পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা প্রদানের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ৬ জেলায় সমাবেশ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক ক্লাব মাঠে, লক্ষীপুরে জেলা আউটার স্টেডিয়াম মাঠে, কিশোরগঞ্জে আজিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের মাঠে, খাগড়াছড়ি আইটার স্টেডিয়ামে, সিরাজগঞ্জে ইসলামিয়া কলেজ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই ধার্য্য হবে সরকার পতনের দিন। লক্ষীপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। খাগড়াছড়িতে শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, অন্যথায় সরকার পতনের এক দফা দাবীতে আন্দোলন শুরু হবে। আন্দোলন একবার শুরু হলে সারা দেশ দাউ দাউ কওে আগুন জ্বলবে যা ঠেকানোর ক্ষমতা এই সরকারের নেই। এদিকে সিরাজগঞ্জে সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দলীয় প্রধানের মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবীতে ৬ জেলার প্রতিটি সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বেগম জিয়া কারাগারে বন্দী থেকেছেন। পাক সেনারা তাকে তার সন্তান সহ কারাগারে বন্ধি রেখেছিলো। তাই তিনি শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নন বরং প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। গতকাল বৃহস্পতিবার পাবলিক ক্লাব মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, বেগম জিয়া মুক্তিযোদ্ধা, এ কথা শুনলে আওয়ামীলীগ এর বড় বড় নেতা, চমচা সহ স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর গায়ে ফোসা পড়ে। বেগম জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি।
মির্জা ফখরুল সরকার পতন এবং আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই আমরা অবৈধ, অত্যাচারী এবং ভোটচোর এ সরকারের পতনের দিন ধার্য্য করবো। বৃহত্তর আন্দেলনের ডাক দিয়ে আমরা এ সরকারের পতন ঘটাবো এবং বেগম জিয়ার সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানের হাত ধরেই গণতন্ত্রকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করবো ।
তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তার সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ‘সারাদেশের মানুষের দাবি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর। কিন্তু এসব দাবি সরকারের কানে যায় না। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় সরকারকে এর দায় নিতে হবে। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দীন খোকন, আসাদুল হাবিব দুলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সরোয়ার। এর আগে সকাল থেকে জেলা থেকে খন্ডখন্ড মিছিল সহকারে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। দুপুরের পর পাবলিক ক্লাব মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
ঢাকা জেলার উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগের পালানোরও জায়গা নেই এবং দলটির সব নেতার অবস্থা ডা. মুরাদ হাসানের মতো হবে। তিনি বলেন, ক’দিন আগেই মুরাদ নামের একজন কানাডায় গিয়েছিলেন। বিভিন্ন বিমানবন্দর ঘুরে ফেরত এসেছেন। কেউ জায়গা দেননি। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব নেতার এ অবস্থা হবে। কোথাও জায়গা হবে না। কেউ ঠাঁই দেবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে বলবো, যখন বিদেশেও জায়গা পাবেন না তখন পালানোর চেষ্টা করার তো দরকার নেই। দেশেই যদি থাকতে চান তাহলে খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চান। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান। দেশের মানুষের অধিকার ফেরত দেন। জনগণের সঙ্গে একটু সমঝোতা করেন। গয়েশ্বর বলেন, বিএনপি কখনো পরাজিত হয়নি। কখনো পরাজিত হবে না। হাসিনার পতন অবধারিত। শুধু সময়ের ব্যাপার। গয়েশ্বর বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। এমনকি আওয়ামী লীগের শতকরা ৯০ ভাগ লোক শেখ হাসিনার এই বাড়াবাড়ি পছন্দ করছে না। কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘¯েøা পয়জনিং’ করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা কারাগারে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের কানে কানে বলেন, আমরা যত ভালো খাবারই দিই, সেটা খাবেন না। জেলখানায় ¯েøা পয়জনিংয়ের বিষয়টা ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর হক মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আশফাক হোসেন, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।
ল²ীপুর জেলা সংবাদদাতা জানায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ কিছু সরকারী কর্মকর্তা, দুর্নীতি বাজদের নিয়ে দেশ দখল করে রেখেছে। তারাই দেশ চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে, তারা আবার ভোট চুরির পরিকল্পনা করতেছে। তিনি বলেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এ সরকারের কাছে চাইবো না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করবো। তারেক জিয়া দেশে ফিরে আসলে কারো পালানোর সুযোগ থাকবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে এ সরকারের পতন ঘটাবে। ল²ীপুরের মানুষ অন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে জীবন দিতেও রাজি আছে। আমিও জীবন দিতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার ল²ীপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে জেলা আউটার স্টেডিয়াম মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে এ মন্তব্য করেন।
জেলা বিএনপির আহŸায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূইয়া, মাহবুবের রহমান শামীম, জালাল আহমেদ মজুমদার, হারুন অর রশিদ ভিপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান প্রমুখ। সভায় জেলা বিএনপি, ছাত্রদল সহ দলীয় অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন সমাবেশে।
কিশোরগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না কিন্ত খুনী আসামীদেরকে জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, খুন ও গুমের ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ সরকরকে আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটাতে হবে। বর্তমান সরকার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতি করেছে। যেকারণে এ সরকারের এমপিদেরকে নিশি রাতের এমপি বলা হয়। গতকাল কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আজিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, ফজলুর রহমান, সৈয়দ এমরান সালেহে প্রিন্স, ওয়ারেছ আলী মামুন, যুবদলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাবেক এমপি মেজর অব আক্তারুজ্জামান রঞ্জন, জেলা বিএনপির রেজাউল করিম চুন্নু, জাহাঙ্গীর মোল্লা, মাজহারুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, হাজী ইসরাইল মিয়া, নাজমুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম আশফাক প্রমুখ। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতা কর্মী ছাড়াও ব্যাপক লোকজন উপস্থিতিতে মাঠটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
খাগড়াছড়ি থেকে মো. ইব্রাহিম শেখ জানান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামন দুদু সমাবেশ থেকে বলেছেন, নতুন বছর আগামী ২০২২ সাল হবে বিএনপির সরকার গঠনের বছর। গতকাল খাগড়াছড়ি আইটার স্টেডিয়ামে বিএনপির গণ সমাবেশে তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জীবনে কোন নির্বাচনে পরাজিত হননি। ৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধে কারাগারে ছিলেন। এখন নিশি রাতের ভোটের সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাগারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইঁয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা- জয়নাল আবেদিন, জালাল আহম্মদ মজুমদার, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল, জেলা বিএনপির এম.এন আবছার, প্রবিণ চন্দ্র চাকমা, যুবদলের সবুজ ভূইঁয়া, ইব্রাহীম খলিল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নজরুল ইসলাম, ছাত্রদলের শাহেদ হোসেন সুমন প্রমুখ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে জমায়েত হতে থাকেন। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই পুরো আউটার স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে স্বনির্ভর বাজার পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানায়, সিরাজগঞ্জে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত প্রায় ৭০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল সমাবেশে আসা মিছিলকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে জেলা শহরের কলেজ রোড, ইলিয়ট ব্রিজ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের পরও জেলা শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে বিএনপির সমাবেশে হয়েছে। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।