারো পাহাড়জুড়ে ভরপুর ছিল নানা প্রজাতির প্রাণিবৈচিত্র্য। কিন্তুু সংরক্ষণের অভাব ও ব্যাপকভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করে সামাজিক বনায়নের নামে বিদেশি, পরিবেশের জন্য খতিকর গাছ রোপন, জনবসতি গড়ে উঠার ফলে খাদ্যের চাহিদা না মেটায় এবং হারিয়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অথচ নিকট অতীত দুই দশক পূর্বেও এখানকার ছোট-বড় ও মাঝারি পাহাড়গুলো ছিল বন্যপ্রাণীদের অত্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
তখন গারো পাহাড়ি অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ির গারো পাহাড়ে অবাধে ঘুরে বেড়াত বাঘ, ভালুক, মেছোবাঘ, হারিণ, বানর, হুনুমান, আরো কত হিংস্র জীবজন্তুু জানোয়ার। বিভিন্ন প্রকারের পাখ-পাখালীর কিচিরমিচির শব্দেতো মুখরিত থাকতো গোটা গারো পাহাড়। এই সব অরণ্যে অবাধে ঘুরে বেড়াতো হাতি, বাঘ, ভালুক, হরিণ, শিয়াল, ময়ূর আরো কত জীব জানোয়ার, পাখ-পাখালী। দেখা মেলতো বানর, হুনুমান, কাঠবিড়ালী, কটাবানরসহ নানা জীব-জন্তুু-জানোয়ার। তাছাড়া চিল, শকুন, ধনেশপাখিতো ছিলই। তখন পাহাড়ি নদী-নালা, খাল-বিল ও ঝরনায় ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিন্তুু আজ সেই জীববৈচিত্র নানা কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যাও টিকে আছে তারও অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এককালে গারো পাহাড় ছিল বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তি ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ রেজাউর রহমান মাস্টার, আলহাজ শরিফ উদ্দিন সরকার ও সরোয়ারর্দী দুদু মন্ডল জানান, বাড়ছে মানুষের সংখ্যা, সমান তালে কমছে পশু-পাখি, জীব-জানোয়ারের সংখ্যা। বিলুপ্ত হয়ে গেছে স্তনপায়ী, পাখ-পাখালী ও বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ, জীব-জন্তুু-জানোয়ার।
অথচ এমন একদিন ছিল যখন দিনদুপুরেও সীমান্তবর্তী শেরপুরের গারো পাহাড়ের অরণ্যে বাঘ-ভালুক, হাতির ভয়ে মানুষ চলাফেরা করতে পারতোনা। তখন বাঘ, ভালুক, হাতি ও শিয়লের ডাক-চিৎকারে পাহাড়ি এলাকার মানুষের ঘুম ভেঙে যেত। অবাধে আকাশজুড়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতো শকুন। কিন্তুু ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অবাধ বৃক্ষ নিধনের ফলে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে চরম হুমকির মূখে পড়েছে এইসব জীববৈচিত্র্য। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই অনেক পশু-পাখি, জীব-জন্তুু, জানোয়ার বিলুপ্তই হয়ে গেছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, পাখ-পাখালীসহ জীববৈচিত্র প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষায় খুবই জরুরি প্রয়োজন। পাখি খেতের ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে। যার কারণে খেতে কঞ্চি পুতে রাখা হয় পখি বসার জন্য যাতে কঞ্চির অগায় পাখি বসে পোকা খেয়ে ফেলে। এছাড়াও জীববৈচিত্র্য আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, এখনও যে সামান্য জীববৈচিত্র্য রয়েছে তার জন্য আমরা রংটিয়া পাহাড়ে ঢুকার পর থেকেই ভ্রমনে আসা পর্যটকদের উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েিেছ। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বৃক্ষ নিধনে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও চরম হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র, এটাতো বাস্তব সত্য। তবে এখনও যে জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা রক্ষা করতে হবে বলে আমি মনে কারি। অপর দিকে ইতোমধ্যেই অনেক পশু-পাখি, জীব-জন্তুু, জানোয়ার বিলুপ্তই হয়ে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ