Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হুমকিতে বিশ্বনাথ-লামাকাজি সড়ক

সুরমার ভাঙন

আব্দুস সালাম, বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

সিলেটের ঐতিহাসিক নদীর নাম সুরমা। হযরত শাহ জালাল (রহ.) জায়নামাজ বিছিয়ে সুরমা নদী পার হয়েছিলেন। নদীটি সিলেট থেকে বিশ্বনাথের লামাকাজি হয়ে বয়ে গেছে সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। এই সুরমা নদীর প্রায় ৪শ’ মিটার দূরে ছিল বিশ্বনাথ-লামাকাজি সড়ক। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে ঢাকা, সুনামগঞ্জ, শিল্পনগরী ছাতকসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যানচলাচল করে থাকে। এক দিকে নদী ভাঙন, আর অপর দিকে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়িরা অবৈধভাবে নদীর পারে বড় বড় বালুবাহী নৌকা, স্টিমার উঠানামা এবং স্টক বালুর নিচ থেকে পানি গড়িয়ে নদীতে পড়ার কারণে নদী ভাঙন ব্যাপকহারে বাড়ছে। এতে করে আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর মাত্র ১০০ ফুট নদীর তীর ভাঙন হলেই বিশ্বনাথ লামাকাজি প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে বর্ষাকালে এই অঞ্চলের শতাধিক গ্রাম পানির শ্রæতে ধবংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ভাঙন নদীর থেকে পশ্চিম দিকে গিয়ে মাহতাবপুর গ্রামের পশ্চিমে গিয়ে সুরমা নদীটি উত্তর দিকে মুড় দিয়েছে। সেই মুড়ে নদীর তীর কেটে গভীর করে বড় ধরণের ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে নদীর তীর কেটে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করছেন। ইটভাটার আয়ের অংশ যায় নদী রক্ষ কমিটির পকেটে। স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন।
এভাবেই উপজেলার দশগ্রাম, মাহতাবপুর, রাজাপুর, পরগনা বাজার, পরগনা বাজার পুরাতন জামে মসজিদ, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সুরমা নদী ভাঙনের ফলে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
লামাকাজি ইউপি চেয়ারম্যান করিব হোসেন ধলা মিয়া বলেন, জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ বালু ও মাটি ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে বিশ্বনাথ সড়কসহ এই এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় সাংগিরাই গ্রামের রফিক আলী, কেশবপুর গ্রামের মোসাহিদ আলী, সাংগিরাই বিদ্যাপতি গ্রামের বাবুল মিয়া ও ডা. শাহনুর হোসাইন জানান, নদী পারে তাদের কয়েক শতাধিক জমি ছিল। নদী ভাঙনে সব বিলীন হয়ে গেছে। আর মাত্র কয়েক শতক জায়গা রয়েছে। আগামী ২ বছরে মধ্যে তাও বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালে সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় সুরমা নদীর উভয় তীরে ভাঙন রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১শ’ ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬শ’ ৫০মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সুরমা নদীতে সাড়ে ১৮কিলোমিটার চর খনন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১ হাজার ৫শ’ ১৭টি বসতবাড়ি, ৩৪টি সড়ক, তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাদরাসা ও এতিমখানা, সাতটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া চরখননের মাধ্যমে স্থানীয় নৌযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এসব কাজ চলমান আছে এমনটাই জানালের সিলেট পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ।
এদিকে ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাহতাবপুরে নদী ভাঙণ প্রতিরোধে সুরমা নদীতে ডাম্পিং কাজের উদ্ভোধন করেছেন এমপি মোকাব্বির খান। সুরমা নদী ছিল সিলেট অঞ্চলের সানুষের আয় রোজগারের ও উন্নয়নের চাবিকাটি। বেশি দূরের কথা নয়, ২০০০ সালের দিকে এই নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ চলাচল করত। শিল্পনগরী ছাতকের কলকারখানার ভারি মালামাল বহন করা হতো এই নদী দিয়ে। কিন্তু এই সুরমার এখন জীবন থাকলেরও যৌবন নেই। দখলবাজদের কারনে নদীর তীরে ময়লা আবর্জনা মল-মুত্রের পাহাড় জমে আছে। আর নদীটির বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠায় যৌবন হারিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে সুরমা নদী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ