পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে তাকে এ নিয়োগ দেন। বিকেলে নিয়োগ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে আইনমন্ত্রণালয়। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিয়াছেন।
উক্ত নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।’ পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রজ্ঞাপনটি নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর হাতে তুলে দেন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. আলী আকবর উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আজ (শুক্রবার) বঙ্গভবনে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণের কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর আগে ২০০৭ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে সিনিয়রিটির মধ্যে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দ্বিতীয়। আপিল বিভাগে প্রথম অবস্থানে ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায়। তার বাবা মরহুম আবদুল গোফুর মোল্লা ও মা মরহুমা নূরজাহান বেগম। ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে আইএসসি সম্পন্ন করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। পরে ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে ১৯৮১ সালে ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিককীও আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
প্রসঙ্গত: দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বহুল আলোচিত পদত্যাগের পর ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে গতকাল অবসরে গেলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ায় অভিনন্দনে ভাসছেন তিনি। বিশেষ করে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা তার এ নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর ছবি ট্যাগ করছেন। পোস্ট দিচ্ছেন। বছরের শেষ দিনে বিচারাঙ্গনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসর নেয়ায় আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা নেমে আসে ৪ এ। তাদের মধ্যে বয়সে সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। এ সিনিয়রিটি ডিঙিয়ে দেয়া হয় এ নিয়োগ। বিচারপতি কিংবা প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বাংলাদেশ সৃষ্টির ৫০ বছরে নির্দিষ্ট বিধি-বিধান প্রণীত হয়নি। তাই আপিল বিভাগে কর্মরত সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একটি রেওয়াজ বা প্রথা রয়েছে।
বিচারাঙ্গনের সিনিয়র আইনজীবীরা সবসময় রেওয়াজ অনুযায়ী আপিল বিভাগের বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে মত দেন। বাস্তবতা হচ্ছে, সিনিয়রিটি ভেঙে অর্থাৎ সুপারসিডের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞাকে সুপারসিড করে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ কারণে ওয়াহহাব মিঞা পদত্যাগ করেন। এর আগে ২০১১ সালে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে সুপারসিড করে নিয়োগ দেয়া হয় বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে। এতে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম পদত্যাগ করেন। ২০০৯ সালে দুইজন সিনিয়র বিচারপতিকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি করা হয় বিচারপতি এমএম রূহুল আমীনকে।
প্রথা ভাঙার প্রথায় এবারও নিয়োগ দেয়া হয় আপিল বিভাগের দ্বিতীয় সিনিয়র বিচারপতিকে। বিশ্লেষকদের মতে, নানা হিসাব-নিকাশ কাজ করেছে ২৩তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে। মুখ্য হিসাবটি হচ্ছে, রুটিন ঠিক থাকলে আগামী ২৩ সালে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই সময় প্রধান বিচারপতির আসনে থাকবেন ২৩তম প্রধান বিচারপতি। নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে সৃষ্ট রাজনৈতিক নানা ইস্যু আসবে সামনে। সেগুলোর অনেক কিছুর ফয়সালার ভার পড়বে বিচার বিভাগের কাঁধে। সে সময় প্রধান বিচারপতি কি ভ‚মিকা নেবেন- সেই চিন্তা মাথায় রেখে দেয়া হয়েছে এ নিয়োগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।