Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খরস্রোতা মহারশী এখন মরা খাল!

বোরো চাষ ব্যাহত : বেদখলে নদী পাড়ের শত শত একর জমি

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা মহারশী নদী এখন মরা খাল। বেদখল হয়ে গেছে নদীর দু’পাড়ের শত শত একর জমি। নদীটি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। শেরপুরের গারো পাহাড়ি নদী-নালা, খাল-বিলকে ইতোপূর্বে বলা হতো মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। মাছের চাহিদার জোগান হতো মহারশী নদীসহ অপরাপর নদী-নালা, খাল-বিল থেকেই। কিন্তু নদী-নালা, খাল-বিলগুলো ভরাট, জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, অপরিকল্পিতভাবে মাছ আহরণ, রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহারে দেশিয় প্রজাতির মাছ এখন মিলছেই না। অবশ্য মাছের বংশবিস্তার বিপর্যয়ের নানা কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তণে বৃষ্টিপাত না থাকা, নাব্যতা হ্রাসে নদীটি বর্তমানে মরা খালে পারণত হয়েছে। মাত্র দেড় দশক আগেও ভাটি এলাকার অনেকে পালতোলা নৌকা নদীতেই ঝিনাইগাতীতে হাট-বাজার করা, বৌ-ঝিরা নাউর করতো। শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল জানান, মে-জুনে প্রাকৃতিকভাবে মাছ ডিম ছাড়তো নদী-নালা, খাল-বিলে। ডিম ফুটতো জুলাই-আগস্টে। পোনা মাছ এ সময়ে বড় হতো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে জুন থেকে জুলায়েতো বৃষ্টিই হয় না। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মাছের ডিম শুকিয়ে যায় মাছের পেটেই। জুলায়ের বৃষ্টিতে প্রাকৃতিক মাছ কৈ, মাগুর, সিং, টেংড়া, পুটি, দারকিনা, মলা, চেলা, ঢেলা, চিংড়ি মাছ ছাড়াও বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন চলছে দেশিয় মাছের আকাল। আদিকাল থেকে পাহাড়ি অঞ্চলের মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে যেত। প্রবীণরা জানান, মাত্র ১০/১২ বছর আগেও নদীতে ১০/১৫ কেজি ওজনের শোল, গজার, বোয়াল, আইর, চিতল পাওয়া যেত। মিলতো প্রচুর ছোট মাছ। অপর দিকে পানি না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে নদীর দুইপাড়ের চাষাবাদ। অনাবাদি হয়ে পড়ার আশংকা ফসলি জমি।
এলাকাবাসী জানান, মেঘালয় থেকে নেমে আসা মহারশী খরস্রোতা নদী। প্রতিবছর বর্ষায় ঢলের বালুতে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। তলদেশের উচ্চতা বাড়ায় নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা শূন্যের কোটায়। গত দেড় দশক আগেও নদীর গভীরতা ছিল। কৃষকরা জানান, নদীর দু’পাড়ের কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন নদীর পানি সেচের ওপর নির্ভরশীল। দেড়যুগ ধরে বালু উত্তোলনে নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে বোরো চাষাবাদ। নাব্যতা বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই মাথা ব্যথা। আবাদ করা যেত, সেচের মাধ্যমে বালুসমেতো পানি তোলা না হলে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় নদীটি খনন প্রয়োজন। নচেৎ ভাটি এলাকায় পানি সংকটে বোরো চাষ ব্যাহত হবে। অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ব্যবস্থা করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখবো।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নদী খননের লিস্ট পাঠাবো এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ