পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
রফতানির তুলনায় আমদানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে কেবল গত নভেম্বর মাসেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৩৭ শতাংশ বা ৩৩৪ কোটি ডলার। ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৩ কোটি ডলার, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৫০৪ কোটি ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১৪৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য সারণির তথ্যমতে, গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে রফতানি আয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে পোশাক খাতের রফতানি বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। যেখানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। এই সময়ে রফতানি থেকে দেশ আয় করে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ডলার। আমদানির পেছনে ব্যয় হয় ৩ হাজার ১১৬ কোটি ডলার।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দেয়। তবে একই সময়ে রফতানি বাণিজ্যে গতি এলেও তা আমদানির প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। ফলে পণ্য বাণিজ্যে বিশাল ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।
সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি রয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ১০০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ১৪০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৬২ কোটি ডলার। অন্যদিকে এ খাতে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হয়েছে ৫০২ কোটি ডলার। মূলত বিদেশে শিক্ষা, চিকিৎসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত খরচ সেবা খাতের বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত।
পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতির কারণে চলতি হিসাবেও বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। গত অক্টোবর পর্যন্ত চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৩৭৮ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল। নভেম্বরে নতুন করে আরও ২০৪ কোটি ডলার ঘাটতি পড়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যে মোট ঘাটতি দাঁড়ায় ৬১৮ কোটি ডলার। অথচ এর আগের অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মাসে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে কোনো ঘাটতি ছিল না। উদ্বৃত্ত ছিল ৩৫৫ কোটি ডলার।
আলোচিত সময়ে নিট এফডিআই এসেছে ৬৬ কোটি ডলারের। পোর্টফোলিও বিনিয়োগ কমেছে ৮ কোটি ডলার। অন্যান্য বিনিয়োগ এসেছে ৪০০ কোটি ডলারের। নিট বৈদেশিক সহযোগিতা ছিল ২৩৪ কোটি ডলার। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ছিল ৩০১ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ১০২ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঋণ কমেছে ৫৮ কোটি ডলার। বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ কমে ৩২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ফলে আলোচিত সময়ে আর্থিক হিসাবে ৪৫৮ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
তবে চলতি অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও বিদেশি ঋণের প্রবাহ ভালো থাকায় সামগ্রিক হিসাবে ঘাটতি কিছুটা কমে ২০২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে এই ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে ৫ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
প্রসঙ্গত, দেশের বিদেশি লেনদেনের সব তথ্য লেনদেন ভারসাম্য সারণিতে প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই লেনদেনের সামগ্রিক হিসাবে ঘাটতি থাকার অর্থ হলো তা রিজার্ভ থেকে কর্তন করে ঘাটতি পূরণ করতে হয়।
গত নভেম্বরে এই ঘাটতি পূরণের পর রিজার্ভে ছিল ৪ হাজার ৫১১ কোটি ডলার। তবে মূল্য সমন্বয় করার পর ২৩ কোটি ডলার লোকসান করে দেশ। ফলে রিজার্ভ কমে ৪ হাজার ৪৮৮ কোটি ডলার। অবশ্য গত রোববার রিজার্ভে ছিল ৪ হাজার ৬০৯ কোটি ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত জুলাই-নভেম্বরে প্রাইমারি আয়ে ১১২ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। তবে সেকেন্ডারি আয়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৮৮৬ কোটি ডলার। ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট স্থানান্তরের মাধ্যমে আয় হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স থেকে এসেছিল ৮৬০ কোটি ডলার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।