Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরিশাল অঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন ফসল কাটার ধুম

প্রধান খাদ্য ফসল আমন ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষি যোদ্ধারা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:১০ পিএম

অনেক প্রতিকুলতা আর নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’এ ভর করে অগ্রহায়নের অকাল বর্ষনের ক্ষতির পরেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ যুড়ে এখন আমন কাটার ধুম চলছে। পৌষের কুয়াশা ঘেরা সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ফসলের মাঠে মাঠে ধান কাটার এ দৃশ্য যেকোন মানুষেরই চোখ যুড়ায়। তবে এবার বৃষ্টিতে ধানের গুনগত মান কিছুটা খারাপ হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলে ধানের দাম নিয়ে কৃষকের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। মঙ্গলবারও বরিশালে প্রতিমন আমন ধান বিক্রী হয়েছে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ গত বছর এ অঞ্চলে ১১শ টাকা মন দরে আমন বিক্রী করেছেন কৃষকগন। এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার এ খাদ্য ফসলের ক্ষতি কৃষি অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।

তবে প্রকৃতি নির্ভর বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় এবারো নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’এর প্রাভবে খরিপ-২ মৌসুমে ১১টি জেলায় আবাদকৃত ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের ফসল অকাল বর্ষনের পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনষ্টের পরিমান ছিল প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর । এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ঘরে তোলার পরে বোরো সহ বিভিন্ন ধরনের রবি আবাদেরও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তবে অগ্রহায়নের বৃষ্টির পানি এখনো অনেক নিচু জমিতে আটকে আছে।
সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ টন আমন চাল উৎপাদন লক্ষের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ২০ লাখ টন চাল পাবার কথা রয়েছে। তবে দেশের অন্য এলাকাগুলোর মত এ অঞ্চলের সিংহভাগ জমি উচ্চ ফলনশীল-উফশী ও হাইব্রিড ধান আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে উৎপাদন ২৫ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব হত বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। উপরন্তু বরিশাল অঞ্চলে আমন-এর আবাদ ও উৎপাদন এখনো প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর।
গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এবং ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দূর্যোগ নেমে আসে। ফলে সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ব বরিশাল অঞ্চলে আমনের উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম।
গত বছর প্রকৃতিক দূর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয় বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই উৎপাদন ছিল প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টন।
তবে সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চলে এখনো উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদে অনেক পিছিয়ে। আমাদের ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট-‘ব্রি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ প্রযুক্তি এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে হস্তান্তরে ডিএই’র মাঠ কর্মীদের তেমন কোন ভ’মিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এঅঞ্চলে খরিপ-২ মৌসুমে যে ৮.৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে, তার মধ্যে সনাতন জাতের ধানই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরে। এসব ধানের উৎপাদন হেক্টর প্রতি মাত্র ১.৮০ টনের মত।
অথচ হাইব্রীড জাতের আমনের অবাদ হয়েছে মাত্র ৫শ হেক্টরের মত। সারা দেশে অতি উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ধানের আবাদ হয় প্রায় আড়াই লাখ হেক্টরে। কিন্তু হাইব্রীড জাতের ধানের উৎপাদন দেশের অন্য এলাকার তুলনায় এ অঞ্চলে হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন বেশী। এমনকি উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদেও পিছিয়ে বরিশাল অঞ্চল।
তার পরেও এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে পৌষের সকাল থেকে ধান কাটার ধুম চলছে। ডিএই’র মতে এ অঞ্চলে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ আমন কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। একের ার এক প্রকৃতিক দূর্যোগ আর উৎপাাদিত ধানের দাম কম পাবার পারেও দমে থাকছে না বরিশাল অঞ্চলেল কৃষি ওঙেযাদ্ধাগন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এককালের ‘বাংলার শষ্য ভান্ডার’ খ্যাত বরিশাল অঞ্চল এখনো সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ