Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরী হয়নি কাক্সিক্ষত শিল্প প্রতিষ্ঠান

২৩ বছর পরেও গোচারণ ভ‚মি

মো. হাবিবুর রহমান হাবীব, শরীয়তপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর শরীয়তপুর শিল্পনগরীতে ২৩ বছরেও কাক্সিক্ষত কোন উন্নয়ন হয়নি। কয়েকটি রুটি-বিস্কুট প্রস্তুতকারী বেকারি ছাড়া শিল্পকারখানাও গড়ে ওঠেনি এই বিসিকে। দৃশ্যমান যে কারখানাগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে তার বেশিরভাগই তালাবদ্ধ। নেই কোন কার্যক্রম। ময়লা আবর্জনাযুক্ত এই শিল্পনগরী গো-চারণ ভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি উদ্যোগ নিয়ে প্রায় ১৪ একর জমির উপর এই শিল্পনগরীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জুলাই তিনিই কয়েকটি বিস্কুট ও রুটি তৈরির বেকারি নিয়ে শিল্পনগরীর উদ্বোধন করেন। প্রয়োজনীয় সুযোগের অভাবে আজও সেই শিল্পনগরী বেকারিভিত্তিক রয়ে গেছে। ১০০ প্লটের এই শিল্পনগরীতে ৫৯টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টিতে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সবগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়নি। যে সকল প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন শুরু হয়েছিল তার মধ্যেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নানা প্রতিক‚লতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
শিল্পনগরীতে অতিরিক্ত বেকারি হওয়ায় চাহিদা কমে গিয়ে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে অনেকগুণ। পাশাপাশি ঢাকার অনেক বেকারি মালিক শরীয়তপুরে তাদের উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে বলে বিসিক বেকারি মালিকদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমে যায়। প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হয় বলে এখানকার শিল্প মালিকগণ তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। শিল্পনগরীর শর্ত পূরণ করতে না পারায় অনেকের প্লটও মালিকদের হাত ছাড়া হয়ে গেছে। বিসিকের বর্তমান নাজুক অবস্থায় সেখানে কোন মালিক বিনিয়োগ করতে চায় না। এখনও যে সকল ইউনিটগুলো খালি পড়ে রয়েছে সেখানে খেলার মাঠ, ময়লার ভাগাড় ও গো-চারণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীর ঢালী মিনার‌্যাল ওয়াটার কোম্পানির মালিক এসকান্দার আলী বলেন, লোকসানের চাপে আমাদের কারখানাটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সঠিক বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় বিসিক কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে আমরা লোকসান দিতে দিতে অবশেষে কারখানাটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। সরকারি প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা না পেলে আমরা আর উৎপাদনে যেতে পারবো না।
বেষ্ট ওয়ান বেকারির মালিক বলরাম ঘোষ বলেন, শিল্পনগরীর অব্যবস্থাপনা, আর্থিক সঙ্কট, সঠিক বিপণন না থাকায় দীর্ঘ ৫-৬ বছর যাবৎ লোকসান দিতে দিতে অবশেষে আমাদের কারখানাটি করোনাকালীন সময়ে লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সরকারের কোন ধরণের সহায়তা না পেলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না।
বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি শরীফ আজমল হোসেন জানান, বিসিক শিল্পনগরী অরক্ষিত। জনসাধারণ অবাধে প্রবেশ করে। বিসিক এলাকায় বিচরণ করে গরু-ছাগল। পয়নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই কারখানায় পানি ঢুকে যায়। অহরহ চুরির ঘটনা ঘটে। বিসিক কর ও পৌরকর পরিশোধ করেও কাক্সিক্ষত কোন সেবা পাওয়া যায় না। সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা অপসারণ করে না। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। তাই এই শিল্প মালিকরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না।
শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীর উপ ব্যবস্থাপক মো. মনির হোসেন জানান, শিল্প মালিকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি যাতে করে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হন। তাদের প্রতিষ্ঠান উৎপাদনমুখী করতেও তাগিদ দিচ্ছি। লোকসানের ভয়ে শিল্প মালিকরা বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চায় না। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার শুরু হলে এই শিল্পনগরীর গুরুত্ব অনেক বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ