Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলছে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন

ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ রকেট স্টিমার সার্ভিস : বেসরকারি নৌযানের কাছে জিম্মি যাত্রীরা

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে রাষ্ট্রীয় নিরাপদ যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা এখনো নির্বিঘœ ও নিয়মিত করার কোন উদ্যোগ নেই। সরকারি নৌযান বন্ধ থাকার সুবাদে বেসরকারি নৌযানের সাথে কোন প্রতিযোগিতা না থাকায় নানা অজুহাতে অতিরিক্ত যাত্রী ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ রুটের জন্য বিআইডবিøউটিসির কাছে ৪টি প্যাডেল জাহাজ ছাড়াও ৩টি স্ক্রু-হুইল জাহাজ রয়েছে। কিন্তু নানা অজুহাতে রাজধানী ঢাকার সাথে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসটি এখন চলছে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন। অথচ মাত্র ৩টি নৌযানের মাধ্যমেই সার্ভিসটি নিয়মিত পরিচালন সম্ভব।
তবে এ রুটের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও আরামদায়ক নৌযান পিএস অস্ট্রিচ কোন ধরনের দরপত্র ছাড়াই ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দেয়ার পরে গত ৩ বছর তা বন্ধ। রেলওয়ে থেকে স্ক্র্যাপ ভ্যালুতে সংগ্রহ করা স্ক্রু-হুইল নৌযান এমভি সোনারগাঁওয়ের পেছনে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও এক ব্যক্তি ইজারা নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের কাছে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দিয়েছে। অপর ৩টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে পিএস মাহসুদ ৮ মাসে মেরামত সম্পন্ন হবার পরে বাণিজ্যিক পরিচালনার অপেক্ষায় ঢাকা ঘাটে বসে আছে।
সংস্থার অপর দুটি প্যাডেল জাহাজ পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণও একইভাবে ঢাকা ঘাটে বসে আছে। সংস্থার চারটি বাস্পীয় প্যাডেল হুইল নৌযানই নতুন ইঞ্জিন সংযোজনসহ পরিপূর্ণ আধুনিকায়নের পরে ১৯৯৬ সালে মেকানিক্যাল গিয়ারসহ খোল থেকে উপরি কাঠামোর মেরামত করা হয়। এরপর থেকে গত ২৫ বছরে এসব নৌযানের কোন মেজর ওভারহলিং হয়নি। অথচ অত্যন্ত ব্যয় সাশ্রয়ী ও বাণিজ্য উপযোগী এসব নৌযানই যাত্রীবান্ধব বলেও বিবেচিত। কিন্তু এসব নৌযানের পরিবর্তে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় আড়াইগুণ জ্বালানি ব্যয়ের এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি সংগ্রহের পরে নৌযান দুটি পরিচালনার মাধ্যমে গত কয়েক বছরে সংস্থাটির তহবিল থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে।
উপরন্তু নতুন এসব নৌযানে কারিগড়ি ত্রæটিও নিয়মিত ঘটনা। সর্বশেষ গত মাসেই এমভি বাঙালীর মূল ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত প্রপেলার স্যাফট ভেঙে গিয়ে নৌযানটি বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে সংস্থার নিজস্ব ডকইয়ার্ড থেকে পুরানো স্যাফট মেশিনিংয়ের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। নৌযাটিকে মুন্সীগঞ্জের একটি ব্যক্তি মালিকানা ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে স্যাফট সংযোজনের জন্য। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে নৌযানটি বাণিজ্যিক পরিচালনের জন্য প্রস্তুত হবার কথা রয়েছে। কিন্তু ইয়নমার ইঞ্জিন সম্বলিত দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযানেই প্রতি ঘণ্টায় জ্বালানি ব্যয় প্রায় ১৮০ লিটার। ফলে এসব নৌযান কখনো পরিচালন মুনাফায়ও চালানো সম্ভব হয়নি। অথচ এবিসি ইঞ্জিন সম্বলিত প্যাডেল জাহাজগুলো চলছিল ঘণ্টায় মাত্র ৮০-৮৫ লিটার জ্বালানিতে।
কিন্তু এরপরেও নানা খোড়া যুক্তিতে এসব ব্যয়সাশ্রয়ী ও যাত্রীবান্ধব প্যাডেল জাহাজগুলো বসিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি পিএস মাহসুদের মাঝারি মেরামত ও আংশিক পুনর্বাসন করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার মতে, ৪টি প্যাডেল জাহাজ পরিপূর্ণ পুনর্বাসনসহ এর মূল ইঞ্জিনের ভারি মেরামত সম্পন্ন হলে তা আরো অন্তত ২৫ বছর বাণিজ্যিক লাভজনকভাবে পরিচালনা সম্ভব।
এ ব্যাপারে বিআইডবিøউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি প্যাডেল জাহাজগুলোকে ব্যয় সাশ্রয়ী এবং যাত্রীবান্ধব বলে স্বীকার করেন।
পুনর্বাসনের মাধ্যমে তা পরিচালনার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে একমতও পোষণ করেন তিনি। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং মো. গফুর সরকারও প্যাডেল জাহাজগুলো পুনর্বাসনের মাধ্যমে পরিচালনার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেননি। তিনি সম্ভব হলে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন একাধিকবার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ