Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১১তম বার্ষিকীর সেমিনারে ৭ জানুয়ারিকে ‘ফেলানী হত্যা দিবস’ ঘোষণা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৯:১৩ পিএম

বাংলাদেশ লেবার পার্টির সেমিনারে বক্তারা ন্যায়বিচার এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি করেছেন।৭ জানুয়ারি ফেলানী খাতুনের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তিনি নিহত হন। বক্তারা ৭ জানুয়ারিকে ফেলানী হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

তারা বলেন, ২০১১-এর ৭ জুন সকালে ফেলানী খাতুন (১৪) তার লিপস্টিক, নেইল পলিশ, ফেসপাওয়ার এবং তার আগের রাতে তার বাবার সাথে কেনা অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়। পরের দিন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তার বিয়েতে সে এগুলো পরার পরিকল্পনা করে। যখন তারা দালালের সাহায্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করছিল, তখন সে তার ব্যাগটি বেড়ার উপর দিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু সে আর চিরতরে বাংলাদেশে আসতে পারেনি। কাঁটা তারে ঝুলন্ত তার লাশের ছবি সারা বিশ্বের নাগরিকদের হতবাক করেছিল। আজ এগারো বছর পরও তার পরিবার বিচারের জন্য কাঁদছে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালে কমপক্ষে ৫০ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪২ জনকে গুলি করে এবং সাতজনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। বিএসএফ সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, তবে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

অধিকার নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০০০-২০১৯ সাল পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ১২৩৬ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। এগুলো শুধু সংখ্যা নয়। এগুলো মানুষের জীবন। সীমান্তের সহিংসতা থেকে বেঁচে থাকা লোকেরাও সারাজীবনের জন্য আঘাতের চিহ্ন বহন করে৷ ভারত প্রায়ই সীমান্ত হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে এই বলে যে, বিএসএফ সীমান্তে মাদক পাচার, গবাদিপশু চোরাচালান এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য এভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে৷ তারা ‘আত্মরক্ষার’অভিনয় করছে।

দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের সরকার সীমান্ত অপরাধ দমনের এই ত্রুটিপূর্ণ-মারাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অপরাধীরা মারা যেতে পারে। বাস্তবে ভারতের বিএসএফ কর্তৃক এধরনের নির্বিচারে সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সকল প্রাসঙ্গিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত প্রটোকলের লঙ্ঘন বলে তারা মনে করেন।

২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশ তাদের অভিন্ন সীমান্ত পরিচালনার জন্য একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার মধ্যে বিএসএফ দ্বারা প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার চুক্তি এবং সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং স্থলসীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত চুক্তির প্রটোকল অন্তর্ভুক্ত ছিল। .এই চুক্তিগুলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার দুঃস্বপ্ন থেকে শান্তি ও সমৃদ্ধির অঞ্চলে রূপান্তরিত করবে বলে আশা করা হয়েছিল। বাস্তবে ভারত এই চুক্তির প্রতি কোনো সম্মান দেখায়নি। ভারত ও বাংলাদেশকে আলাদা করেছে ২০০০ কিলোমিটারের কাঁটাতারের বেড়া। পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের কুখ্যাত প্রাচীর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভারতের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এবং বাংলাদেশের ব্যর্থ কূটনীতির প্রতীক।

মানবাধিকার কর্মীরা সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের পুঁজিবাদী পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করেছেন। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে সোচ্চার হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি ফেলানী খাতুনের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লেবার পার্টি ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরে একটি মানববন্ধন এবং ক্লাবের অভ্যন্তরে সীমান্ত হত্যা, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ও সামুদ্রিক ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় শোষণের নিন্দা জানাতে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্যরা। বক্তারা ৭ জানুয়ারিকে ফেলানী হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সকল অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত ও ন্যায্য সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ