Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রয়োজনীয় নৌযান থাকলেও রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নৌপথে নিরাপদ যাত্রী পরিবহন নিয়মিত চলছে না

সরকারী নৌযান বন্ধের সুযোগে বেসরকারী নৌযানের কাছে জিম্মি যাত্রীরা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:০৮ পিএম

রাজধানীর সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে রাষ্ট্্রীয় নিরাপদ যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা এখনো নির্বিঘœ ও নিয়মিত করার কোন উদ্যোগ নেই। সরকারী নৌযান বন্ধ থাকার সুবাদেই বেসরকারী নৌযানের সাথে কোন প্রতিযোগীতা না থাকায় নানা অজুহাতে অতিরিক্ত যাত্রী ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এরুটের জন্য রাষ্ট্্রীয় নৌÑবানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআডব্লিউটিসি’র কাছে ৪টি প্যাডেল জাহাজ ছাড়াও ৩টি স্ক্রুÑহুইল জাহাজের বহর রয়েছে। কিন্তু নানা খোড়া অজুহাতে রাজধানী ঢাকার সাথে চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত নিয়মিত ‘রকেট স্টিমার সার্ভিস’টি এখন চলছে সপ্তাহে মাত্র ১দিন। অথচ মাত্র ৩টি নৌযানের মাধ্যমেই সার্ভিসটি নিয়মিত পরিচালন সম্ভব।

তবে এ রুটের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ও অরামদায়ক নৌযান ‘পিএস অস্ট্রিচ’ কোন ধরনের দরপত্র ছাড়াই ব্যাক্তি মালিকানায় ইজারা দেয়ার পরে গত ৩ বছর তা বন্ধ। রেলওয়ে থেকে ‘স্ক্র্যাপ ভ্যালু’তে সংগ্রহ করা স্ক্রু-হুইল নৌযান ‘এমভি সোনারগাঁও’এর পেছনে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যায়ের পরেও এক ব্যক্তি ইজারা নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের কাছে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দিয়েছে। অপর ৩টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ’ দু বছরাধীককাল বন্ধ থাকার পরে গত এপ্রিলে ভারি মেরামতে সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়ার পরে ৮ মাসে মেরামত সম্পন্ন হবার পরে বানিজ্যিক পরিচালনের অপেক্ষায় ঢাকা ঘাটে বসে আছে।
সংস্থার অপর দুটি প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ও একইভাবে ঢাকা ঘাটে বসে আছে। সংস্থার চারটি বাস্পীয় প্যাডেল হুইল নৌযানই নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ পরিপূর্ণ আধুনিকায়নের পরে ১৯৯৬ সালে মেকানিক্যাল গীয়ার সহ খোল থেকে উপরী কাঠামোর পূণর্বাশণ করা হয়। এরপর থেকে গত ২৫ বছরে এসব নৌযানের কোন মেজর ওভারহলিং হয়নি। অথচ অত্যন্ত ব্যায় সাশ্রয়ী ও বানিজ্য উপযোগী এসব নৌযানই যাত্রী বান্ধব বলেও বিবেচিত। কিন্তু এসব নৌযানের পরিবর্তে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় আড়াইগুন জ¦ালানী ব্যায়ের ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ সংগ্রহের পরে নৌযান দুটি পরিচালনের মাধ্যেমে গত কয়েক বছরে সংস্থাটির তহবিল থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে।
উপরন্তু নতুন এসব নৌযানে কারিগড়ি ত্রুটিও নিয়মিত ঘটনা। সর্বশেষ গত মাসেই ‘এমভি বাঙালী’র মূল ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত প্রপেলার স্যাফট ভেঙে গিয়ে নৌযানটি বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে সংস্থার নিজস্ব ডকইয়ার্ড থেকে পুরনো স্যাফট মেশিনিং-এর মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। নৌযাটিকে মুন্সিগঞ্জের একটি ব্যক্তি মালিকানা ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে স্যাফট সংযোজনের জন্য। আগামী ১০ জানুয়ারীর মধ্যে নৌযানটি বানিজ্যিক পরিচালনের জন্য প্রস্তুত হবার কথা রয়েছে। কিন্তু ইয়নমার ইঞ্জিন সম্বলিত দুটি স্ক্রÑহুইল নৌযানেই প্রতি ঘন্টায় জ¦ালানী ব্যায় প্রায় ১৮০ লিটার। ফলে এসব নৌযান কখনো ‘পরিচালন মুনফা’য়ও চালান সম্ভব হয়নি। অথচ ‘এবিসি’ ইঞ্জিন সম্বলিত প্যাডেল জাহাজগুলো চলছিল ঘন্টায় মাত্র ৮০Ñ৮৫ লিটার জ¦ালানীতে।
কিন্তু এরপরেও নানা খোড়া যুক্তিতে এসব ব্যায়সাশ্রয়ী ও যাত্রী বান্ধব প্যৗাডেল জাহাজগুলো বসিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি পিএস মাহসুদ’এর মাঝারী মেরামত ও আংশিক পূণর্বাশন করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির দায়িত্বশীল একাধীক কারিগড়ি কর্মকর্তার মতে, ৪টি প্যাডেল জাহাজ পরিপূর্ণ পূণর্বাশন সহ এর মূল ইঞ্জিনের ভারি মেরামত সম্পন্ন হলে তা আরো অন্তত ২৫ বছর বানিজ্যিক লাভজনকভাবে পরিচালন সম্ভব।
তবে ১৯৪৮ থেকে ’৫৪ সালের মধ্যে নির্মিত এসব প্যাডেল জাহাজ চলাচলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সার্ভে সনদ দিতে চাচ্ছেনা বলে জানিয়েছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল। তবে অভিযোগ রয়েছে, এ ৪টি প্যাডেল জাহাজই ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ পরিপূর্ণ পূণর্বাশন ও আধুনিকায়ন ছাড়াও ১৯৯৫-৯৬ সালে গীয়ার পরিবর্তন সহ দ্বিতীয়বার পূণর্বাশন করা হয়। এসময়ে বাস্পীয় প্যাডেল হুইলের এসব নৌযানগুলোর খোল ও তলা থেকে উপরী কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা হয়। ফলে ‘৮০ বছরের পুরনোর তকমা’ কতটা গ্রহনযোগ্য সে বিষয়টি বিবেচনার দাবী রয়েছে ওয়াকিবাহল মহল থেকে। এসব বাস্তবতা বিবেচবনায় নিয়ে ৪টি প্যাডেল জাহাজ পূণর্বাশনের মাধ্যমে রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দরের নিরাপদ যাত্রী পরিবহন নির্বিঘœ করারও দাবী রয়েছে যাত্রী সাধারনের পক্ষ থেকে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক-বানিজ্য আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি প্যাডেল জাহাজগুলোকে ব্যায় সাশ্রয়ী এবং যাত্রী বান্ধব বলে স্বীকার করেন। পূণর্বাশনের মাধ্যমে তা পারিচালন-এর বিষয়ে ব্যাক্তিগতভাবে একমতও পোষন করেন তিনি। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং মোঃ গফুর সরকারও প্যাডেল জাহাজগুলো পূণর্বাশনের মাধ্যমে পরিচালনের বিষয়ে দ্বিমত পোষন করেন নি। তিনি সম্ভব হলে এ বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন একাধীকবার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ