Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শোরে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৬ দফা দাবি

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৩৩ পিএম

যশোরের দুঃখ ভবদহ! যশোরের ভবদহ অঞ্চলকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষায় ৬ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। রবিবার (২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: রফিকুল হাসান। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামি রবিবার (৯ জানুয়ারি ২০২২) বেলা ১১টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য যশোর ডিসি অফিস চত্বরের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।

৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’ অবিবেচনাপ্রসূত সেচ প্রকল্প বাতিল করতে হবে। ক্রাস প্রোগ্রামে মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়া টিআরএম চালু করতে হবে। ভবদহ স্লুইচ গেটের ভাটিতে পাইলট চ্যানেল করার জন্য ৫-৬টি স্কেভেটর লাগাতে হবে এবং ২১, ৯ ও ৮ ভেন্টের গেটসমূহ উঠানামার ব্যবস্থা করতে হবে। জনপদের ফসল, বাড়িঘরসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কৃষি ঋণ মওকুফ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজে প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক জনসমক্ষে টাঙিয়ে দিতে হবে। কাজের স্বচ্ছতা নিরূপণে আন্দোলনকারী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে। সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান, নদী হত্যা, জনপদের অবর্নীয় দুঃখ-দুর্দশা, ফসল, বসতবাড়ি ও যানমালের ক্ষয়ক্ষতির সাথে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের আন্দোলনে আমরা দাবি করে আসছিলাম- আমডাঙ্গা খাল প্রসস্থ করে খনন, বিল কপালিয়ায় টিআরএম এবং পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম চালু করে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও জলাবদ্ধতার অবসান এবং উজানে পদ্ম-মাথাভাঙ্গা-ভৈরবের নদী সংযোগের সাথে মুক্তেশ্বরী নদীকে যুক্ত করে প্রবাহমান করা। যা বাস্তবতঃ সম্ভব হলেও ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মাধ্যমে জনগণের সাথে অব্যাহত প্রতারণা করা হচ্ছে। আন্দোলনের চাপে সম্প্রতি একনেকে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের বরাদ্দ হয়েছে বলে আমরা অবহিত হয়েছি। যা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু সে কাজ দ্রুত ও লুটপাট বর্জিত সচ্ছভাবে হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে ! উল্লেখ্য যে, এ পথে পানি যেতে পারবে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। তাতে উপরের পানির চাপে একাংশ নামবে এবং কিছুটা হলেও স্বস্তির সৃষ্টি হবে। তবে চুড়ান্তভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। অপরদিকে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ না করায় ভবদহ স্লুইচ গেট থেকে প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী মেরে ফেলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের নদী বাঁচানোর গৃহিত নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং জনগণকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার হাতে জিম্মি করে অর্থ লোপাটের স্থায়ী পরিকল্পনা ফেঁদেছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সহজ ও পরীক্ষিত সমাধান টিআরএম না করার জন্য জেদ ধরেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করছেন এবং জনমতকে উপেক্ষা করে পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প দিয়ে অর্থ অপচয় করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বলেছে যে, এবার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেওয়ার ফলে এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন এবং এবার এলাকা জলাবদ্ধ হয়নি, মানুষের বাড়িঘর-রাস্তা এবং কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেনি।
‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনৈতিক জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে ২১ ভেন্ট থেকে বারোয়াড়ির মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। তাদের ভূমিকা সরকারের বিরুদ্ধে উষ্কানিমূলক। ফলে অনভিপ্রেত যে পরিস্থিতির উদ্ভব হতে যাচ্ছে তার সমস্ত দায় তাদেরকেই নিতে হবে। এই গণবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের দায় সরকারের উপরেও বর্তাচ্ছে। এই ঘটনাসমূহ সরকারকে গণবিচ্ছিন্ন করছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের চক্রান্তে পুনর্বার ২০১৭ সালে জাতীয় কর্মশালায় গৃহিত টিআরএম প্রকল্প বানচালের ফলে এই জনপদের জনগণের বারবার হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল, বসতবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। ২০২১ সালেই পানিতে ডুবে মারা গেছেন ১ শিশু সহ ৪ জন। এদিকে, নদী মেরে ফেলার ফলে কেশবপুরের ২৭ বিলও জলাবদ্ধ হয়ে গেছে।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, যুগ্ম আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ গাজী, শিবপদ বিশ^াস, অনিল বিশ্বাস, কার্তিক বকশী, অমিতাভ মল্লিক, রবি সরকার প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ