Inqilab Logo

রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ফিলিপাইনি আখ চাষে স্বাবলম্বী

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের খাঁপাড়া এলাকার এক পরিশ্রমী যুবক মোহা. আবু শাহিন। শখের বশে আখ চাষ করে তিনি ভাগ্য বদলের মাধ্যমে হয়েছেন স্বাবলম্বী। উন্নত জাতের আখ চাষিদের কাছে তিনি এখন একজন মডেল।
দুই বছর আগেও বৃটিশ টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন আবু শাহিন (৩৫)। চাকরির সুবাদে একবার ঝিনাইদহ জেলায় ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। পথিমধ্যে কালো আখে নজর পড়েছিল তার। মনের মধ্যে কৌতুহলের জন্ম হয়েছিল। কৌতুহলের সুযোগে গাড়ি থেকে নেমে আখের স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি। আখের স্বাদে খুশি হয়ে চাষে আগ্রহ হয় শাহিন। মাত্র তিন হাজার টাকার বীজ কিনে পাঁচশতক জমিতে শুরু করেন ফিলিপাইন গান্ডারি আখ চাষ। এই আখ চাষে খরচ কম, তেমন কষ্ট নেই এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ফিলিপাইন আখের চাষ। এতে শাহিনের বদলে যায় ভাগ্য। তিনি একজন সফল আখচাষি।
বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে তিনি এই আখের চাষ করছেন। প্রতিবছরে উপার্জন করছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও আবু শাহিনের দেখাদেখি ওই এলাকায় আরো ২০ জন শুরু করেছেন এই আখের চাষ।
সরেজমিনে খাঁপাড়া এলাকায় গিয়ে সফল আখচাষি শাহিনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আখ চাষে বছরে একবার ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ১২ হাজার পিছ ফিলিপাইন আখের চাষ করা যায়। প্রতি বিঘায় বীজ, সার, শ্রমিক ও আনুষাঙ্গিক খরচসহ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতি পিস আখ পাইকারী ৩৫ থেকে ৪৫ বা ৫০ টাকায় বিক্রয় করা হয়। আর খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ বা ৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারেন কৃষক। ফলে খরচ বাত দিয়ে বছরে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা লাভ হতে পারে।
এ বিষয়ে সফল ফিলিপাইন আখচাষি আবু শাহিন বলেন, আগে বৃটিশ টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতাম। চাকরির কারণে ২০১৭ সালে একবার ঝিনাইদহ জেলায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে এক স্থানে কালো আখ দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আগ্রহ হলো স্বাদ নেওয়ার। খাওয়ার পর খুব ভাল লেগেছিল এবং শখের চাষে মন বসেছিল। পরে সেখান থেকে মাত্র তিন হাজার টাকার বীজ কিনে পাঁচ শতাংশ জমিতে রোপন করেছিলাম। চাষে খরচ কম, কষ্ট কম ও অধিক লাভজনক। তাই ২০১৮ সালে তিন বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে আখের চাষ আমার।
জানা যায়, শাহিনকে দেখে আখ চাষে মুগ্ধ হয়ে ওই এলাকায় আরো ২০ জন ফিলিপাইন আখ চাষের শুরু করেছেন। তার মধ্যে সফল চাষি নাজিম উদ্দিন একজন। এবিষয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ছেলেটার দেখাদেখি আমিও ছয় বিঘা জমিতে আখের চাষ করছি। এতে খরচ কম, অধিক লাভ। তবে ডোবা স্থানে এই আখের চাষ করা যায় না।
খাঁপাড়া এলাকার আরেক আখচাষি সাইদুল খাঁ বলেন, গত বছর থেকে আমিও দুইবিঘা জমিতে আখ চাষ করছি। প্রতিটি আখ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়। আর ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় পাইকারী বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতা জমিতে এসে আখ নিয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, কয়েক বছর আগে উপজেলায় সৌখিনভাবে গান্ডারি চাষ শুরু হয়েছিল। অধিক লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। দিনে দিনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিস নিয়মিত পরামর্শ প্রদান ও খোঁজ-খবর রাখছে বলেও কৃষি কর্মকর্তা জানান।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই এলাকায় আখের চাষ ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকেরা। চর এলাকায় সামান্য আখ চাষ হলেও তারা গুড় উৎপাদন করে থাকে, যদিও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে গুড় উৎপাদনের ক্ষেত্রে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ